রামকৃষ্ণ চ্যাটার্জ্জী, আসানসোলঃ- আসানসোলের কুলটির বেনাগ্রাম। হঠাৎ নিজেদের ভিটেমাটির মায়া ত্যাগ করে দলে দলে গ্রাম ছাড়তে শুরু করে গ্রামবাসীরা। পিছনে পড়ে থাকে অসংখ্য স্মৃতি, একটু জল পাওয়ার আশায় বাঁধানো তুলসী মঞ্চ, পুকুর ঘাট। ধীরে ধীরে সমস্ত গ্রাম মরুভূমির মত জনশূন্য হয়ে পড়ে। পরিণত হয় আস্ত ভূতুড়ে পাড়ায়। আসলে তখন গ্রামে ছিলনা রাস্তা, পানীয় জলের ব্যবস্থা, বিদ্যুতের আলো। অনুন্নয়নের ছোঁয়া পুরোপুরি বিরাজ করত সেখানে। আসল সত্য এড়িয়ে প্রচার শুরু হলো ওখানে নাকি ভূত আছে! কুসংস্করাচ্ছন্ন মানুষ সেটা বিশ্বাস করতেও শুরু করে।
তবে কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোর দিন আরোপিত ভূতের আতঙ্ক দূর করে গ্রামবাসীরা একটা দিনের জন্য গ্রামে ফিরে আসেন এবং পরের দিন আবার নিজেদের নতুন বাসস্থানে ফিরে যান। এসব প্রায় বছর পঁচিশ আগেকার ঘটনা। পরে অবশ্য আসানসোল পুরনিগমের সৌজন্যে এলাকায় উন্নয়নের ছোঁয়া লাগলেও ওরা আর গ্রামে ফেরেননা। ততদিনে অন্যত্র তারা নতুন করে বাসস্থান তৈরি করে নতুন করে জনপদ গড়ে ফেলেছেন।
যাইহোক, কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোর দিন কুলোদেবীকে পুজো দিতে একদিনের জন্য তারা
গ্রামে ফিরে আসেন। উৎসবে মেতে ওঠেন সমগ্র গ্রামবাসী। বছরের অন্য সময় বেনাগ্রাম সম্পূর্ণ অন্ধকার ও জনমানবহীন থাকলেও ওইদিন গ্রামটি আলোয় ভরে ওঠে। গ্রামের লক্ষ্মী মন্দিরে চলে লক্ষ্মীর আরাধনা, ভোগ বিতরণ। পরদিন সকালে লক্ষ্মী প্রতিমা বিসর্জনের সঙ্গে সঙ্গে সবাই আবার গ্রাম ছেড়ে চলে যান। পুনরায় মরুভূমির মত জনশূন্য হয়ে পড়ে বেনাগ্রাম।
হয়তো নতুন প্রজন্ম যারা অন্যত্র জন্মলাভ করেছে তারা বেনাগ্রামে ফিরতে চাইবেনা। জন্ম সূত্রে গ্রামের প্রতি তাদের নাড়ির টান নাই। কিন্তু এখানে জন্ম নেওয়া প্রবীণরা, এই গ্রামে যাদের ফেলে আসা শৈশবের অনেক স্মৃতি পড়ে আছে তাদের তো ফিরতে মন চাইবে! তারা যাতে পূর্ব পুরুষের জন্মভিটেতে আবার পাকাপাকিভাবে ফিরে আসার সুযোগ পায় তারজন্য প্রশাসন কি পারেনা উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে? এখন দেখার আধুনিক যুগে বেনাগ্রামের নাম থেকে ভূতুড়ে গ্রামের তকমা দূর হয় কিনা!





