eaibanglai
Homeএই বাংলায়জৈব সার ব্যবহার সম্পর্কে সচেতনতামূলক আলোচনা হলো আউসগ্রামে

জৈব সার ব্যবহার সম্পর্কে সচেতনতামূলক আলোচনা হলো আউসগ্রামে

জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী,আউসগ্রামঃ- একদিকে কৃষিতে উৎপাদন বৃদ্ধি এবং উল্টোদিকে স্বাস্থ্য বিপত্তি – দুয়ের যাঁতাকলে পড়ে চরম সংকটের মুখে মানব সভ্যতা। অতিরিক্ত উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে যেদিন থেকে কৃষিতে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার শুরু হয়েছে সেদিন থেকেই এই বিপদ শুরু হয়েছে। উৎপাদন বৃদ্ধি হয়েছে ঠিকই কিন্তু সঙ্গে যে চরম বিপদ ঘনিয়ে আসছে সেটা মানুষ ভাবেনি।

রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহারের সঙ্গে সঙ্গে মাটিতে বসবাসকারী কৃষির পক্ষে উপকারী অণুজীবগুলো ধ্বংস হচ্ছে। নষ্ট হচ্ছে মাটির স্বাভাবিক উর্বরতা শক্তি। অথচ এই মাটি হলো কৃষকের কাছে ‘মা’ স্বরূপ।

পাশাপাশি কীটনাশক সমৃদ্ধ সব্জি খাওয়ার ফলে আমাদের শরীরের স্বাভাবিক প্রতিরক্ষামূলক ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সহজেই আমরা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছি। করোনার সময় সেটা আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে।

বিষয়টি নিয়ে যথেষ্ট চিন্তিত বিশ্বের সমগ্র দেশের কৃষিবিজ্ঞানীরা। রাসায়নিক সার বা কীটনাশকের পরিবর্তে বিকল্প সার ব্যবহার করে কিভাবে উৎপাদন বৃদ্ধি করা যায় সেটা নিয়ে নতুন করে শুরু হয়েছে ভাবনা চিন্তা। তারই ফলশ্রুতি হিসাবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে জৈব সারের ব্যবহারের উপর বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এমনকি কী যেসব দেশের হাত ধরে রাসায়নিক সারের উৎপত্তি তারাও একই ভাবনার পথিক। ইতিমধ্যে আমাদের দেশে সিকিম রাজ্য সম্পূর্ণ রাসায়নিক সার মুক্ত।

রাসায়নিক সার মুক্ত কৃষিকার্য করব ভাবলেই দীর্ঘদিনের পুরনো অভ্যাস ত্যাগ করা সহজ নয়। এরজন্য যেমন কৃষকদের মধ্যে সচেতনতামূলক প্রচার দরকার তেমনি বিকল্প জৈব সারের দরকার। উৎপাদন যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। মাথায় রাখতে হবে লোকসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে কৃষি জমির পরিমাণ কমছে।

সবদিকেই লক্ষ্য রেখে এগিয়ে এসেছে বিভিন্ন সংস্থা। এরকমই একটি সংস্থা হলো ‘অন্নধাত্রী এগ্রিসলিউশন প্রাইভেট লিমিটেড’ নামে একটি বেসরকারি সংস্থা। এদের উদ্যোগে এলাকার কৃষকদের সচেতন করার লক্ষ্যে গত ২৩ শে নভেম্বর আউসগ্রামের ছোড়া বাজার এলাকায় একটি আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। কৃষকেরা যাতে সহজেই জৈব সার পায় তার জন্য ছোড়ায় একটি ‘কাউণ্টার’ চালু করা হয়।

প্রসঙ্গত রাজ্যকে রাসায়নিক সার মুক্ত করার লক্ষ্যে গত ছ’বছর ধরে রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় সংস্থাটি কাজ করে যাচ্ছে। সংস্থার দাবি তাদের নিজস্ব কারখানায় উৎপাদিত জৈব সার ব্যবহার করে কৃষি, সব্জি ও মৎস চাষ সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সাফল্য পাওয়া গেছে। তাদের আরও দাবি এরফলে কর্মসংস্থানেরও সুযোগ বৃদ্ধি পাবে।

আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন পদ্মশ্রী পুরস্কার প্রাপ্ত প্রাক্তন শিক্ষক সুজিত চ্যাটার্জ্জী, নারায়ণচন্দ্র বিশ্বাস, সন্তোষ সাউ, শুভঙ্কর সাহা, বিশিষ্ট সমাজসেবী ডাঃ, রবীন্দ্রনাথ বিশ্বাস সহ স্থানীয় অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তি ও কৃষকদের একাংশ। সংস্থার পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন সিএমডি আশীষ গুড়িয়া সহ একগুচ্ছ পদস্থ কর্মী।

আলোচনা সভায় সংস্থার পক্ষ থেকে বিশিষ্ট কৃষি গবেষিকা পৌলমী ভট্টাচার্য রাসায়নিক সারের কুফল ও জৈব সার ব্যবহারের সুবিধা সম্পর্কে সবিস্তারে আলোচনা করেন। তিনি বলেন – রাসায়নিক সার ব্যবহারের ফলে কৃষি জমির যেমন ক্ষতি হচ্ছে তেমনি আমাদের স্বাস্থ্যেরও ক্ষতি করছে। সুতরাং এবিষয়ে অবশ্যই সচেতন হতে হবে। আমাদের লক্ষ্য উৎপাদন মাত্রা ঠিক রেখে প্রতিবছর ২০-২৫℅ শতাংশ রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমিয়ে তার পরিবর্তে জৈব সার ব্যবহার করা এবং মোটামুটি ৫-৬ বছরের মধ্যে এই রাজ্যকে রাসায়নিক সার মুক্ত করা। তিনি আরও বলেন – জৈব সার ব্যবহারের ফলে বিঘা প্রতি খরচ যেমন দু’হাজার টাকা কমবে তেমনি উৎপাদনের ক্ষতি হবেনা।

কথা হচ্ছিল আমেরিকায় গবেষণারত বিশিষ্ট কৃষিবিজ্ঞানী ড. বিশ্বরূপ ঘোষের সঙ্গে। বাংলায় এই ধরনের উদ্যোগের কথা শুনে তিনি সংস্থাটির ভূয়সী প্রশংসা করেন ও সাফল্য কামনা করেন। তিনি বললেন – কৃষি জমির স্বাভাবিক উর্বরতা ও মানুষের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে হলে অবশ্যই রাসায়নিক সারের পরিবর্তে জৈব সারের ব্যবহারের দিকে নজর দিতে হবে। পাশাপাশি কৃষকদেরও কৃষি সম্পর্কে শিক্ষিত করে তুলতে হবে। তিনি আরও বলেন – একদিনে সাফল্য আসবে না। এরজন্য অন্তত ৫-৬ বছর ধৈর্য ধরতে হবে।

প্রসঙ্গত, কৃষিতে জৈব সার ব্যবহার বৃদ্ধির লক্ষ্যে কৃষক পরিবারের সন্তান ড. ঘোষ গত কয়েকবছর ধরে কাজ করে চলেছেন। ইতিমধ্যে তিনি নিজের জন্মভিটে কালনায় এরজন্য একটি অফিস গড়ে তুলেছেন। তাদের তৈরি ‘টিস্যু কালচার’ এর মাধ্যমে সৃষ্ট আলুর বীজ ব্যবহার করে বেশ কয়েকটি জেলার চাষীরা ব্যাপক উপকৃত হয়েছে।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments