জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী,আউসগ্রামঃ- অধিকাংশ রাজ্যবাসী যখন আলোর উৎসব দীপাবলীতে মেতে উঠেছে তখন বিষণ্নতা গ্রাস করেছে আউসগ্রামবাসীর একাংশকে। শীত আসন্ন। উত্তর দিক থেকে হালকা শীতল বাতাস বইতে শুরু করেছে। ওদিকে শীতের হাত থেকে বাঁচার জন্য নেই কোনো কম্বল। সবাই যখন আনন্দ করছে ওরা তখন দূরে বসে দীর্ঘশ্বাস ফেলছে। ওদের পক্ষে অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করা সম্ভব নয়। কারণ ওরা বিশেষভাবে চাহিদা সম্পন্ন। কোনোরকমে যদি একটা সেলাই ম্যাশিন পাওয়া যেত তাহলে জামা-কাপড় সেলাই করে সংসারের অভাব একটু হলেও মেটানো যেত। কেনার সামর্থ্য ওদের নাই। এরকম হাজার সমস্যা ওদের ঘিরে আছে।
ওদের সৌভাগ্য বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের জন্য আউসগ্রাম থানায় আছেন আইসি সহ একদল মানবিক পুলিশ আধিকারিক। আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ছাড়াও বারবার মানুষের পাশে তারা দাঁড়িয়েছেন। নিজেদের কর্মের মাধ্যমে হয়ে উঠেছেন প্রকৃত সমাজবন্ধু। এবারও তার অন্যথা ঘটলনা।
পূর্ব বর্ধমান জেলা পুলিশের উদ্যোগে ও আউসগ্রাম থানার সহযোগিতায় ১৪ ই নভেম্বর থানা চত্বরে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এলাকার দুস্থদের হাতে তুলে দেওয়া হয় কম্বল, লুঙ্গি, শাড়ি, ২ টি সেলাই ম্যাশিন ও ৩ টি ট্রাই সাইকেল। এগুলি পেয়ে প্রত্যেকেই খুব খুশি।
বস্ত্র ও আনুষঙ্গিক দ্রব্যাদি বিতরণ উপলক্ষ্যে একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে স্থানীয় শিল্পীরা নৃত্য, সঙ্গীত, আবৃত্তি প্রভৃতি পরিবেশন করে। দুই ক্ষুদের আবৃত্তি পরিবেশন দর্শকদের অবাক করে। বাচ্চাদের জন্য ছিল অঙ্কন প্রতিযোগিতা। ‘সেফ ড্রাইভ সেভ লাইফ’ এর উপর ভিত্তি করে পরিবেশিত পথনাটিকা ‘আয়ুর ঘরে জ্বলুক আলো’ দর্শকদের মুগ্ধ করে। প্রত্যেকের অভিনয় ছিল অসাধারণ। উদ্যোক্তাদের পক্ষ থেকে অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী প্রত্যেকের হাতে তুলে দেওয়া হয় স্কুল ব্যাগ।
এর আগে আউসগ্রাম থানার পক্ষ থেকে উপস্থিত অতিথিদের যথাযোগ্য মর্যাদা সহকারে বরণ করে নেওয়া হয়। প্রত্যেকের গলায় পড়িয়ে দেওয়া হয় উত্তরীয়, হাতে তুলে দেওয়া হয় মেমেণ্টো ও ফুলের তোড়া এবং বুকে এঁটে দেওয়া হয় ব্যাজ। এমনকি উপস্থিত সাংবাদিকদেরও বরণ করে নেওয়া হয়।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় বিধায়ক অভেদানন্দ থাণ্ডার, ডিএসপি (ডি এণ্ড টি) বীরেন্দ্র কুমার পাঠক, গুসকরা পুলিশ ফাঁড়ির ওসি নীতু সিং, ছোড়া ফাঁড়ির ওসি পঙ্কজ কুমার নস্কর, গুসকরা পুরসভার কাউন্সিলর সুব্রত শ্যাম ও চেয়ারম্যান কুশল মুখার্জ্জী এবং আউসগ্রাম থানার আইসি আব্দুর রব খান সহ থানার সমস্ত পুলিশ আধিকারিক ও সিভিক ভলাণ্টিয়ার এবং এলাকার বহু বিশিষ্ট মানুষ।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত বিশিষ্ট ব্যক্তিদের প্রত্যেকেই আউসগ্রাম থানার এই উদ্যোগের ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং আগামী দিনেও এই ভূমিকায় তাদের দেখার আশা করেন।
আউসগ্রাম থানার এই উদ্যোগের ভূয়সী প্রশংসা করে বিধায়ক বলেন – যেভাবে জঙ্গলমহল এলাকার ছেলেমেয়েদের মধ্যে সাংস্কৃতিক চর্চা বাড়ছে তাতে আমরা গর্বিত। আশাকরি এদের মধ্যে থেকেই অনেক ভাল ভাল শিল্পী উঠে আসবে। তিনি উপস্থিত প্রত্যেককে দীপাবলীর শুভেচ্ছা জানান।