eaibanglai
Homeএই বাংলায়প্রায় ৩৫০ কোটি টাকার আর্থিক প্রতারণায় তৃণমূল যোগের অভিযোগে তোলপাড় শিল্পশহর

প্রায় ৩৫০ কোটি টাকার আর্থিক প্রতারণায় তৃণমূল যোগের অভিযোগে তোলপাড় শিল্পশহর

সন্তোষ কুমার মণ্ডল,আসানসোলঃ- পশ্চিম বর্ধমান জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সংখ্যালঘু সেলের নেতার ছেলের বিরুদ্ধে প্রায় সাড়ে তিনশো কোটি টাকা প্রতারাণার অভিযোগে তোলপাড় শিল্পশহর। অভিযোগ পাল্টা অভিযোগ ঘিরে শুরু হয়েছে রাজনৈতি তরজা। মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু হয়েছে বলে দাবি পুলিশের।

প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে পশ্চিম বর্ধমানের তৃণমূলের সংখ্যালঘু সেলের প্রাক্তন সহ-সভাপতি শাকিল আহমেদের ছেলে তহসিন আহমেদের বিরুদ্ধে। অভিযোগ আসানসোল উত্তর থানার রেলপারের জাহাঙ্গীর মহল্লার বাসিন্দা তহসিন আহমেদ মোটা অঙ্কের মুনাফার লোভ দেখিয়ে প্রায় হাজার তিনেক মানুষের কাছ থেকে কয়েকশো কোটি টাকা আত্মস্যাৎ করেছেন। প্রতারিত বিনিয়োগকারীদের দাবি ১৫ % সুদ দেওয়ার প্রতিশ্রুতিতে তারা টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন। এমনকি কয়েক মাস ভাল সুদও পেয়েছিলন, তার পর থেকে টাকা দেওয়া বন্ধ করে দেওয়া হয়। এমনকি টাকা চাইতে গিয়ে শারীরিক হেনস্থার শিকার হন বলে দাবি আসানসোলের মহিশিলা কলোনির বটতলার বাসিন্দা মৌটুসী দত্তর। তাঁর দাবি তিনি গয়না বন্দক রেখে প্রায় ৪১ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করেন এবং গত ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত সুদও পান। কিন্তু তার পর থেকে আর টাকা পাননি। সেই টাকা ২০ অক্টোবর দেওয়ার কথা ছিল। অভিযোগ সেই মতো তিনি টাকা চাইতে গেলে তহসিনের পরিবারে সদস্যরা তাকে মারধর করেন এবং তাতে তিনি আহত হন। বিষয়টি নিয়ে গত বুধবার রাতে তহসিন আহমেদ, শাকিল আহমেদ সহ তিনজনের নামে আসানসোল উত্তর থানার এফআইআর দায়ের করেন তিনি। তিনজনের বিরুদ্ধে বিএনএসের একাধিক ধারায় মামলা করা হয়েছে। যদিও তিনজনের মধ্যে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি।

এদিকে বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছে বিরোধী বিজেপি। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বৃহস্পতিবার নিজের টুইটার হ্যান্ডেলে ঘটনায় তৃণমূল যোগের অভিযোগ করে টুইট করেছেন। তাতে তিনি অবিলম্বে সেবি এবং ইডিকে দিয়ে ঘটনার তদন্তের দাবি করেছেন। শুভেন্দু অধিকারী তার টুইটে অভিযুক্ত তহসিন আহমেদের একটা ভিডিও বার্তা পোস্ট করেছেন। তাতে তহসিন আহমেদকে টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করে ক্ষমাপ্রার্থনা করতে শোনা গেছে। যদিও ওই ভিডিওর সত্যতা যাছাই করেনি এইবাংলায় ওয়েব পোর্টাল। একইভাবে, গোটা বিষয়টি নিয়ে টুইট করেছেন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতা অমিত মালব্য।

অন্যদিকে, আসানসোল দক্ষিণের বিধায়িক তথা বিজেপির রাজ্য নেত্রী অগ্নিমিত্রা পাল সাংবাদিক বৈঠক করে বিষয়টি নিয়ে সরব হন এবং অবিলম্বে পুলিশকে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান। তিনি বলেন,”আসানসোল উত্তর থানার রেলপারের জাহাঙ্গীর মহল্লার বাসিন্দা তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা ও তার ছেলের বিরুদ্ধে আর্থিক প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে। তাদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে পুলিশকে ব্যবস্থা নিতে হবে। তিনি আরো বলেন, “পুলিশের কাছে একজন মহিলা অভিযোগ করার পরে ২৪ ঘন্টা পেরিয়ে গেছে অথচ পুলিশ দোষীদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়নি। কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি।”

এদিকে পুরো বিষয়টি নিয়ে অস্বস্তিতে পড়ে বৃহস্পতিবার বিকেলে গোটা বিষয়টি নিয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করেন আসানসোল পুরনিগমের বোরো চেয়ারম্যান তথা আসানসোল উত্তর ব্লকের সভাপতি অনিমেষ দাস। সেখানে তিনি বলেন, “কয়েক মাস আগেই এই ঘটনা আমরা জানতে পারি। তখনই আমরা অভিযুক্ত তহসিন আহমেদের বাবা শাকিল আহমেদকে সংখ্যালঘু সেলের সহ-সভাপতি পদ ও দল থেকে সরানোর জন্য উচ্চ নেতৃত্বর কাছে আবেদন করি। সেই মতো তাকে সরানো হয়েছে। এখন বিরোধীরা এটা নিয়ে অযথা রাজনীতি করছে। আমরা প্রতারিত হওয়া সবাইকে বলছি আপনারা পুলিশ প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করুন। প্রশাসন আপনাদের পাশে থাকবে ও আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে।” ওই একই সাংবাদিক সম্মেলনে তৃণমূল কংগ্রেসের সংখ্যালঘু সেলের জেলা সভাপতি সৈয়দ মেহেফেজুল হাসান ওরফে মনু সাংবাদিকদের বলেন, “শাকিল আহমেদ অত্যন্ত ভালো মানুষ। আজও তার সাথে আমার সম্পর্ক আছে। আমি জানতামই না তার ছেলে এইরকম ঘটনা ঘটাচ্ছে। গত ১৯ অক্টোবর নতুন করে যে জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সংখ্যালঘু সেলের সভাপতির নাম ঘোষণা করা হয়েছে। সেই কমিটিতে এখনো কোনো সহ-সভাপতি নেই। তাকে অনেক আগেই এই খবর পাওয়ার পরেই সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমি জেনেছি প্রচুর মানুষ এই ধরনের চিটফান্ডের বেশি লাভের আশায় বিনিয়োগ করেছিলেন । এর আগে বার্নপুরেও এমন দুটো ঘটনা ঘটেছে। এ নিয়ে রাজনীতি করা ঠিক হবে না। সবার কাছে আমাদের অনুরোধ চিটফান্ডের মতো ব্যবসায় এইভাবে টাকা বিনিয়োগ করবেন না।”

অন্যদিকে আসানসোল পুলিশ কমিশনারেটের ডিসি (সেন্ট্রাল) ধ্রুব দাস জানিয়েছেন, ঘটনার তদন্ত শুরু করা হয়েছে। বিনিয়োগকারীর অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করা হবে।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, বাম আমলে ফরওয়ার্ড ব্লকে ছিলেন শাকিল আহমেদ। কাউন্সিলরও হয়েছিলেন। রাজ্যে পালাবদলের পর তিনি তৃণমূলে যোগ দেন। দলের গুরুত্বপূর্ণ পদও পান। এদিকে ছেলের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ প্রকাশ্যে আসার পর শাকিল আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার ফোন বন্ধ থাকায় তার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments