eaibanglai
Homeএই বাংলায়তৃণমূল নেতার দাদাগিরি! রুখে দাঁড়াল তৃণমূল পরিচালিত পুরবোর্ড

তৃণমূল নেতার দাদাগিরি! রুখে দাঁড়াল তৃণমূল পরিচালিত পুরবোর্ড

সন্তোষ কুমার মণ্ডল,আসানসোলঃ– আসানসোলে তৃণমূল নেতার দাদাগিরি। পুরনিগমের লিজ দেওয়া দোকান জবরদখলের অভিযোগ। তালা ভেঙে দোকান লিজ হোল্ডারের হাতে তুলে দিল খোদ তৃণমূল পরিচালিত আসানসোল পুরনিগম।

ঘটনা প্রসঙ্গতে জানা যায় আসানসোলের হটন রোড মোড় এলাকায় দুটি দোকান ঘর ২০১৬ সালে লিজে দেওয়া হয় আসানসোলে গ্রামের বাসিন্দা চন্দ্রা রায়কে। কিন্তু অভিযোগ সেই দোকান ঘর জবরদখল করে তালা লাগিয়ে দেয় আসানসোলের তৃণমূল শ্রমিক নেতা রাজু আলুওয়ালিয়া। বৃহস্পতিবারা পুরনিগমের আধিকারিকরা ওই দোকান ঘরের দখল নিয়ে লিজ হোল্ডারের হাতে তুলে দেয়। লিজ হোল্ডার চন্দ্রা রায়ের দাদা নিত্যানন্দ রায় এদিন সাংবাদিকদের সামনে দোকান ঘর লিজের নথি দেখিয়ে দাবি করেন ২০১৬ সাল থেকে তার এই দোকান ঘর লিজ নেওয়া রয়েছে। কিন্তু তৃণমূল নেতা দাদাগিরি করে ওই দোকান জবরদখল করে দলীয় কার্যালয় করার হুমকি দিয়েছিলেন।

যদিও অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা রাজু আলুওয়ালিয়া তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করে পাল্টা আসানসোল পুরনিগমের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তোলেন। তিনি দাবি করেন ওই জায়গা পিডব্লুডি বা পূর্ত দপ্তরের ছিল। ওই জায়গায় তাঁরা, দলীয় কর্মীরা বসতেন। জিতেন্দ্র তিওয়ারি শহরের মেয়র থাকাকালিন ওই জায়গায় পুরনিগমের স্টোর হাউস তৈরি করেন, সাফাই কাজের জিনিসপত্র রাখার জন্য। কিন্তু পরে দুর্নীতি করে ওই ঘরদুটি জিতেন্দ্র তিওয়ারির পরিচিত এক ঠিকাদারকে লিজে দেওয়া হয়। তিনি প্রশ্ন তোলেন ওই ঘর কীভাবে লিজে দেওয়া হল? তাঁর অভিযোগ একদিকে ফুটপাথ উচ্ছেদ করে হকার ও ব্যবসায়ীদের তুলে দেওয়া হচ্ছে, তাদের কোনো পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে না। অন্যদিকে জমি জবরদখল করে ঘর বানিয়ে লিজ দিয়ে তা বৈধ করে দেওয়া হচ্ছে, এটা কী ধরণের নীতি। বর্তমান পুর বোর্ডের বিরুদ্ধে তোপ দেগে তিনি বলেন, আগের বোর্ডের দুর্নীতির প্রতিকার না করে উল্টে সেই দুর্নীতিকেই এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে বর্তমান বোর্ড। তার মানে “চোরে চোরে মাসতুতো ভাই”!

অন্যদিকে শহরের মেয়র বিধান উপাধ্যায় জানান যিনি দোকান লিজ নিয়েছিলেন তিনি দোকান জবরদখলের অভিযোগ করেছিলেন। সেই অভিযোগের ভিত্তেতে থানায় অভিযোগ জানিয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কিন্তু জবদখলকারী যে খোদ শাসক দলেরই নেতা! এই মন্তব্য শুনে মেয়র সাফ জানান, “নেতা ফেতা জানিনা। যে বা যারাই অন্যায় করছে তা অনুচিত। মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বার বার দুর্নীতি বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে বার্তা দিয়েছেন। আইনত যা সঠিক সেই মতোই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”

এদিকে বিষয়টি নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্ব। বিজেপি বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পাল সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীকে আক্রমণ করে বলেন, মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁর দল দখলদারীর রাজনীতিই করেন। যেটাই পাবে দখল করে নাও। সরকারি জমি, নদীর বালি, পাথর, গাছ, মহিলাদের ইজ্জত সব দখল করে নাও। তাঁর দাবি এটাই তো পশ্চিমবঙ্গের আসল চিত্র!

এই ঘটনা আসানসোলের সাধারণ মানুষের মধ্যেও ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। স্থানীয়রা প্রশ্ন তুলছেন, পৌরনিগমের দোকান বরাদ্দ প্রক্রিয়ায় রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ এবং সিন্ডিকেট রাজের আধিপত্য কতটা গ্রহণযোগ্য।

প্রসঙ্গত মাস খানেক আগেই নবান্নে বৈঠক করে দুর্নীতি দমনে কড়া বার্তা দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি সাফ জানিয়েছিলেন, যারা দুর্নীতি করবেন, টাকা হাতাবেন তাদের কাউকে বাঁচানো হবে না। তার পর পশ্চিম বর্ধমান জেলা জুড়ে দুর্নীতির অভিযোগে একাধিক কর্তা, ব্যক্তি, ব্যবসায়ী এমনকি তৃণমূল নেতাও গ্রেফতার হন। সেই ধারা অব্যাহত রেখেই এদিন তৃণমূল নেতার জবরদখল করা দোকানঘর পুরনিগম দখলমুক্ত করার উদ্যোগ নিল বলে মনে করছেন শহরের ওয়াকিবহাল মহল।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments