সন্তোষ কুমার মণ্ডল,আসানসোলঃ- মাধ্যমিক পরক্ষার ফলাফল বেরিয়েছে আজ। পশ্চিম বর্ধমান জেলার সেরা ১০ জনের মধ্যে রয়েছে আসানসোলের উমারানি গড়াই মহিলা কল্যাণ স্কুলে ছাত্রী থৈবি মুখোপাধ্যায়। স্কুলের মধ্যে প্রথম। তার প্রাপ্ত নম্বর ৬৭৪। নিজের এই সাফল্য দেখে যেতে পাড়ল না আসানসোলের এই কৃতী ছাত্রী। মাধ্যমিকের ফল বেরোনোর মাত্র ১৭ দিন আগে অকাল মৃত্যু ছিনিয়ে নিয়েছে তাকে। শোকস্তব্ধ পরিবার।
থৈবির রেজাল্ট দেখে চোখের জল বাঁধ মানছে না বাবা বিবেকানন্দ মুখোপাধ্যায় ও মা পিউ মুখোপাধ্যায়ের। পরীক্ষার রেজাল্টে দেখা যায় থৈবি বাংলায় পেয়েছে ৯৯, অংকে ৯৮, ভৌত বিজ্ঞানে ৯৭, জীবন বিজ্ঞানে ৯৮, ইতিহাসে ৯৫ ও ভূগোলে ৯৫। এই বছর শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছিলো থৈবি। তবে তার আগেই থৈবির জন্ডিস ধরা পড়েছিলো। শারীরিক অসুস্থতা পেটে ব্যাথা নিয়ে পরীক্ষা দিয়েও থৈবি স্কুলের সেরা।
মাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ হতেই মেয়েকে নিয়ে ভেলোর ছুটেছিলেন পেশায় হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক বাবা বিবেকানন্দ মুখোপাধ্যায় ও গৃদবধূ মা পিউ মুখোপাধ্যায়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা ও পরীক্ষার পরে চিকিৎসকরা জানান থৈবির লিভার ট্রান্সপ্লান্ট করতে হবে। তার জন্য খরচ হবে ১ কোটি টাকা। এই কথা জানতে পেরে এগিয়ে আসে থৈবির স্কুল। পাশে দাঁড়ায় গোটা শহর। স্যোশাল মিডিয়াও আবেদন জানানো হয়। সেই আবেদনেও সাড়া দেন বহু মানুষ। চিকিৎসার জন্য আর্থিক সাহায্য পাওয়া যায় সবমিলিয়ে প্রায় ৪৫ লক্ষ টাকা। কিন্তু সব চেষ্টা শেষ পর্যন্ত বিফলে যায়। বাঁচানো যায়নি থৈবিকে। ভিন রাজ্যের হাসপাতালে চিকিৎসা চলাকালীন গত ১৬ এপ্রিল মৃত্যু হয় থৈবির।
জানা গেছে স্কুলের বরাবর কৃতী ছাত্রী থৈবি। উমারানি গড়াই মহিলা কল্যাণ স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা বা টিচার ইনচার্জ পাপড়ি বন্দোপাধ্যায় সহ অন্যান্য শিক্ষিকারাও এদিন থৈবির রেজাল্ট দেখে রীতিমতো শোকাহত। তাঁরা জানান সুস্থ থাকলে থৈবি রাজ্যের সেরা তালিকায় যে জায়গা করে নিত সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই।
মা-বাবা,পরিজন, পড়শি, বন্ধু -বান্ধব, শিক্ষক-শিক্ষিকা আজ সকলের মুখে মুখে শুধু থৈবির কথা। এই তো মাত্র কটা দিন আগেও ছিল সবার মধ্যে আলো হয়ে। হঠাৎ করে থৈবির এই হারিয়ে যাওয়া মেনে নিতে পারছেন না কেউই।





