সন্তোষ কুমার মণ্ডল,আসানসোলঃ- ডিজিটাল এ্যরেস্টের ঘটনা দেশে নতুন নয়। প্রতারকদের কবলে পড়ে কোটি কোটি টাকা খুইয়েছেন বহু মানুষ। যাদের মধ্যে বেশিরভাগই শিক্ষিত ও প্রতিষ্ঠিত, যেমন সরকারি আধিকারিক, ইঞ্জিনিয়ার, চিকিৎসক এমনকি ব্যবসায়ীও। সরকার ও ব্যাঙ্ক থেকে ডিজিটাল অ্যারেস্টের বিষয়ে বিভিন্নভাবে মানুষকে সচেতন করার প্রক্রিয়া চললেও ডিজিটাল এ্যরেস্টের ঘটনা ঘটেই চলেছে। এই পরিস্থিতিতে উপস্থিতি বুদ্ধির জোরে ডিজিটাল এ্যরেস্ট রুখে দিলেন এক রেল কর্মীর স্ত্রী। ঘটনা আসানসোলের রূপনারায়ণপুরের।
এলাকার বাসিন্দা রেল কর্মী অশোক দত্ত জানান, গত ১২ ডিসেম্বর সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ তাঁর মোবাইলে প্রথমে ৯৪০১৯৭৪১১০ নম্বর থেকে একটি সাধারণ কল আসে। সেই কলের অপরপ্রান্তে থাকা এক মহিলা জানান, অশোকবাবুর আধার কার্ড ব্যবহার করে মুম্বাইয়ের কোলাবা থানা এলাকা থেকে সিম কেনা হয়েছে এবং সেই সিম ব্যবহার করে গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় হুমকি কল করা হয়েছে। এমনকি অশোকবাবুর আধার নম্বর ব্যবহার করে অবৈধ জিনিস কেনা হয়েছে। আর এই সব অবৈধ ও অনৈতিক কার্যকলাপের জন্য তিনি গ্রেফতার হতে পারেন এমনকি তাকে মুম্বাইয়ের কোলাবা থানায় যেতে হতে পারে। সেই জন্য ওই থানার ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক তার সঙ্গে কথা বলবেন।
এরপরই ৭২১৮৪ ৭৩১৭১ নম্বর থেকে হোয়াটসঅ্যাপ ভিডিও কল করা হয়, অশোকবাবুকে। তিনি দেখতে পান, অপরপ্রান্তে পুলিশের পোশাক পরা এক ব্যক্তি বসে আছেন। পুলিশের পরিচয়ধারী ওই ব্যক্তি অশোক বাবুর কাছে জানতে চান তাঁর আধার কার্ড হারিয়ে গেছে কিনা কিংবা তিনি মুম্বইয়ে এসে আধার কার্ড কোথাও ব্যবহার করেছেন কিনা। উত্তরে অশোকবাবু জানান তিনি কোনদিন মুম্বাইয়ে যাননি, তার আধার কার্ডও হারায়নি। এরপরই পুলিশের উর্দিধারী ওই ব্যক্তি বলেন, এক্ষুনি ব্যবস্থা না নিলে অশোক বাবুর সমস্ত ফোন বন্ধ হয়ে যাবে, এমনকি ফোনের সাথে যেসব অ্যাকাউন্ট লিঙ্ক আছে সেগুলিও অকেজো হয়ে যাবে। এবং তাকে ডিজিটাল অ্যারেস্ট করা হবে।
অন্যদিকে এইসব কথাবার্তার মধ্যেই অশোক বাবুর স্ত্রী পলিকণাদেবী গৃহ কর্মের ব্যস্ততার মাঝেও লক্ষ্য করেন তাঁর স্বামী ভয়ার্তভাবে ফোনে কারও সঙ্গে কথা বলছেন। এরপরই তিনি বুঝতে পারেন ডিজিটাল অ্যারেস্টের ভয় দেখানো হচ্ছে তাঁর স্বামীকে। তিনি সঙ্গে তাঁর স্বামীকে জানান ওই কল ভুয়ো এবং তাকে মিথ্যে ভয় দেখানো হচ্ছে। এই কথা শুনে পুলিশের উর্দিধারী ওই ব্যক্তি পলিকণাদেবীকেও ভয় দেখানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু পলিকণাদেবী ভয় না পেয়ে উল্টে তাকে পুলিশকে পুরো বিষয়টি জানাবেন বলে ভয় দেখান।
পলিকণাদেবী বলেন, “এক অদ্ভুত মারাঠি টোনের হিন্দিতে কথা বলছিলেন পুলিশের উর্দিধারী ব্যক্তিটি। কিন্তু তাঁর ধমক খেয়ে ভুয়ো ওই পুলিশ কর্মী ঝরঝরে হিন্দিতে কথা বলতে শুরু করেন তাদের অবজ্ঞা করার ফল ভুগতে হবে বলে ধমক দিতে থাকেন।”
যদিও কোনভাবেই অশোক বাবু এবং তার স্ত্রীকে বাগে আনতে না পেরে শেষ পর্যন্ত ফোন কল কেটে দেয় প্রতারক। আর স্ত্রীর উপস্থিত বুদ্ধির জোরে প্রতারণার হাত থেকে রক্ষা পান অশোকবাবু।


















