জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী, আউসগ্রাম, পূর্ব বর্ধমান-: কলকাতা শহরের গণ্ডী অতিক্রম করে জেলা শহরের বুকে ধীরে ধীরে ডানা মেলতে শুরু করেছে বই প্রেমীদের বহু প্রতিক্ষিত বইমেলা। কিন্তু গ্রামের মানুষদের কাছে বইমেলা ছিল চরম দুঃস্বপ্ন। সেটা যদি আবার জঙ্গল ঘেরা কোনো প্রত্যন্ত গ্রামে আয়োজিত হয় তাহলে সেটা কল্প জগতের রূপকথার গল্প বলে মনে হবে। অথচ আজ সেটাই বাস্তব হতে চলেছে।
একইভাবে উৎসবও এতদিন শহরকেন্দ্রিক অথবা শহরতলির মত কোনো বর্ধিষ্ণু গ্রাম কেন্দ্রিক ছিল। দূর থেকে গ্রামের সাধারণ মানুষ সেগুলি দেখত এবং দীর্ঘশ্বাস ফেলত। হয়তো মনে মনে ভাবত গ্রামে বসে কোনোদিনও উৎসবের স্বাদ পাওয়া যাবেনা। এটা নিয়ে তাদের অবচেতন মনে একটা আফসোস থেকেই গিয়েছিল।
এবার এই দুই আফসোস দূর করতে এগিয়ে এলো পূর্ব বর্ধমানের আউসগ্রামের ‘সহজ সেবা ও সংস্কৃতি শিক্ষা মিশন’ নামক একটি সেচ্ছাসেবী সংস্থা। এই সংস্থার উদ্যোগে আগামী ২০ শে ফেব্রুয়ারি থেকে আউসগ্রামের ছোড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের পাশে ‘বারাসত ভাঙা’ মাঠে আয়োজিত হতে চলেছে ‘আউসগ্রাম উৎসব ও আউসগ্রাম বইমেলা’। জানা যাচ্ছে এই উৎসব ও মেলা চলবে আগামী ২৫ শে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। সেখানে কুড়িটির মত স্টল থাকবে। ইতিমধ্যে কলকাতার একাধিক প্রকাশনী সংস্থা বইমেলায় অংশগ্রহণের জন্য তাদের সম্মতি দিয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। জঙ্গল ঘেরা আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকার সঙ্গে সাযুজ্য রেখে ‘আউশগ্রাম উৎসব ও আউশগ্রাম বইমেলা’র থিমটিও খুবই সুন্দর – আদিবাসীদের লোকজীবন আর গান। এখানে এসে তারও স্বাদও পাওয়া যাবে।
বিশিষ্ট লেখক তথা গবেষক রাধামাধব মণ্ডল ছাড়াও সংস্থার অন্যান্য কর্মকর্তারা হলেন রাজদীপ ভট্টাচার্য, শিক্ষক শিবাজী মিত্র, রাজেশ মণ্ডল, অভিজিৎ ঘোষ, রাখী ঘোষ, আকাশ অধিকারী, অর্পণ চন্দ্র, বনসুজাপুর হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক রমাপ্রসাদ মণ্ডল সহ আরও অনেকেই। প্রথমবারের জন্য আয়োজিত এই উৎসবকে সফলতার রূপ দেওয়ার জন্য কর্মকর্তাদের মধ্যে দেখা যাচ্ছে চরম ব্যস্ততা।
বইমেলার বিষয়টি সামনে আসতেই খুশির হাওয়া দেখা যাচ্ছে মঙ্গলকোটের তৃণা, কাটোয়ার সুতর্ণা, আহমদপুরের সুকুমার, রামপুরহাটের পাপিয়া, পাণ্ডবেশ্বরের সুজনদের মত অসংখ্য বইপ্রেমীদের মধ্যে। এবার তারা গ্রামের বইমেলার স্বাদ উপভোগ করার সুযোগ পাবে ভেবে রোমাঞ্চিত।
তৃণা বললেন, অনেক দিন ধরে চাইছিলাম আমাদের এলাকায় একটা বইমেলা হোক। এবার সেই ইচ্ছে পূরণ হতে চলেছে। উদ্যোক্তাদের অসংখ্য ধন্যবাদ। একইসঙ্গে বইমেলার সফলতা কামনা করি।
সংস্থার পক্ষ থেকে রাজদীপ ভট্টাচার্যের সংক্ষিপ্ত বক্তব্য, আশাকরি এই বইমেলা এলাকার বইপ্রেমীদের মনের ইচ্ছে পূরণ করবে। পাশাপাশি বইমেলাকে সফল করার জন্য তিনি বইপ্রেমীদের প্রতিদিন বইমেলায় আসার জন্য আহ্বান জানান।