সন্তোষ কুমার মণ্ডল,আসানসোলঃ- শীর্ষ আদালতের রায়ে চাকরি হারা হয়েছেন রাজ্যের প্রায় ২৬০০০ সরকারি শিক্ষক শিক্ষিকা ও অশিক্ষক কর্মী। স্কুল সার্ভিস কমিশন বা এসএসসি’র নিয়োগে দুর্নীতি প্রমাণিত হওয়ায় ২০১৬ সালের পুরো প্যানেলটি বাতিল করা হয়েছে। প্রতিবাদে যোগ্য শিক্ষক, শিক্ষিকা, অধিকার মঞ্চের ব্যানারে রাজ্য জুড়ে পথে নেমে আন্দোলন শুরু করেছেন চাকরিহারারা। বুধবার রাজ্যের অন্যান্য জেলার পাশাপাশি পশ্চিম বর্ধমানেও আন্দোলনে সামিল হন চাকরি হারানো শিক্ষক শিক্ষিকারা।
এদিন পশ্চিম বর্ধমান জেলার যোগ্য শিক্ষক শিক্ষিকা, অশিক্ষক কর্মী অধিকার মঞ্চের ব্যানারে শিক্ষক, শিক্ষিকা ও অশিক্ষক কর্মীরা আসানসোলের পুরনো রামকৃষ্ণ মিশন আশ্রম মোড় থেকে এসবি গড়াই রোডের সুকান্ত ময়দান সংলগ্ন ডিআই অফিস পর্যন্ত একটি বিক্ষোভ মিছিল করেন। সেখানে অফিসে ঢুকে পশ্চিম বর্ধমান জেলার ডিআই সুনীতি সাঁপুইয়ের চেম্বারের সামনে স্লোগান দিতে থাকেন বিক্ষোভকারীরা। চলে তুমুল বিক্ষোভ। পরে ডিআই অফিসের গেটে তালা ঝুলিয়ে দেন তাঁরা। তবে এই সময় ডিআই বা অন্য কাউকে ডিআই অফিসে দেখা যায় নি।
এর আগে, এই সমস্ত শিক্ষক, শিক্ষিকা ও অশিক্ষক কর্মীরা আসানসোল জিটি রোডের পুরনো রামকৃষ্ণ মিশন আশ্রম মোড় সংলগ্ন শনি মন্দিরের সামনে জড়ো হন। সেখানে তারা প্রায় আধঘন্টার মতো জিটি রোড অবরোধও করেন। এরপর, তারা সেখান থেকে নুরুদ্দিন রোড, ময়দাকল মোড় হয়ে ডিআই অফিসে পৌঁছন।
এদিন আন্দোলনকারী শিক্ষক, শিক্ষিকা ও অশিক্ষা কর্মীরা বলেন, “আমরা সবাই যোগ্য। আমরা নিজেদের যোগ্যতার ভিত্তিতে চাকরি পেয়েছি। কিন্তু এসএসসি, রাজ্য সরকার এবং শিক্ষা দপ্তরের জন্য যেভাবে আমাদেরকে চাকরি থেকে বঞ্চিত হতে হয়েছে, তা মেনে নেওয়া যায় না। চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে আমরা কোনও ভুল পথ অবলম্বন করিনি। তবুও আমাদেরকে অযোগ্য শিক্ষকদের সাথে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে।”
তাঁরা জানান, এসএসসির কাছে ওএমআর শিটের একটি কপি ( মিরর ইমেজ) আছে। যদি সেই মিরর ইমেজ প্রকাশিত হয়, তাহলে স্পষ্ট হবে কে অযোগ্য এবং কে যোগ্য। কিছু মানুষকে বাঁচানোর জন্য এটা করা হচ্ছে না। মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগড়ে দিয়ে বিক্ষোভরত শিক্ষক শিক্ষিকারা বলেন, “নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন যে প্রথমে তিনি যোগ্য শিক্ষকদের সমস্যার সমাধান নিয়ে ভাববেন। তারপরে তিনি অযোগ্য শিক্ষকদের বিষয়টিও দেখবেন। যাদের কারণে যোগ্য শিক্ষকরা আজ এত বড় বিপর্যয়ের মুখোমুখি হয়েছেন, সেই অযোগ্য শিক্ষকদের নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী কেন এত চিন্তিত?”
একই সঙ্গে, মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্ট পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত নেওয়া অতিরিক্ত শূন্য পদ সৃষ্টির বিষয়ে সিবিআই তদন্ত খারিজ করার নির্দেশ দেয়। এই প্রসঙ্গে শিক্ষকরা বলেন ,”এটা অত্যন্ত আশ্চর্যের বিষয় যে, অযোগ্য শিক্ষকদের নিয়োগ বাঁচাতে অতিরিক্ত শূন্য পদ সৃষ্টিকারী মন্ত্রিসভা সম্পর্কে কোনও তদন্ত হবে না। বরং যারা তাদের মেধার ভিত্তিতে চাকরি পেয়েছিলেন তাদের শাস্তি দেওয়া হয়েছে।”
বিক্ষোভকারীরা এদিন হুঁশিয়ারী দিয়ে জানান, যোগ্য শিক্ষকরা তাঁদের প্রতি হওয়া অন্যায় মেনে নেবেন না। বিচার না পাওয়া পর্যন্ত লাগাতার আন্দোলন চলবে।





