সংবাদদাতা, বাঁকুড়াঃ– ভাদ্র সংক্রান্তিতে বাঁকুড়া-পুরুলিয়া সহ রাঢ় বঙ্গের মহিলারা মাতেন ভাদু পুজোয়। একটা সময় এই ভদু পূজাকে ঘিরে মানুষের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা থাকলেও বর্তমান সময়ে সেই উদ্দীপনা ক্রমশ কমছে। বর্তমান প্রজন্মের মধ্যে ভাদু জাগরণের বিশেষ আগ্রহ আর দেখা যায় না। এমনই মত ভাদু প্রতিমা তৈরির সঙ্গে যুক্ত মৃৎ শিল্পীদের। মূলত মুখশ্রী ও অঙ্গ সজ্জার জন্য বাঁকুড়ার সিমলাপালের লক্ষীসাগর গ্রামের মৃৎশিল্পীদের তৈরি ভাদুর ব্যাপক কদর ছিল একসময়ে। বর্তমানে সেই ঐতিহ্য বজায় থাকলেও চাহিদা কমেছে। ওই গ্রামেরই প্রবীণ মৃৎ শিল্পী মিহির চন্দ জানান, একটা সময় ছিল যখন তিনি এক মরশুমে প্রায় তিন হাজার ভাদু প্রতিমা তৈরি করতেন। এখন সেই সংখ্যাটা নেমে এসেছে একশোতে। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে আগামী দিনে এই ভাদু পূজো ইতিহাস হয়ে যাবে বলেও তিনি আশঙ্কা করছেন।
ওই গ্রামেরই আরেক ভাদু প্রতিমা শিল্পী জগন্নাথ চন্দ বলেন, ভাদুর চাহিদা একেবারে তলানিতে ঠেকেছে। দাদু, বাবা, কাকা-জ্যাঠাদের পর আমরা এই মৃৎশিল্পের সঙ্গে যুক্ত আছি। যা পরিস্থিতি তাতে আগামী প্রজন্ম এই কাজে আর আগ্রহ দেখাচ্ছে না।
ভাদুর ইতিহাস নিয়ে অনেক গল্পকথা থাকলেও তার মধ্যে পুরুলিয়া জেলার কাশীপুরের রাজা নীলমণি সিংহদেও এর আদরের মেয়ে ভাদু ওরফে ভদ্রাবতীর বিয়ের কাহিনী অন্যতম। রাজকুমারী ভদ্রাবতী বিবাহযোগ্যা হলে এক রাজপুত্রের সঙ্গে তার বিয়ের ব্যবস্থা করেন রাজা নীলমনি সিংহদেও। বিয়ে করতে আসার পথে ডাকাত দলের হাতে প্রাণ হারান বরবেশী রাজপুত্র। আর সেই খবর উৎসবমুখর কাশীপুর রাজবাড়িতে পৌঁছতেই আনন্দোৎসব বিষাদে পরিণত হয়। আর হবু বরের অকাল মৃত্যুর শোক সহ্য করতে না পেরে রাজা, রাজপরিবার আর রাজ্যবাসী সকলের প্রিয় রাজকুমারী ভাদু আত্মঘাতী হন। পরে অকাল প্রয়াতা মেয়ের স্মৃতিকে মানুষের মধ্যে বাঁচিয়ে রাখতেই বাবা নীলমণি সিংদেওর ভাদু পূজার সূচণা করেন।
এই পূজার কোন মন্ত্র নেই। সংক্রান্তির আগে রাত জেগে বিশেষ সুরের এক গানের মাধ্যমেই আরাধনা করা হয় ঘরের মেয়ে ভাদুকে। মুখে মুখে গাঁথা হয় ভাদু গান। আর এই গানে ভাদু বন্দনার পাশাপাশি প্রতিমা শিল্পীকেও সম্মান জানাতে ভোলেন না গান রচয়িতারা। মহিলাদের গাওয়া ভাদু বন্দনায় শোনা যায় বর্তমান সময়ের প্রতিমা শিল্পীদেরও উল্লেখ, ‘তোমায় কে গড়েছে গো, মিহির চন্দ মিস্তিরী? বড় ভালো গড়েছে যে…’।