সংবাদদাতা, বাঁকুড়া:– ইংরেজ আমলে প্রকাশিত বাঁকুড়ার প্রাচীনতম প্রত্রিকা যা ইংরেজ শাসনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে নজর কেড়েছিল আজ সেই ঐতিহ্য শেষের পথে খোদ বাঁকুড়ার বুকে। বাঁকুড়া জেলার সর্বপ্রথম এবং প্রাচীনতম পত্রিকা বাঁকুড়া দর্পণের সম্পাদক ছিলেন রায় বাহাদুর ডক্টর রামনাথ মুখোপাধ্যায়। ১৮৯২ খ্রিস্টাব্দে তাঁর নিজস্ব প্রেস থেকে শুরু হয় এই পত্রিকার পথ চলা। প্রথমে পাক্ষিক থাকলেও পরে তা সাপ্তাহিক হয়। পরবর্তীকালে ১৯২০ সালে শারীরিক অসুস্থতার কারণে ডক্টর রামনাথ মুখোপাধ্যায়ের তাঁর রায় বাহাদুর খেতাব হস্তান্তর করেন ছেলে ডক্টর রামরবি মুখোপাধ্যায়কে। এরপরে পত্রিকার সমস্ত দায়িত্ব নেন তিনি। কিন্তু পরবর্তী কালে আর্থিক সংকটের কারণের বন্ধ হয়ে যায় পত্রিকাটি।
তবে মুখোপাধ্যায় পরিবার শুধু মাত্র বাঁকুড়া দর্পণে জন্য স্মরণীয় হয়ে আছেন তা নয়, রামরবি মুখোপাধ্যায় তৎকালীন বাঁকুড়া শহরের উন্নয়নে প্রভূত ভূমিকা পালন করেছিলেন। বাঁকুড়া রেল স্টেশন থেকে মেডিক্যাল কলেজ, বাঁকুড়া টাউন গার্লস স্কুল থেকে রবীন্দ্রভবন স্টেডিয়াম সহ শহরের একাধিক প্রতিষ্ঠান ও গঠনমূলক কাজ তাঁরই উদ্যোগ তৈরি হয়েছিল। বাঁকুড়া শহরের বুকে নতুনগঞ্জে আজও রয়েছে মুখোপাধ্যায়দের জমিদার বাড়ি। রক্ষণাবেক্ষনের অভাবে যা কালের গর্ভে বিলীন হতে চলেছে । জমিদার বাড়ির প্রাঙ্গনেই রয়েছে ঐহিহ্যবাহী জগদ্ধাত্রী মন্দির। পরবর্তী প্রজন্ম বহুদিন সে পুজো চালিয়ে গেলেও অবশেষে আর্থিক সংকটে তাও বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমানে মন্দিরটির অবস্থাও ভগ্নপ্রায়।
রায়তওয়ারি ব্যবস্থা ও জমিদারি প্রথা উঠে যাওয়ার পর বিপুল পরিমাণ জমি জায়গা হারাতে হয় মুখোপাধ্যায় পরিবারকে। এরপরই প্রভাব প্রতিপত্তি কমতে থাকে মুখোপাধ্যায় পরিবারের। নতুনগঞ্জের মুখোপাধ্যায় বাড়িতে ঢোকার মুখে রামনাথ মুখোপাধ্যায়ের নাম খোদাই করা শ্বেত পাথরের ফলক আজও স্মরণ করিয়ে দেয় মুখোপাধ্যায় পরিবারের বর্ণময় ও ঐতিহ্যবাহী ইতিহাস। বর্তমানে এই সুবিশাল ভগ্নপ্রায় বাড়ি প্রায় ফাঁকা বললেই চলে। এখানে এখন বসবাস করেন রায় বাহাদুর ডক্টর রামরবি মুখোপাধ্যায়ের নাতনি এডভোকেট সোমা মুখোপাধ্যায়।
অভিযোগ ইতিহাসের এই গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়কে স্মরণীয় করে রাখার কোনও চেষ্টাই হয়নি সরকারি তরফে। বাঁকুড়া শহরের ইতিহাসের পড়তে পড়তে জড়িয়ে রয়েছে যে পরিবারের নাম আজ সেই ঐতিহ্য বিলুপ্তির পথে।