জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী,আউসগ্রামঃ- ২০১৮ এর জবরদস্তি ও বিতর্কিত পঞ্চায়েত ভোটের পর থেকেই কাটমানি, তোলাবাজী ও সিপিএমের ধাঁচে একশ্রেণির ‘তরমুজ’ ও ‘লাল’ তৃণমূলীদের লাগামহীন দাপটে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে বাংলার মানুষ। প্রথম সুযোগেই তার বহিঃপ্রকাশ ঘটে ২০১৯ এর লোকসভা ভোটে। রীতিমত বিপর্যয় ঘটে তৃণমূলের। পরিস্থিতি সামাল দিতে দলের পক্ষ থেকে ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোরকে পরামর্শদাতা হিসেবে নিয়োগ করা হলে প্রথমেই তিনি ‘দিদিকে বলো’ কর্মসূচি শুরু করেন। একরাশ প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও সেই কর্মসূচি যে সফল ছিল তার প্রমাণ ২০২১ এর বিধানসভা নির্বাচন।
শিক্ষক নিয়োগ ও আবাস যোজনা প্লাস সংক্রান্ত দুর্নীতির অভিযোগে আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে দল যে আগের থেকেও অনেকটাই ব্যাক ফুটে সেটা অভিজ্ঞ নেত্রী মমতার ব্যানার্জ্জীর দৃষ্টি এড়িয়ে যায়নি। তিনি ভালভাবেই জানেন এইসব অভিযোগ নিছক বিরোধীদের মনগড়া নয়, এর পেছনে সততা অনেকটাই আছে এবং প্রতিটি দুর্নীতির ক্ষেত্রে জড়িয়ে আছে এক শ্রেণির তৃণমূল প্রধান, উপ-প্রধান, অঞ্চল সভাপতি সহ অন্যান্য পদাধিকারীদের নাম। পঞ্চায়েত ভোটে দলের বিপর্যয় ঘটলে ফিরে আসার কোনো জায়গা থাকবে না। কারণ পঞ্চায়েতের মাধ্যমেই মানুষকে সবচেয়ে বেশি পরিষেবা দেওয়া যায়।
এইরকম প্রতিকূল পরিস্থিতিতে পঞ্চায়েত ভোটের আগে গ্রামে জনসংযোগ বাড়াতে শুরু হতে চলেছে ‘দিদির সুরক্ষা কবচ’। জানা যাচ্ছে আগামী ১১ ই জানুয়ারি থেকে শুরু হতে চলা ৬০ দিন ব্যাপী এই কর্মসূচিতে সাড়ে তিন লক্ষ ‘দিদির দূত’ পৌঁছে যাবে রাজ্যের প্রায় ২ কোটি পরিবারের ১০ কোটি মানুষের কাছে। লক্ষ্য লক্ষ্মীর ভাণ্ডার, কৃষক বন্ধু, সামাজিক সুরক্ষা যোজনা, মানবিক পেনশন, জয় বাংলা, বিধবা ভাতা, কন্যাশ্রী, স্বাস্থ্য সাথী, শিক্ষাশ্রী, স্টুডেন্টস ক্রেডিট কার্ড, খাদ্য সাথী, সবুজ সাথীর মত জনপ্রিয় প্রকল্পগুলির সুফল সাধারণ মানুষ পাচ্ছে কিনা এবং সেগুলো বর্তমানে কি অবস্থায় আছে সেই বিষয়ে খোঁজ নেওয়া। শুধু তাই নয় ‘দিদির দূত’রা বাড়ি বাড়ি ঘুরে ‘দিদির সুরক্ষা কবচ’ দেওয়া ক্যালেন্ডার ও স্টিকারও বিতরণ করবে। রাজ্য সরকারের প্রকল্পগুলির বিষয়ে যাতে কোনো রকমের সংশয় সাধারণ মানুষের মনে না থাকে তার জন্য চেষ্টার কোনও ক্রটি রাখছেনা তৃণমূল কংগ্রেস। রাজ্য নেতারা প্রত্যেকটি গ্রাম পঞ্চায়েত ও পৌর এলাকায় স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে জনসংযোগ সভাও করবেন।
আসন্ন পঞ্চায়েত ভোটকে সামনে রেখে গত ২ রা জানুয়ারি নজরুল মঞ্চের দলীয় বৈঠক থেকে এই নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। তারই অঙ্গ হিসাবে রাজ্য নেতৃত্বের নির্দেশে ৫ ই জানুয়ারি আউসগ্রামের বিধায়ক অভেদানন্দ থাণ্ডার দুই ব্লক সভাপতি ও সহ সভাপতি, দুই পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি, গুসকরা পৌরপ্রধান, বিশিষ্ট সমাজসেবী ‘দাতা’ লালন সহ অন্যান্যদের পাশে বসিয়ে এবং ব্লকের বিভিন্ন স্তরের জনপ্রতিনিধি ও দলীয় পদাধিকারীদের উপস্থিতিতে গুসকরা বিদ্যাসাগর হলে এক সাংবাদিক সম্মেলন করেন।
সাংবাদিক সম্মেলনে বিধায়ক ‘দিদির সুরক্ষা কবচ’ প্রকল্পের বিস্তারিত ব্যাখ্যা করেন। একইসঙ্গে ‘দিদির দূত’-দের ভূমিকা কি হবে তারও ব্যাখ্যা করেন। সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন – এই রাজ্যে চালু হওয়া মমতা ব্যানার্জ্জীর মস্তিষ্ক প্রসূত সমস্ত সামাজিক প্রকল্পের সুবিধা মানুষ পাচ্ছে কিনা সেটা দেখার জন্যই এই প্রকল্প। সঙ্গে সঙ্গে জনসংযোগের মাধ্যমে মানুষের অভাব অভিযোগ শোনা হবে।
এর আগে দলীয় কর্মীদের উপস্থিতিতে ও হাততালির মধ্যে দিয়ে বিধায়ক দলনেত্রী মমতা ব্যানার্জ্জীর ৬৯ তম জন্মদিন উপলক্ষ্যে ‘বার্থ ডে’ কেক কাটেন।