সঙ্গীতা চৌধুরীঃ- দুর্গা পুজো, কালীপুজোর রেশ কাটতে না কাটতেই উপস্থিত হয়েছে ভৈরব পুজো। উমা গেলো তারপর শ্যামা এলো আর শ্যামা যেতে না যেতেই এলেন শ্যামাপতি ভৈরব। হ্যাঁ প্রতিবছরই কার্তিক মাসের শেষ দিনে ধুমধাম করে ভৈরব পুজো হয় বহরমপুরে।
গতকাল শুক্রবার অর্থাৎ ১৭ নভেম্বর ২০২৩ এ ছিলো কার্তিক মাসের সংক্রান্তি। এই কার্তিক সংক্রান্তি তিথিতে প্রতিবছরই কোথাও কার্তিক পুজো হয়, কোথাও হনুমান পুজো হয়, কোথাও বা শিব পুজো বা ভৈরব পুজো হয়। প্রতিবছরের মতো সেই নিয়মের অন্যথা হয়নি এইবারও। গতকালও বিভিন্ন জায়গায় ভৈরব পুজো হয়েছে। বহরমপুর শহরে একোশটারও বেশি জায়গায় ভৈরব পুজো হয়েছে, তবে এই সকল ভৈরব পুজোর মধ্যে বহরমপুরে জাগ্রত ভৈরব পুজোর একটি খাগড়ার ভৈরব তলার ভৈরব বাবা আরেকটি হলো সৈদাবাদের নিম বাবার পুজো। আজ আমি আপনাদের বলবো বহরমপুরের ভৈরব তলার ভৈরব পুজোর কথা।
মুর্শিদাবাদের বহরমপুরের খাগড়ার এই ভৈরব বাবা বড় ভৈরব নামে পরিচিত। প্রায় ২২ ফুট উচ্চতার ভৈরব এখানে দেখা যায়। পুজোর দিন ভোর থেকে ভক্তরা মালা দান করেন। বাবা ভৈরবকে পৈতে পরানোর মধ্য দিয়ে পুজোর সূচনা হয়। এর পর ভক্তরা উপোস করে গঙ্গাস্নান করে দন্ডী কাটতে কাটতে ভৈরব মন্দিরে এসে পুজো দেন। আবার বিসর্জনের সময়ও কড়া পুলিশি নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে বাবার বিসর্জন হয়। ভৈরবতলা মন্দির থেকে যখন বাবা ভৈরবের মূর্তি বার করা হয় তখন সেই অঞ্চলের সমস্ত ইলেকট্রিসিটি বন্ধ করে দেওয়া হয়,কারণ বাবার মূর্তির উচ্চতা বেশি,তাই বাবার মূর্তিতে লেগে যাতে কোন ইলেকট্রিসিটির তার ছিঁড়ে দুর্ঘটনা না হয়, তার জন্যই এমনটা করা হয়।
প্রতি বছরের মানুষ তাই কার্তিক মাসের সংক্রান্তির অপেক্ষা করে থাকেন, অপেক্ষা করে থাকেন বাবার আসার! ১৪৯ বছরের প্রাচীন এই পুজো, তাই স্বাভাবিক ভাবেই ভৈরব তলার মাঠে বাবাকে দেখতে এই দিন প্রচুর মানুষ ভিড় করেন, অনেক রকম মনস্কামনা নিয়ে তারা আসেন বাবাকে দর্শন করতে। বলা হয় এখানকার ভৈরব বাবা অত্যন্ত জাগ্রত। শুদ্ধ চিত্তে কেউ তার থেকে কিছু চাইলে তিনি তার মনস্কামনা অবশ্যই পূরণ করেন। পুজো দেওয়ার জন্য তাই লাইন লেগে যায়, দর্শনার্থীদের ভিড়ে বাবাকে এক ঝলক দেখতে পাওয়াটাই হয়ে যায় ভাগ্যের ব্যাপার। তবে কষ্ট না করলে কি কেষ্ট মেলে! তাই ভিড় ঠেলেই প্রতিবছরই বাবাকে দেখতে আসেন মানুষ।