সন্তোষ কুমার মণ্ডল,আসানসোলঃ- এক নাবালককে অপহরণ ও খুনের ঘটনায় মামা ভাগ্নেকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা শোনাল আসানসোল আদালতের ফাস্ট ট্র্যাক ফাস্ট কোর্টের বিচারক জয়তী সাহা। সাজা প্রাপ্ত দুই আসামী বিট্টু মন্ডল ও তার মামা উদয় মন্ডল। এই উদয় মণ্ডল বিহারের বাসিন্দা ও বিহারের কুখ্যাত অপরাধী। তার নামে বিহারে একাধিক অপরাধের মামলা আছে। এই খুনের ঘটনায় জড়িত বিট্টু মন্ডলের ছোট ভাইও। তবে সে নাবালক হওয়ায় তার বিচার চলছে জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ডে।
পুলিশ ও আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০২৩ সালের ২৬ মার্চ আসানসোলের হিরাপুর থানার বার্নপুরের রামবাঁধে নিজের বাড়ির সামনে বসে মোবাইলে গেম খেলছিলো দুই ভাই। বড় ভাই শৌচালয় যায়। ফিরে এসে দেখে ছোট ভাই নেই। স্বাভাবিক ভাবেই তার খোঁজ শুরু হয়। বেশ কিছুক্ষন পরে এলাকার এক বাসিন্দা পরিবারের সদস্যদেরকে জানায়, শ্যামবাঁধের এক বন্ধুর সঙ্গে সে দামোদর ঘুরতে গেছে। যদিও দিনভর খোঁজখবর করে বছর চোদ্দর ওই নাবালকের হদিশ মেলেনি। অবশেষে পরদিন ২৭ মার্চ নাবালকের পরিবারের তরফে হিরাপুর থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করা হয়।
সেই অভিযোগের ভিত্তিতে এফআইআর করে তদন্ত শুরু করে পুলিশ এবং ২৮ মার্চ হিরাপুর থানার দামোদর নদ লাগোয়া একটা জলা জায়গা থেকে ওই নাবালকের বস্তাবস্তি মৃতদেহ উদ্ধার হয়। তদন্তে নেমে হিরাপুর থানার পুলিশ জানতে পারে, খুন হওয়া নাবালকের এক বন্ধু (বিট্টু মণ্ডলের ভাই) তাকে ঘোরানোর নাম করে দামোদরের কাছে এক নির্জন এলাকায় যায়। সেখানে আগে থেকেই অপেক্ষা করছিল নাবালক বন্ধুর বড় দাদা বিট্টু মন্ডল ও তার মামা উদয় মন্ডল। তারা নাবালকের মুখে সেলোটেপ বেঁধে নাবালকের মোবাইলেই তার ছবি তোলে। তাদের উদ্দেশ্য ছিল পরিবারের লোকদেরকে সেই ছবি পাঠিয়ে মুক্তিপণ আদায় করা। কিন্তু তাদের সন্দেহ হয় এই কাণ্ড করার সময় তাদের কেউ দেখে ফেলেছে। ফেঁসে যাওয়ার ভয়ে তারা নিজেদের পরিকল্পনা পরিবর্তন করে এবং ওই নাবালককে খুন করে বস্তায় ভরে নদীর ধারে ফেলে রেখে আসে। প্রমাণ লোপাট করার জন্য নাবালকের মোবাইল ঘটনাস্থল থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে আসানসোল রেল স্টেশনের ৭ নং প্ল্যাটফর্মে ফেলে রেখে আসে। পরে পুলিশ ওই মোবাইলটি উদ্ধার করে। ওই মাবাইলের তথ্য প্রমাণ হিসেবে পেশ করা হয় আদালতে যা অভিযুক্তদের দোষী সাব্যস্ত করতে অনেকটাই সুবিধা করে।
এই মামলার সরকারি আইনজীবী সোমনাথ চট্টরাজ জানান, অপহরণ করে মুক্তি পণ আদায় করে বড়লোক হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিল বিট্টু মণ্ডল। এই কথা সে নিজের বান্ধবীকে (অন্ডালের বাসিন্দা) ঘটনার আগের দিন বলেছিল। মামলা চলাকালীন বিট্টুর বান্ধবী সাক্ষ্য দিয়ে আদালতে সেই কথা জানায়। এই বান্ধবী ছাড়াও ৩৭ জন সাক্ষ্য দেয় এই মামলায়। এছাড়াও মৃত নাবালকের হাতে কিছু চুল পাওয়া গিয়েছিল। সেই চুলের ডিএনএ পরীক্ষা করে জানা যায় তা বিট্টুর। দুই ভাগ্নেকে সঙ্গে নিয়ে এই এই অপরাধের ব্লু প্রিন্ট করে ও পুরো নেতৃত্ব দেয় বিট্টুর অপরাধী মামা।
গত বুধবার তথ্য প্রমাণাদি ও সাক্ষ্য দানের ভিত্তিতে এই দুজনকে দোষী সাব্যস্ত করেছিলেন বিচারক। শুক্রবার অপহরণ, খুন, অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র ও তথ্য প্রমাণ লোপাটের চারটি ধারাতেই দুজনকে দোষী সাব্যস্ত করে, যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দেন তিনি।

















