সন্তোষ কুমার মণ্ডল,আসানসোলঃ- পুরোপুরি সরকারি স্বাস্থ্য পরিকাঠামোয় ক্যান্সার চিকিৎসায় অনন্য নজির গড়ল আসানসোল জেলা হাসপাতাল। কলকাতার বাইরে কোন জেলায় এই প্রথম জেলা হাসপাতালে এক ক্যান্সার রোগীর ” স্তন পুনর্গঠন বা ব্রেস্ট ইমপ্ল্যান্ট” অস্ত্রোপচার হলো। মঙ্গলবার জেলা হাসপাতালে এই সফল অস্ত্রোপচার করা হয়।
গোটা অস্ত্রোপচারটি কলকাতার এসএসকেএমের কমপ্রিহেনসিভ ব্রেস্ট সার্ভিসের হেড ও টেলি ব্রেস্ট সার্ভিসের নোডাল অফিসার ক্যান্সার বিশেষত ডাঃ দীপ্তেন্দ্র সরকারের তত্বাবধানে হয়েছে। এছাড়াও এমআর বাঙ্গুর থেকে উপস্থিত ছিলেন সার্জেন ডাঃ রনিত রায়। অস্ত্রোপচারটি করেছেন আসানসোল জেলা হাসপাতালের সিনিয়র সার্জেন ডাঃ রহুল আমিনের নেতৃত্বে একটি বিশেষ টিম। সবমিলিয়ে প্রায় দু’ঘন্টা মতো সময় লেগেছে এই অস্ত্রোপচারটি করতে। অস্ত্রোপচারের পর রোগী স্থিতিশীল রয়েছেন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
জানা যায়, গত বছরের মে মাসে আসানসোলের সালানপুরের বাসিন্দা বছর ৩৫ র এক মহিলা তাঁর স্তনে একটি টিউমারের চিকিৎসা করাতে জেলা হাসপাতালে এসেছিলেন। প্রথমে সেই টিউমারের অপারেশন করা হয়। সেই টিউমারের অংশ বায়োপসি সহ নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর জানা যায় যে তাঁর স্তন ক্যান্সার হয়েছে। এরপর জেলা হাসপাতালেই চিকিৎসকরে পরামর্শেই তাঁর কেমোথেরাপি ও চিকিৎসা শুরু হয় ও মোট আটটি কেমোথেরাপি দেওয়া হয়। এরপর জেলা হাসপাতালের সুপারিনটেনডেন্ট ডাঃ নিখিল চন্দ্র দাসের নেতৃত্বে মহিলার স্তন ইমপ্ল্যান্টের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এর জন্য প্রথমে পশ্চিম বর্ধমান জেলা স্বাস্থ্য দপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক বা সিএমওএইচ ডাঃ ইউনুস এই বিষয়ে কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালের ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ ডাঃ দীপ্তেন্দ্র সরকারের সাথে যোগাযোগ করেন। তিনি সবকিছু দেখেশুনে আসানসোল জেলা হাসপাতালেই ওই রোগীর স্তন ইমপ্ল্যান্ট অস্ত্রপোচারে সাহায্য় করতে রাজি হয়ে যান।
অস্ত্রোপচারের বিষয়ে সব ঠিকঠাক হলেও সমস্যা হয় ইমপ্ল্যান্ট কেনার খরচ নিয়ে। বিষয়টি নিয়ে আসানসোল পুরনিগমের স্বাস্থ্য বিভাগের চিকিৎসক ডাঃ সোমনাথ মণ্ডলের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিষয়টি মেয়রকে জানানোর পরামর্শ দেন। সেই মতো মেয়রের কাছে আবেদন করা হলে পুরনিগমের মেয়র তহবিল থেকে ইমপ্ল্যান্টের জন্য বেশকিছুটা অর্থ সাহায্য় করা হয়।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তর একটি ” পিঙ্ক করিডোর ” তৈরি করেছে। যাতে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত মহিলারা জেলা হাসপাতাল পর্যায়ে কোনও বিলম্ব ছাড়াই প্রয়োজনীয় সমস্ত চিকিৎসা পরিষেবা পেতে পারেন। এই ” পিঙ্ক করিডোর “-এর প্রকল্পেই আসানসোলের ক্যান্সার আক্রান্ত এই মহিলার অস্ত্রোপচারের ব্যবস্থা করা হয়।
স্বাস্থ্য দপ্তরের দাবি শুধু রাজ্যে নয়, সারা দেশের মধ্যে এই প্রথম কোন সরকারি জেলা হাসপাতালে এই ধরনের সফল অস্ত্রোপচার করা হলো। সেদিক থেকে বলতে গেলে এই সফল অস্ত্রোপচার আসানসোল জেলা হাসপাতালের মুকুটে একটি নতুন পালক যুক্ত করলো।





