জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী,আউসগ্রামঃ- এক সময় বাংলা এবং ফুটবল ছিল সমার্থক। বিকেল হলেই খেলার মাঠে দ্যাখা যেত ছেলেদের ভিড়। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে একাধিক ফুটবল টিমকে নিয়ে একের পর এক ‘রানিং’ টুর্নামেন্ট বা লীগ ফুটবল অনুষ্ঠিত হতো। তারপর একদিন সেসব অতীত হয়ে গ্যালো। বুকে একরাশ মরুভূমির তৃষ্ণা নিয়ে শূন্য হৃদয়ে পড়ে রইল খেলার মাঠগুলো। কারণ খেলার মাঠের প্রাণ ফুটবলাররাই নাই। তার মাঝেও স্হানীয় ফুটবলারদের উৎসাহ দেওয়ার জন্য গত সাত বছর ধরে, যদিও এটি প্রতিযোগিতার পঞ্চাশ-তম বছর, এলাকার মানুষের কাছে ‘দাতা’ নামে পরিচিত বিশিষ্ট ব্যবসায়ী লালন সেখ এবং স্হানীয় বিধায়ক অভেদানন্দ থাণ্ডারের উদ্যোগে গেঁড়াই ফুটবল মাঠে আয়োজিত হয়ে চলেছে মরহুম হালিম-হালিমা স্মৃতি ফুটবল প্রতিযোগিতা। পরিচালনায় এসএমডি ও আউসগ্রাম বিধানসভা তৃণমূল কংগ্রেস।
২ রা ডিসেম্বর ছিল প্রায় একমাস ব্যাপী চলে আসা ফুটবল টুর্নামেন্টের প্রথম সেমিফাইনাল। অংশগ্রহণ করে বর্ধমানের দুটি দল – টাইগার বিনোদিনী রাইস মিল ও বর্ধমান টিম রেনেশাঁ। উভয় দলে একাধিক নাইজেরিয়ার ফুটবলার থাকলেও খেলা কখনোই প্রত্যাশিত উচ্চমানে পৌঁছায়নি। যদিও উভয় দলই গোল করার একাধিক সহজ সুযোগ পায়। কিন্তু স্ট্রাইকারদের ব্যর্থতার জন্য নির্ধারিত সময়ে খেলার ফলাফল ১-১ থাকে। টাইব্রেকারে রেনেশাঁ ৪-৩ গোলে টাইগার বিনোদিনী রাইস মিলকে পরাজিত করে ফাইনালে ওঠে। আগামী রবিবার ফাইনালে তাদের প্রতিপক্ষ কে হবে তা জানা যাবে আগামীকাল দ্বিতীয় সেমিফাইনালের পর যেখানে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে দুর্গাপুর জঙ্গলমহল একাদশ ও জাগুলিপাড়া যুব একাদশ। জঙ্গলমহল এলাকায় আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে ভিড় ছিল প্রচুর। মহিলাদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মত।
খেলার আগে দর্শকদের জন্য বিনোদনের ব্যবস্হা ছিল। পুরুলিয়ার ছৌ নৃত্য, মহিলা ঢাকিদের ঢাক বাজানো, আদিবাসী নৃত্য – সবকিছুই ছিল বিনোদনের অঙ্গ।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন স্হানীয় বিধায়ক অভেদানন্দ থাণ্ডার, পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের সহ সভাধিপতি তথা তৃণমূলের রাজ্য মুখপাত্র দেবু টুডু , আউসগ্রাম থানার একাধিক পুলিশ আধিকারিক, আউসগ্রাম ২ নং ব্লকের ৭ টি অঞ্চলের দলীয় প্রধান সহ অন্যান্যরা।
বিধায়ক অভেদানন্দ থাণ্ডাল বললেন – আমাদের লক্ষ্য যুব সম্প্রদায়কে মাঠমুখী করা। এর মাধ্যমে ফুটবলে বাংলা তার অতীত ঐতিহ্য ফিরে পাবে। তিনি আরও বললেন – আউসগ্রাম বিধানসভার প্রতিটি অঞ্চলে ‘বিধায়ক কাপ’ জাতীয় ফুটবল টুর্নামেন্টের আয়োজন করার ইচ্ছে আছে। খুব শীঘ্রই প্রতিটি অঞ্চলের দলীয় পদাধিকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসব।
অন্যদিকে যার উদ্যোগে জঙ্গলমহল এলাকায় ফুটবলের এই রাজসূয় যজ্ঞ সেই ‘দাতা’ লালন বললেন – আমার লক্ষ্য মোবাইলে আসক্ত যুব সমাজকে খেলার মাঠে টেনে আনা। আশাকরা যায় আজকের এই উন্মাদনা দেখে আগামী দিনে তারা মাঠমুখী হবে। সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি আরও বলেন – খেলোয়ারদের উৎসাহ দেওয়ার জন্য আগামী দিনে কলকাতার কোনো বিখ্যাত কোচকে এনে এলাকার ছেলেদের জন্য কোচিংয়ের ব্যবস্হা করা হবে।