জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী, আউসগ্রাম, পূর্ব বর্ধমান-: একদিকে মানুষের নির্লজ্জ লোভ ও অন্যদিকে বর্বর অজ্ঞ উল্লাস, একদিকে প্রাকৃতিক কারণে দাবানল ও অন্যদিকে ইচ্ছাকৃত আগুন লাগিয়ে দেওয়া – কারণ যাইহোক সবক্ষেত্রে ফলাফল এক। আমাজন থেকে শুরু করে অযোধ্যা পাহাড়ের বনভূমি অতিক্রম করে পূর্ব বর্ধমান জেলার আউশগ্রামের বিখ্যাত জঙ্গল মহল- সর্বত্র একই দৃশ্য চোখে পড়ে, দাউদাউ করে জ্বলছে আগুন, পুড়ছে বনের অসহায় পশুপাখি, দূষিত হচ্ছে পরিবেশ, নষ্ট হচ্ছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। শোনা যায় আমাজন বা অযোধ্যা পাহাড়ের বনভূমির দিকে নজর পড়েছে বিভিন্ন কর্পোরেট সেক্টারের যাদের অভিধানে লাভ ছাড়া অন্য কোনো শব্দ খুব একটা গুরুত্ব পায়না।
কিন্তু আদিবাসী অধ্যুষিত আউশগ্রামের বিষয়টি সম্পূর্ণ আলাদা। মূলত অজ্ঞতার জন্য মাঝে মাঝে জঙ্গলে আগুন জ্বলতে দেখা যাচ্ছে।
শীতের সময় পর্ণমোচী গাছের পাতা ঝরে পড়ে। এলাকার গরীব মানুষরা সেই পাতা সংগ্রহ করে জ্বালানির কাজে ব্যবহার করে। কেউ কেউ আবার সেই শুকনো পাতায় ছুড়ে দেয় আগুন। দাউ দাউ করে জ্বলতে থাকে শুকনো পাতা। তার তাপে যেমন অন্য গাছগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয় তেমনি প্রাণহানি ঘটে অবলা বন্য প্রাণীদের। এবার সেইসব মানুষদের সচেতন করতে যৌথভাবে প্রচার করতে এগিয়ে এলো ছোড়া পুলিশ ফাঁড়ির পুলিশ প্রশাসন ও আদুরিয়া বনদপ্তর।
আউসগ্রামের বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে আছে জঙ্গল। জঙ্গল সংলগ্ন এলাকায় আছে একের পর এক গ্রাম। এবার গড়কেল্লার জঙ্গল লাগোয়া প্রতিটি গ্রামে বাসিন্দাদের সচেতন করার জন্য এই প্রচার চালানো হয়। জঙ্গলে আগুন লাগিয়ে দিলে পরিবেশের সঙ্গে সঙ্গে বন্যপ্রাণীদের কী কী ক্ষতি হতে পারে সেই সম্পর্কে গ্রামবাসীদের বুঝিয়ে বলা হয়। এই সচেতনতামূলক প্রচারে গ্রামবাসীরা খুব খুশি এবং যাতে কেউ জঙ্গলে আগুন না লাগাতে পারে সেই বিষয়ে গ্রামবাসীরা সচেতন থাকার বিষয়ে আধিকারিকদের আশ্বাস দেয়। জানা যাচ্ছে, মাঝে মাঝে এইধরনের সচেতনতামূলক প্রচার করা হবে।
এই প্রচার অভিযানে ছিলেন আদুরিয়া ফরেস্ট -এর বিট অফিসার পিনাকী ভট্টাচার্য, আউশগ্রাম থানার ছোড়া বিট হাউসের ওসি ত্রিদিব রাজ সহ অন্যান্যরা।
বনদপ্তর ও পুলিশের এই ভূমিকায় খুব খুশি স্থানীয় গবেষক রাধামাধব মণ্ডল। তিনি বললেন, আশাকরা যায় নিয়মিত প্রচার করলে জঙ্গলে আগুন লাগানোর ঘটনা কম ঘটবে। স্থানীয়দের পাশাপাশি উপকৃত হবে পরিবেশের।