জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী,আউসগ্রামঃ- একদিকে মানুষের নির্লজ্জ লোভ ও অন্যদিকে বর্বর অজ্ঞ উল্লাস, একদিকে প্রাকৃতিক কারণে দাবানল ও অন্যদিকে ইচ্ছাকৃত আগুন লাগিয়ে দেওয়া – সবক্ষেত্রে ফলাফল এক। আমাজন থেকে শুরু করে অযোধ্যা পাহাড়ের বনভূমি অতিক্রম করে আউসগ্রামের বিখ্যাত জঙ্গল মহল – সর্বত্র একই দৃশ্য চোখে পড়ে – দাউদাউ করে জ্বলছে আগুন, পুড়ছে বনের অসহায় পশুপাখি, দূষিত হচ্ছে পরিবেশ, নষ্ট হচ্ছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। শোনা যায় আমাজন বা অযোধ্যা পাহাড়ের বনভূমির দিকে নজর পড়েছে বিভিন্ন কর্পোরেট সেক্টারের যাদের অভিধানে লাভ ছাড়া অন্য কোনো শব্দ খুব একটা গুরুত্ব পায়না।
কিন্তু আদিবাসী অধ্যুষিত আউসগ্রামের বিষয়টি সম্পূর্ণ আলাদা। এখানে একদল লোভী রাজনৈতিক নেতা এবং বনদপ্তরের একাংশ নাকি বেআইনিভাবে জঙ্গলের গাছ কেটে বিক্রি করে দিলেও আপাতত অন্য কোনো গল্প শোনা যায়নি। তারপরও মূলত অজ্ঞতার জন্য মাঝে মাঝে জঙ্গলে আগুন জ্বলতে দ্যাখা যাচ্ছে।
এবার সেইসব মানুষকে সচেতন করতে এগিয়ে এলো আউসগ্রাম ২ নং ব্লকের লবণধার গ্রামের অন্নপূর্ণা ওয়েলফেয়ার এ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা। সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয় দুই বর্ধমানের বনদপ্তর ও শান্তিনিকেতনের প্রকৃতিপ্রেমী পড়ুয়ারা। সবার মিলিত প্রয়াসে ২৫ শে ফেব্রুয়ারি ত্রিশ জনের একটি দল সাইকেল চেপে শুরু করে সচেতনতামূলক প্রচার।
যাত্রা শুরু হয় শান্তির আশ্রম রবীন্দ্রনাথের শান্তিনিকেতনের কলাভবন থেকে। সঙ্গে ছিল বনদপ্তরের প্রচারের গাড়ি। একে একে র্যালি আউসগ্রামের জঙ্গল অধ্যুষিত গ্রামগুলি প্রদক্ষিণ করে। চলার পথে তারা জঙ্গলে আগুন না লাগানোর জন্য গ্রামবাসীদের কাছে আকুল আবেদন করে। জানা যাচ্ছে দলটি আপাতত প্রায় সত্তর কিলোমিটার পথ অতিক্রম করেছে এবং আগামীকাল কলাভবনে যাত্রাপথ শেষ করবে।
বেশ কয়েকজন আদিবাসীর বক্তব্য – এই ধরনের সচেতনতামূলক প্রচার জঙ্গলের পক্ষে উপকারী। আশাকরি আগামীদিনে আমরা এই বিষয়ে আরও বেশি সচেতন থাকব। রক্ষা করব আমাদের পরিচিত সবুজ পরিবেশকে।
অন্যদিকে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার পক্ষ থেকে কালোসোনা বাবু বললেন- আমরা মোটামুটি দীর্ঘদিন ধরেই সচেতনতামূলক প্রচারে থাকি। কিন্তু এই ধরনের প্রচার এই প্রথম করলাম। আমাদের লক্ষ্য সবুজ প্রকৃতির কোলে গড়ে ওঠা আমাদের এলাকাকে রক্ষা করা। আশাকরি আমাদের এই প্রচেষ্টা সফল হবে।
প্রসঙ্গত দীর্ঘদিন ধরে অন্নপূর্ণা ওয়েলফেয়ার এ্যাসোসিয়েশন শুধু সচেতনতামূলক প্রচার করছেনা, তাদের সৌজন্যে লবণধার গ্রামটি সুন্দরভাবে সেজে উঠেছে। আগামীদিনে গ্রামটি হয়ে উঠবে পর্যটকদের গন্তব্যস্থল।