সন্তোষ কুমার মণ্ডল,আসানসোলঃ- শেষ রক্ষা হল না। প্রায় ১৫ ঘন্টার উদ্ধার কার্যর চেষ্টা ব্যার্থ হল। অবৈধ খনির গর্তে পড়ে মৃত্যু হল যুবকের। ঘটনা পশ্চিম বর্ধমান জেলার আসানসোলের জামুরিয়া থানার কুনুস্তোরিয়া এরিয়ার নর্থ শিয়ারসোল খনি এলাকার।
প্রসঙ্গত বৃহস্পতিবার ভোরে নর্থ শিয়ারসোল খোলা মুখ খনির অদূরে একিট অবৈধ পরিত্য়ক্ত খনির গর্তে পড়ে যায় রানিগঞ্জ থানার মহাবীর কোলিয়ারির যাদব পাড়ার বাসিন্দা বছর ৩৮ র ভীষম রায়। রাজু রায় নামে ওই এলাকার এক যুবক দাবি করেন, তিনি ও ভীষণ একই সাথে ওই রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন। সেই সময় সিআইএসএফ তাদের তাড়া করলে তিনি পালিয়ে যান। কিন্তু ভীষম খনির গর্তে পড়ে যায়। বিষয়টি জানাজানি হতেই এলাকায় চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে। পাশাপাশি খবর পেয়ে এলাকায় পৌঁছয় পুলিশ ও দমকল ও খনির উদ্ধারকারী দল। শুরু হয় উদ্ধার কাজ। কিন্তু এলাকাটি খুবই বিপজ্জনক ও গভীর হওয়ায় উদ্ধারকার্যে সমস্যা হয়।। এদিন সন্ধ্যা ছটা পর্যন্ত উদ্ধারকারী দল নানা চেষ্টা করেও যুবকের খোঁজ পায়নি। তবে তার আগে এদিন দুপুর তিনটে নাগাদ স্থানীয় গ্রামের বাসিন্দা বিপদ গোপ নামে এক যুবক ওই কয়লাখনির ১০০ ফুট গভীরে নেমে পড়ে এবং সে দেখে একটা সাইকেল ওই খনির ভেতরে একটি জায়গায় আটকে রয়েছে। সেই সাইকেলটিকে পরে সে দড়ি দিয়ে উপরে তুলে আনে। উপরে উঠে এসে সে জানায় নীচে প্রচুর পরিমাণ জল রয়েছে । শেষ পর্যন্ত সন্ধ্যা সাতটা নাগাদ শেখ সাজ্জাদ নামে স্থানীয় এক যুবক সকলের অনুমতি নিয়ে এবং অতীত অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে প্রায় ১২০ ফুট গভীরে ওই খনিতে নামে। সে সঙ্গে নিয়ে যায় বেশ কয়েকটি মুখওয়ালা লোহার কাঁটা। গর্তে নেমে জলের মধ্যে ওই লোহার কাঁটা দিয়ে ঘাটতে ঘাটতে যুবক ওই কাটায় আটকে যায়। তারপর দড়ি দিয়ে ওই যুবককে তুলে আনা হলে সেখানে উপস্থইত এক চিকিৎসক তাকে পরীক্ষা করে মৃত বলে ঘোষণা করেন। পরে পুলিশ দেহটি ময়নাতদন্তের জন্য জেলা হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়।
এদিন ইসিএলের মাইনস রেসকিউয়ের টিম যুবকের খোঁজ করতে গিয়ে খনির নীচ থেকে দুটি লোহার সিড়ি উদ্ধার করে উপরে নিয়ে আসে। মনে করা হচ্ছে, কয়লা চোরেরা সম্ভবত ওই দুটি সিঁড়ি দিয়ে কয়লা কাটতে ওই গর্তে নামতো ।
অন্যদিকে, ওই ঘটনার পরই ক্ষোভে ফেটে পড়েন স্থানীয়রা। ঘটনার জন্য ইসিএল ও স্থানীয় প্রশাসনকে দায়ী করে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন তারা। বন্ধ করে দেওয়া হয় ওই এলাকা থেকে ১০০ মিটার দূরে থাকা নর্থ শিয়ারসোল খোলা মুখ খনির উৎপাদন। স্থানীয়দের অভিযোগ এলাকায় একাধিক অবৈধ ও পরিত্যক্ত খনি গর্ত থাকলেও তা ভরাট করা বা ঘিরে দেওয়ার কোনো ব্যবস্থাই করে না ইসিএল বা স্থানীয় প্রশাসন। ফলে পুরো এলাকাটি বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে। এর আগে খনির গর্তে পড়ে এলাকার গরু ছাগলেরও মৃত্যু হয়েছে। বিষয়টি ইসিএল ও প্রশাসনকে জানিয়েও কোনো কাজ হয়নি।
যদিও এদিন ইসিএলের এক আধিকারিক বলেন, “অবৈধ খনি গুলি ইসিএল ভরাট করার ব্যবস্থা করে। বহু অবৈধ খনি ইতিমধ্যে ভরাট করা হয়েছে। কিন্তু তার পরেও মাঝেমধ্যে আবার কয়লা চোরেরা তা খুলে ফেলে। এই ঘটনার ক্ষেত্রে ঠিক কি হয়েছে তা খোঁজ নিয়ে দেখা হবে।”
অন্যদিকে স্থানীয়দের একাংশের দাবি এদিন যে গর্তে পড়ে যুবকের মৃত্যু হয়, সেটি প্রায় ১০-১২ বছরের পুরনো।