সংবাদদাতা,আসানসোলঃ– মাস খানেক আগেই কোনোরকম দুর্নীতি বরদাস্ত করা হবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার পর থেকে পশ্চিম বর্ধমান জেলাজুড়ে কয়লা, বালি, লোহা পাচার সহ অবৈধ কারবার রুখতে সক্রিয় হয় আসানসোল দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেট। সক্রিয় হয় ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরও। চলে ধরপাকড়, গ্রেফতারও হন বেশ কয়েক জন। এরই মাঝে বালি পাচার রুখতে গিয়ে স্থানীয়দের বাধার মুখে পড়ল পুলিশ। অবৈধ বালি পাচারের দাবিতে রীতিমতো পথ অবরোধ করে চলল বিক্ষোভ। ঘটনা আসানসোলের কুলটি থানার শাকতোড়িয়া ফাঁড়ি এলাকার। যা নিয়ে শোরগোল পড়ে গিয়েছে শিল্পাঞ্চলে।
ঘটনা সূত্রে জানা যায়, এলাকায় ছোট ছোট গাড়িতে করে দিনে দুপুরে বালি পাচার চলছিল। খবর পেয়ে গত শুক্রবার অভিযান চালায় পুলিশ এবং অবৈধ বালি বোঝাই গাড়ি ধরতে গিয়ে রীতিমতো বিক্ষোভের মুখে পড়ে শাকতোড়িয়া ফাঁড়ির পুলিশকে। এরপর ডিসেরগড়ের শিশুবাগান এলাকায় রাজ্য সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান ওই বালি পরিবহণকারীদের একাংশ। তারা দাবি জানান, অবৈধ ভাবে বালি পরিবহণ করতে দিতে হবে। অন্যথায় বিক্ষোভ চলবে। অন্যদিকে অবরোধের জেরে যান চলাচল ব্যাহত হয়। কিছু ক্ষণ এই অবস্থা চলার পরে আইনি পদক্ষেপের কথা বলায়, বিক্ষোভ তুলে নেন অবরোধকারীরা।
স্থানীয় বাসিন্দা তথা বিক্ষোভকারীদের দাবি এলাকায় চাকরি নেই। অন্ন সংস্থানের ব্যবস্থা নেই। পেট চালাতে বাধ্য হয়ে দামোদর থেকে বালি তুলে তা পরিবহণের কাজ করে রুজি রোজগার করছেন তারা। তাই দিনে অন্তত তিন ঘণ্টা বালি নিয়ে যেতে দিতে হবে। অনেকে আবার প্রশ্ন তোলেন এলাকায় রমরমিয়ে লোহা, কয়লা পাচার হচ্ছে। তা হলে শুধু বালি পাচার বন্ধ করা হবে কেন?
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে ওই ঘটনার পর এলাকায় পুলিশি তৎপরতা আরও বাড়ানো হয়েছে। শনিবার ভোর রাতে ডিসেরগড় ঘাটের কাছে অবৈধ বালি বোঝাই একটি ১৬ চাকার ডাম্পার বাজেয়াপ্ত করে পুলিশ এবং চালককে গ্রেফতার করা হয়।
অন্যদিকে বিতর্কিত ওই বিক্ষোভের ছবি সোশ্যাল মিডিয়ার ভাইরাল হয়। যা নিয়ে শিল্পাঞ্চলে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা। বিষয়টি নিয়ে শসাকদলকে দুষতে ছাড়েনি বিরোধী বিজেপি। অন্যদিকে স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব দাবি করে অবৈধ কোনো কারবার বরদাস্ত করা হবে না। পুলিশ আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
বিজেপি যুব মোর্চার রাজ্য কমিটির সদস্য তথা স্থানীয় বিজেপি নেতা অমিত কুমার গড়াই বলেন,” বিরোধীরা কোনো বিক্ষোভ কর্মসূচি করলে তো পুলিশ লাঠিচার্জ করে হঠিয়ে দেয়। কোন রাজ্যে বাস করছি আমরা, যেখানে বালির অবৈধ কারবারের জন্য পথ অবরোধ করা হয়। আসলে মুখ্যমন্ত্রী যতোই বলুন যতোই চিৎকার করুণ,ওনার দল পুরোপুরি অবৈধ কারবার ও তোলাবাজদের সঙ্গে লিপ্ত। ওনার দল শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত। ওনার নেতারা এখন আবদার করছেন যে অবৈধ বালি কারবার চলতে দিতে হবে। এটা পশ্চিমবঙ্গ বলেই সম্ভব।”
যদিও স্থানীয় তৃণমূল নেতা বিমান দত্তকে এবিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “জোর করে কিছু করা যায় না। এগুলো বরদাস্ত করা যাবে না। লিজ নিয়ে আইনি পথে যেকোনো কারবার করতে হবে।”