সংবাদদাতা,বাঁকুড়াঃ- প্রায় ৪১০ বছরের রাজ ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন দুর্গাপুজো। আবার তার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে ভারতবর্ষের স্বাধীনতা বিপ্লবের ইতিহাস। এমনই ঐতিহ্য ও ইতিহাসের স্মৃতি বহন করে চলেছে বাঁকুড়ার কুমারী নদীর তীরে অবস্থিত অম্বিকানগরের রাজবাড়ি। যদিও সেই রাজপ্রসাদ এখন ধ্বংসস্তুপ। শুধু টিকে রয়েছে প্রায় ৪১০ বছরের রাজ ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন দুর্গাপুজো।
এই রাজবাড়ির ইতিহাস থেকে জানা যায় একসময় অম্বিকানগরের রাজবাড়ি ছিল বিপ্লবীদের আস্তানা। ১৯০৭-০৮ সালে অম্বিকানগরের ষষ্ঠ রাজা রাইচরণ ধবল দেব প্রত্যক্ষভাবে বিপ্লবী কার্যকলাপের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। রাজ প্রাসাদের ভিতরেই তৈরি হত অগ্নিযুগের বিপ্লবীদের অস্ত্র সস্ত্র। রাতের অন্ধকারে কখনও রাজা আবার কখনও তাঁর বিশ্বস্ত রাজ কর্মচারী সেই অস্ত্র ও রসদ নিয়ে পৌঁছে যেতেন বিপ্লবীদের গোপন ডেরায়।
এর পাশাপাশি রাজার সহযোগিতায় অম্বিকানগর রাজত্বের মধ্যে থাকা ছেঁদাপাথরের জঙ্গলে গোপনে তৈরি হয় বিপ্লবীদের বারুদ ও বোমার কারখানা। কথিত আছে রাজা রাইচরন ধবলদেব প্রায়ই নিজে গভীর রাতে ঘোড়া ছুটিয়ে পৌঁছে যেতেন সেখানে। প্রফুল্ল চাকি, বারীন ঘোষ, নরেন গোস্বামী, ভূপেশ দত্ত সহ ক্ষুদিরাম বসুর মত বিপ্লবীরা গোপনে বৈপ্লবিক কাজকর্ম চালাতে আসতেন রানীবাঁধ জঙ্গলমহলের ছেঁদাপাথরে। সেই সূত্রেই অম্বিকানগরের রাজবাড়ির দুর্গাপুজোয় অনেক বিপ্লবীই উপস্থিত থেকেছেন। তাই এই পুজো বিপ্লবীদের পুজো হিসেবেও পরিচিত।
ধীরে ধীরে কালের গর্ভে হারিয়ে গেছে বিশাল রাজপ্রাসাদ। শুধু বাংলার বিপ্লব ইতিহাসের মহান স্মৃতি বুকে আগলে আজও অনুষ্ঠিত হয়ে চলেছে সেই ঐতিহ্যবাহী দুর্গা পুজো। এক সময় আশপাশের এলাকার দুর্গা পুজো না থাকায় অম্বিকানগর রাজ বাড়ির পুজো দেখতে ভীড় জমাতেন গোটা জঙ্গল মহলের মানুষ। গত দু দশকে এলাকায় বহু নতুন পুজো শুরু হয়েছে। কিন্তু রাজ বাড়ির দুর্গা পুজোর জনপ্রিয়তা এখনও অটুটই থেকে গিয়েছে।