সন্তোষ কুমার মণ্ডল,আসানসোলঃ– প্রবল বিরোধীতার জেরে অবশেষে বাতিল করা হল আসানসোলের বহুলায় সর্বজনীন কালী পুজোর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ভোজপুরি গায়ক পবন সিংয়ের অনুষ্ঠান। প্রসঙ্গত ওই পুজো কমিটির সাথে জড়িত রয়েছেন তৃণমূলের জামুড়িয়ার বিধায়ক হরেরাম সিং ও তার পুত্র যুব তৃণমূলের জেলা সম্পাদক প্রেম পাল সিং।
বিধায়ক পুত্র শনিবার দুপুরে জামুরিয়ায় বিধায়কের অফিসে একটি সাংবাদিক সম্মেলন করে বহুলা সর্বজনীন কালীপুজোর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বাতিলের কথা ঘোষণা করেন। তিনি জানান, কালী পুজোকে সামনে রেখে প্রতি বছর বহুলায় বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। যেখানে বিশিষ্ট শিল্পীদের আমন্ত্রণ জানানো হয়। একইরকমভাবে এবারও আসন্ন কালীপুজো উপলক্ষ্যে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। যেখানে বিখ্যাত ভোজপুরি গায়ক পবন সিংয়ের একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। কিন্তু নিরাপত্তাজনিত কারণে অনুষ্ঠানের অনুমতি দেয়নি পুলিশ। ফলে শুধুমাত্র পবন সিংয়ের অনুষ্ঠান নয়, কালীপুজোর সমস্ত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানটিই বাতিল করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত প্রখ্যাত ভোজপুরি গায়ক পবন সিংয়ের অনুষ্ঠান নিয়ে টানা কয়েক দিন ধরে বিতর্ক চলছিলো আসানসোলে। বিরোধিতায় মাঠে নেমে সরব হয় বাংলা ভাষা ও বাঙালির অধিকারের দাবি জানানো ” বাংলা পক্ষ ” র মতো সংগঠন। সংগঠনের অভিযোগ ভোজপুরি সংগীত শিল্পী পবন সিং বাংলার মাটি বাংলার জল সর্বপরি বাঙালির নারীদেরকে নিয়ে অনেক অবমাননাকর গান গেয়ে বিখ্যাত হয়েছেন। যে শিল্পীর বাঙালি জাতির প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা নেই তাকে বাংলার মাটিতে স্থান দেওয়া হবে না। পাশাপাশি বাংলা পক্ষ ও পশ্চিম বর্ধমান জেলা মহিলা কমিশন এডিপিসি ও জামুড়িয়া থানায় ওই অনুষ্ঠানের বিরুদ্ধে ডেপুটেশনের সিদ্ধান্ত নেয়। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে শেষ পর্যন্ত শনিবার এক সাংবাদিক বৈঠকের মাধ্যমে সমস্ত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বাতিলের কথা জানায় বহুলা সর্বজনীন কালীপুজো কমিটি।
তবে পবন সিংকে নিয়ে আসানসোলে আগেও বিতর্ক তৈরি হয়েছে। ইতিপূর্বে বিগত লোকসভা নির্বাচনে আসানসোল কেন্দ্রে পবন সিংকে প্রার্থী করেছিল বিজেপি। এরপরই রাজ্যের শাসক দলের সেকেন্ড ইন কমান্ড সাংসদ অভিষেক বন্দোপাধ্যায়, রাজ্যের মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় থেকে শুরু করে অনেকেই পবন সিংয়ের বাংলা ও বাঙালি মহিলাদের নিয়ে গাওয়া অবমাননাকর গান, ভিডিও সোশ্যাল মিডায়ায় পোস্ট করে জনসমক্ষে এনে বিরোধীতায় সরব হয়। শুরু হয় বিতর্ক। শেষ পর্যন্ত বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব পবন সিংকে প্রার্থী করা নিয়ে মত বদলায়। পাশাপাশি পবন সিং নিজেও আসানসোলে নির্বাচনের লড়াই থেকে সরে দাঁড়ানোর কথা জানান।
অন্যদিকে পবন সিংয়ের অনুষ্ঠান বাতিল নিয়ে সামলোচনায় সরব হয়েছেন আসানসোল দক্ষিণের বিজেপি বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পাল। তিনি বলেন, “একজন শিল্পী তো যে কোন জায়গায় গিয়ে অনুষ্ঠান করতে পারেন। কিন্তু পবন সিং বাংলায় অনুষ্ঠান করতে পারলেন না। এটা বাংলার লজ্জা। যা হলো তা ঠিক হলোনা।” পাশাপাশি বিধায়ক পুত্র প্রেমপাল সিং এদিন ভোজপুরি গায়কের অনুষ্ঠিন বাতিল প্রসঙ্গে বলেন, “বাংলায় হিন্দিভাষীদের প্রতি যে পরিমাণ ভালোবাসা দেওয়া হয় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে, তা উত্তরপ্রদেশ ও বিহারের হিন্দিভাষী অঞ্চলেও খুঁজে পাওয়া যায় না। তাই হিন্দিভাষী বাঙালি হওয়ায় তার কোনো ক্ষোভ বা অভিযোগ নেই।” তার দাবি, যারা আন্দোলন করছেন তাদের বোঝা দরকার এই দেশ ও বাংলা গঙ্গা-যমুনার ভূমি। বাংলার মাটি কাজি নজরুল ইসলাম ও রবীন্দ্র নাথ ঠাকুরের। এখানে কারো ধর্ম বা ভাষা যাই হোক না কেন সবাই মিলেমিশে বসবাস করেন। একজন শিল্পীর পরিচয় শুধুমাত্র তার শিল্পকলা। এ অবস্থায় কোনো শিল্পীর বিরোধিতা করা ঠিক নয়। তবে এই পুরো ঘটনায় সঙ্গীত শিল্পী পবন সিংয়ের কোন প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায় নি।