সংবাদদাতা,আসানসোলঃ- বিশ্বকর্মা পুজোর দিনে একসময় আনন্দে মেতে উঠত এলাকা। শারোদৎসবের সূচনা হয়ে যেত বিশ্বকর্মা পুজো দিয়েই। চারিদিক গম গম করত এইদিন। আজ সেখানে শ্মশানের নিস্তব্ধতা। এলাকা ভরেছে ঘন জঙ্গলে। কথা হচ্ছে আসানসোলের বন্ধ হিন্দুস্তান কেবল কারখানার। এশিয়া বিখ্যাত ‘জেলি ফিলড কেবল’ তৈরি হত এখানে। তবুও নতুন করে স্বপ্ন দেখা শুরু করছে বন্ধ কারখানার ৩১ জন বেসরকারি নিরাপত্তা রক্ষী।
প্রসঙ্গত, ১৯৫২ সালে রাষ্ট্রায়ত্ত এই কারখানার পথ চলা শুরু হয় ।১১০০ শ্রমিক আবাসন, হাসপাতাল, স্কুল, ব্যাংক নিয়ে সালানপুরের রূপনারায়ণপুরে গড়ে ওঠে এক আধুনিক নগরজীবন । কিন্তু নয়ের দশক থেকেই পরিকল্পনার অভাবে কারখানা আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে শুরু করে। শুরু হয় উৎপাদন হ্রাস ও কর্মী ছাঁটাই । এই ভাবে ধুঁকতে ধুঁকতে ২০০১ সালে সম্পূর্ণ ভাবে কারখানার উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায় । এরপর কারখানার ভাগ্য নির্ধারণের দায়িত্ব যায় বিআরপিএসি বা রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা পুনরুজ্জীবন বোর্ডের কাছে । মাঝে একবার নিভে যাওয়ার আগে প্রদীপ জ্বলে উঠেছিল । ২০১৩ সালে কেন্দ্রীয় অর্ডিন্যান্স ফ্যাক্টরি বোর্ড উৎসাহ প্রকাশ করেছিল কারখানা অধিগ্রহণের জন্য। পরে ২০১৬ সালে বাবুল সুপ্রিয় আসানসোলের সাংসদ ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার পর শেষ চেষ্টা করেছিলেন কারখানার পুনর্জীবনের জন্য। কিন্তু সেসব চেষ্টা বৃথা যায়। প্রায় দেড় দশক ধরে উৎপাদনহীন হয়ে পড়ে থাকার পর ২০১৭ সালের ৩১ মার্চ পাকাপাকি ভাবে বন্ধ হয়ে যায় কারখানা । তারপর থেকেই কারখানার যন্ত্রাংশ একের পর এক নিলামে বিক্রি হয়ে যায় । আবাসনের জানলা-দরজা চুরি হয়ে কঙ্কালসার চেহারা নেয় । কারখানাও কার্যত শ্মশান ভূমিতে পরিণত হয় । এখন কারখানার গেট আর পোড়ো বাড়ির মতো কারখানার কয়েকটি ভবন দাঁড়িয়ে আছে । তবুও ৩১ জন ঠিকা নিরাপত্তারক্ষী আগলে রেখেছেন কারখানাকে। বিশ্বকর্মা পুজোর দিন তারা নিজেরাই চাঁদা তুলে ছোটখাট পুজোর আয়োজন করেন। স্বাভাবিকভাবেই আগেকার সেই জাঁকজমক না থাকলেও কারখানার ভূমিতে বিশ্বকর্মী দেবের আরাধনা পুজো অন্তত চলছে। পুজোর পাশাপাশি থাকে খিচুড়ি প্রসাদের ব্যবস্থা। আর প্রার্থনা, যেন নতুন কোনও শিল্প আসে এই বন্ধ কারখানার জমিতে ।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, বিগত কয়েক মাসে বেশ কয়েক বার বিএসএফ, সিআইএসএফ, এসএসবি সহ একাধিক নিরাপত্তা বাহিনী কারখানা এলাকা পরিদর্শন করেন। তাই এই নিরাপত্তা রক্ষী সহ এলাকার মানুষ মনে করছেন কারখানা না হলেও নতুন কিছু হতে চলেছে পরিত্য়ক্ত কারখানার শ্মশানভূমিতে।





