জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী,আউসগ্রামঃ- একরাশ অস্বস্তি ও প্রশ্নকে সামনে রেখে গত ২১ শে মার্চ স্থানীয় বিধায়ক অভেদানন্দ থাণ্ডারের নেতৃত্বে আউসগ্রাম-২ নং ব্লকের অমরপুর অঞ্চলে পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রাক্কালে তৃণমূলের জনসংযোগের নতুন কর্মসূচি ‘দিদির সুরক্ষা কবজ’ পালিত হয়। বিষ্ণুপুর গ্রামের বিখ্যাত দুর্গামন্দিরে পুজো দিয়ে শুরু হয় এই জনসংযোগ কর্মসূচি।
দুর্গামন্দিরে পুজো দেওয়ার পর বিধায়ক ও তার সঙ্গীরা স্থানীয় গেঁড়াই উচ্চ বিদ্যালয়ে উপস্থিত হন। সেখানে বিদ্যালয়ের বিভিন্ন সুবিধা-অসুবিধার কথা জানার জন্য প্রধান শিক্ষক সহ অন্যান্যদের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ কথা বলেন এবং সমস্যাগুলি ‘নোট’ করেন। এরপর তারা আদুরিয়া স্বাস্থ্যকেন্দ্র পরিদর্শন করেন এবং ডাক্তার ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রের কর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন। একইসঙ্গে বেশ কয়েকজন রুগীর সঙ্গেও তাদের কথা বলতে দ্যাখ্যা যায়। সেখান থেকে তারা অমরপুর পঞ্চায়েত অফিসে গিয়ে প্রধান ও পঞ্চায়েত সদস্যদের সঙ্গে বিভিন্ন প্রকল্প ও উন্নয়ন নিয়ে আলোচনা করেন। সুযোগ পেয়ে স্থানীয় মানুষরা এলাকার সমস্যার কথা তাদের কাছে তুলে ধরেন। অবশেষে ভুঁয়েরা হাটতলায় এলাকার পাঁচজন গুণী ব্যক্তিকে সংবর্ধনার মধ্য দিয়ে কর্মসূচি শেষ হয়।
তবে এই কর্মসূচি অন্য এক জায়গায় অভিনবত্বের দাবি রাখে। স্থানীয় বাসিন্দাদের মনোরঞ্জনের জন্য মহিলা ঢাকি, মহিলা ব্যান্ডপার্টি, মহিলা নৃত্য ও ছৌ নাচের আয়োজন ছিল। স্বাভাবিকভাবেই এই কর্মসূচিকে ঘিরে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে ব্যাপক উন্মাদনা লক্ষ্য করা যায়।
বিধায়ক ছাড়াও কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন জেলা পরিষদের সদস্যা কাকলি রাজা, অমরপুর পঞ্চায়েতের প্রধান এবাদত সেখ, অমরপুর অঞ্চল সভাপতি গোলাম মোল্লা, আউশগ্রাম-২ নং ব্লকের প্রাক্তন কার্যকরী সভাপতি শেখ আব্দুল লালন সহ অন্যান্যরা। কিন্তু অদ্ভুতভাবে অনুপস্থিত ছিলেন ব্লক সভাপতি রামকৃষ্ণ ঘোষ সহ ব্লকের অন্যান্য পদাধিকারীরা। এমনকি ব্লক মহিলা নেতৃত্ব ও শ্রমিক সংগঠনের নেতৃত্বও অনুপস্থিত ছিল। তবে কর্মসূচিতে মহিলাদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মত।
এই অনুপস্থিতিকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছে বিতর্ক। ওয়াকিবহাল মহল এরমধ্যে দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের ইঙ্গিত পাচ্ছে। তাদের মতে – মনে রাখতে হবে এই গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জন্যই আউসগ্রাম-২ নং ব্লক আড়াআড়ি দুই ভাগে বিভক্ত। যারজন্য দুয়ারে পঞ্চায়েত ভোট কড়া নাড়তে থাকলেও এখনো পর্যন্ত ব্লক কমিটি গঠিত হয়নি। তাছাড়া বিগত বিধানসভা ভোটে আদিবাসী অধ্যুষিত এই ব্লকে বুথ হিসাবে তৃণমূল সুস্পষ্ট ভাবে চারটি অঞ্চলে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের মধ্যে পড়ে এবং তিনটিতে পেছিয়ে ছিল। এখন দ্যাখার এই গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব পঞ্চায়েতে তৃণমূলের অন্য কোনো বিপদ ডেকে আনে কিনা।
গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কথা অস্বীকার করে ব্লক সভাপতি রামকৃষ্ণ ঘোষ বললেন – বাবার অসুস্থতার জন্য তার পক্ষে কর্মসূচিতে উপস্থিত থাকা সম্ভব হয়নি। কিন্তু অন্যান্যরা সরাসরি বলেন তারা আমন্ত্রণ পাননি এবং কর্মসূচির কথা জানতেনও না।
অন্যদিকে বিধায়কের বক্তব্য – এটা দলীয় কর্মসূচি, কোনো ব্যক্তির নয়। দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক ব্যানার্জ্জীর নির্দেশে এই কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। সুতরাং একে সফল করার দায়িত্ব সকলের। তিনি আরও বলেন – তৃণমূল একটি বৃহৎ দল। ছোটখাট মনোমালিন্য থাকতেই পারে। তার অর্থ এই নয় বিরোধীরা এরজন্য পঞ্চায়েত নির্বাচনে বাড়তি কোনো সুবিধা পাবে। ব্যক্তি নয় এখানে উন্নয়নই শেষ কথা বলবে।