জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী,আউসগ্রামঃ- মূলধারার রাজনৈতিক দলগুলোর ডাকা বাংলা বন্ধের পরিচিত দৃশ্য হলো – জোর করে দোকানপাট বন্ধ করা, যাত্রীবাহী বাস আটকে ভাঙচুর করা, মরণাপন্ন রুগী বহনকারী অ্যাম্বুলেন্স বা চারচাকার গাড়ি আটকে রেখে পৈশাচিক উল্লাসে ফেটে পড়া ইত্যাদি। কিন্তু এইসব পরিচিত দৃশ্যের কোনোটাই দেখা গেলনা বাংলা বন্ধে।
কুড়মিদের ‘এসটি’ হিসাবে স্বীকৃতি দিতে হবে – এই দাবিতে কুড়মি সম্প্রদায়ের মানুষরা কুড়মি অধ্যুষিত পুরুলিয়ার বিভিন্ন প্রান্তে বেশ কয়েকদিন ধরে রেল ও রাস্তা অবরোধ সহ স্থানীয়ভাবে ‘বন্ধ’ পালন করে। তাদের বক্তব্য – তারাই আদি আদিবাসী। অন্যদিকে দীর্ঘদিন ধরে সংরক্ষণের আওতায় থাকা আদিবাসীদের আশঙ্কা যদি কুড়মিদের আদিবাসী হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়া তাহলে তাদের অধিকার সঙ্কুচিত হবে। এরপর হয়তো অন্যান্য সম্প্রদায়ের মানুষরাও একই দাবি তুলবে।
এই আশঙ্কায় অ-আদিবাসীদের বিশেষ করে কুড়মিদের অনৈতিকভাবে এসটি করনের ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে ভারত জাকাত মাঝি পরগণা মহলের ডাকে ‘ইউনাইটেড ফোরাম অফ অল আদিবাসী’দের ছাব্বিশটি সংগঠন ৮ ই জুন সকাল ৬ টা থেকে বারো ঘণ্টা বাংলা বন্ধের ডাক দেয়। তারই অঙ্গ হিসাবে ভারত জাকাত মাঞ্জ্হি পারগানা – আউসগ্রাম ১ নং ব্লক কমিটি ব্যস্ত এনএইচ ২বি রোডের বলগোণা মোড়ে রীতিমত মাথার উপর ছাউনি করে শান্তিপূর্ণভাবে রাস্তা অবরোধ করে। তীব্র গরমকে উপেক্ষা করে তাদের ঐতিহ্যবাহী তীর-ধনুক, হাসুয়া প্রভৃতি নিয়ে আউসগ্রাম, মঙ্গলকোট, ভাতার প্রভৃতি ব্লক থেকে কয়েকশ আদিবাসী সেখানে জমায়েত হয়। বেলা যত বাড়তে থাকে ততই সংখ্যাটা বাড়তে থাকে।
বন্ধকে কেন্দ্র করে স্বাভাবিক ভাবেই প্রত্যেকের মনে একটা আশঙ্কা ছিল। কিন্তু মূল স্রোতের রাজনৈতিক দলগুলোর বিপরীত মেরুতে দাঁড়িয়ে মানবিকতা বোধের পরিচয় দেয় জমায়েতে সামিল হওয়া আদিবাসীরা। সমস্ত জরুরি পরিষেবা প্রদানকারী গাড়িগুলি তারা নির্বিঘ্নে পার করিয়ে দেয়। এমনকি গৃহশিক্ষকের কাছে পড়তে যাওয়া ছাত্রছাত্রীদের দিকেও তারা সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়। যদিও কোনো যাত্রীবাহী বাস বা পণ্যবাহী গাড়ি চলাচল করেনি।
বন্ধকে কেন্দ্র করে যাতে কোনোরকম অপ্রীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি না হয় তার জন্য পুলিশ প্রশাসন সতর্ক ছিল। কয়েকটি ক্ষেত্রে কলকাতাগামী ব্যক্তিগত গাড়িগুলির রুট পরিবর্তন করা হয়। পূর্ব ঘোষিত সময় অনুযায়ী ৬ টা নাগাদ শান্তিপূর্ণভাবে ‘বন্ধ’ শেষ হয়।
আদিবাসী সংগঠনের অন্যতম কর্মকর্তা সুনীল কিস্কু বললেন – আমাদের লক্ষ্য শান্তিপূর্ণভাবে বন্ধ পালন করা।সহযোদ্ধাদের কাছে তার অনুরোধ – হিংসা নয়, আমরা আমাদের সহজাত সহানুভূতি ও মানবিকতাবোধকে কাজে লাগিয়ে এই বন্ধ পালন করব।