সংবাদদাতা,বাঁকুড়া:– বিগত ১৮ বছর ধরে রাখি বানাচ্ছে বাঁকুড়া শহরের এক পরিবার। বিক্রি করা উদ্দেশ্য নয়। উদ্দেশ্য হল সমাজসেবী সংগঠনদের দান করা। রাখিতে লেখা রয়েছে বিভিন্ন ধরনের সচেতনতামূলক বার্তাও। কিন্তু ১৮ বছর ধরে কেন এমন কাজ করছেন তারা? নেপথ্যে রয়েছে একটি সুন্দর গল্প। বিগত ১৮ বছর ধরে প্রতিবছর প্রায় পাঁচ থেকে সাত হাজার রাখি তৈরি করে বাঁকুড়ার কুচকুচিয়া ফাঁসিডাঙার পোদ্দার পরিবার। রবীন্দ্রনাথের রাখি বন্ধন কে সম্মান জানিয়ে শুরু হয়েছিল এই কর্মসূচি। প্রথমে অনুশীলন সমিতিকে রাখি দেওয়া হয়েছিল। এরপর ধীরে ধীরে সংযুক্ত হয়েছে বিভিন্ন সমাজসেবী সংগঠন। প্রতিবছর সংগঠনদের হাতে রাখি তুলে দেন পোদ্দার পরিবার। স্বামী, স্ত্রী এবং ছেলে,মেয়ে রাখি বন্ধনের আগেই জোগাড় করে শুরু করে দেন রাখি তৈরীর কর্মশালা। সারা বছর তারা জমা করেন পরিবারের ব্যবহারযোগ্য জিনিসপত্র যেমন, নারকেলের ছোবড়া, সিল্কের কাপড়, ওষুধের পাতা , রঙিন কাগজ এবং আরও কত কি। এই জিনিসগুলি ব্যবহার করে তারা তৈরি করেন সুন্দর সুন্দর রাখি। এই বছরও প্রায় চার হাজার রাখি এখনও প্রস্তুত হয়েছে।
শুধুমাত্র ব্যবহারযোগ্য জিনিস দিয়ে রাখি বানানো ছাড়াও সমাজের প্রতি প্রতিবছরই নতুন ধরনের বক্তব্য রাখতে চান পোদ্দার পরিবার। ২০২৪ সালে রাখি পূর্ণিমার আগে তাদের নতুন উদ্যোগ “একটি গাছ একটি প্রাণ” “গাছ লাগান প্রাণ বাঁচান” এবং “রক্তদান মহান দান” । হাতে তৈরি করা রাখির উপরে লিখে ফেলা হচ্ছে এই স্লোগান গুলি। যাতে রাখি বন্ধনের মাধ্যমে সমাজে ছড়িয়ে পড়তে পারে সচেতনতার বার্তা। দুর্গা প্রসাদ পোদ্দার জানান, “২০২৪ সাল কে ধরে প্রায় ১৯ বছর ধরে এই কাজ করছি আমরা। আমার বাবার অনুপ্রেরণায় শুরু করেছিলাম। প্রতিবছর চার থেকে সাত হাজার রাখি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনদের হাতে তুলে দিই। এই বছর কয়েকদিন আগেই আমার মা মারা গেছেন। এই রাখিগুলি মাকে উৎসর্গ করতে চাই।”
একবার দুবার নয়। প্রতিবছর ধারাবাহিকতার সঙ্গে প্রায় ১৮ বছর যাবত রাখি তৈরি করে সমাজ সংস্কারের কাজ করার চেষ্টা করছে পোদ্দার পরিবার। আপাতদৃষ্টিতে দেখে মনে হতে পারে রাখি পূর্ণিমার আগে কয়েক দিনের প্রচেষ্টায় এই রাখি গুলি তৈরি হয়। কিন্তু পরোক্ষভাবে সারা বছর সংগ্রহ করা হয় রাখি তৈরি সরঞ্জাম। গৃহস্থ বাড়িতে নিত্যনৈনন্দিন জীবনে বহু পণ্য বর্জ্য হিসেবে ফেলে দেয়া হয়। পোদ্দার পরিভাষ এগুলি ফেলে না দিয়ে ভাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ করার রাখি তৈরি করেন।