eaibanglai
Homeএই বাংলায়ভেদুয়াশোলের 'মানবতার দেওয়াল' দুস্থদের কাছে উপহার

ভেদুয়াশোলের ‘মানবতার দেওয়াল’ দুস্থদের কাছে উপহার

শুভ্রাচল চৌধুরী,বাঁকুড়া:- ‘মানবতার দেওয়াল’,দুস্থদের কাছে যেন উপহার। এই মানবতার দেওয়াল থেকেই প্রয়োজন মতো যে কেউ তুলে নিতে পারেন জামা কাপড় এবং সেটি পরিধান করে চলে যেতে পারেন মনের আনন্দে, তাও আবার একটা টাকাও খরচ না করে। তবে উল্লেখযোগ্য এটাই যে, এই মানবতার দেওয়াল থেকে যাদের প্রয়োজন তারাই একমাত্র বস্ত্র নেন। আর যাদের রয়েছে তারা নিজেদের অপ্রয়োজনীয় বস্ত্রগুলি পরিষ্কার করে টাঙিয়ে রেখে যান এই মানবতার দেওয়ালে। বাঁকুড়া জেলার খাতড়া মহকুমার ইন্দপুর ব্লকের ভেদুয়াশোল পোস্ট অফিসের ঠিক পাশেই দেখা মিলবে এই দেওয়ালের। ভেদুয়াশোলের বাসিন্দা সায়ন্তন পাইনের উদ্যোগেই শুরু হয় এই ‘মানবতার দেওয়াল’।

প্রসঙ্গত বাঁকুড়া জেলার একটি বড় অংশে আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া খেটে খাওয়া মানুষের বসবাস। এই সকল মানুষের সংখ্যা জঙ্গলমহল এলাকাতে আরও বেশি। প্রচন্ড পরিশ্রমী এই মানুষগুলোর শত প্রয়োজন থাকলেও হাত পাততে জানেন না। সায়ন্তন জানান, তিনি বিভিন্ন জায়গায় বস্ত্র বিতরণ করতে গিয়ে দেখেছেন যে প্রয়োজন থাকলেও হাত পেতে নিতে দ্বিধা বোধ করেন অনেকেই, সেই কারণেই একেবারে মুক্তভাবে বিনা দ্বিধায় যাতে যে কেউ তাদের প্রয়োজন মতো বস্ত্র সংগ্রহ করতে পারেন তার জন্যই এই উদ্যোগ গ্রহন করেন তিনি। তবে এই স্বপ্ন পূরণ তিনি একা করতে পারবেন না। তার জন্যে প্রয়োজন সকলের সহযোগিতা। তাই প্রথমদিকে সাধারণের মধ্যে বিষয়টি নিয়ে প্রচার চালাতে হয়, যাতে সহৃদয় ব্যক্তিরা তাদের পড়ে থাকা অব্যবহৃত পরিষ্কার জামা কাপড় ওই দেওয়ালে রেখে যান এবং যাদের প্রয়োজন তারা ওই দেওয়াল থেকে সংগ্রহ করে নেন। সায়ন্তন জানান ধীরে ধীরে বিষয়টি একেবারে অটোমেটেড হয়ে গেছে। বিশ্বভারতী বিশ্বিদ্যালয়ে পড়ার সময়ই এই চিন্তা তারঁ মাথায় আসে এবং যা রূপায়িত হয় ২০১৯ সালে। স্থানীয় সূত্রে জানা যায় এই দেওয়াল কখনই ফাঁকা থাকে না। ফলে এখনও পর্যন্ত তাঁর এই প্রচেষ্টা সফল বলেই মনে করছেন সায়ন্তন। তবুও আরও মানুষ যদি এগিয়ে আসেন ও এই উদ্যোগে অংশ নেন তাহলে কাজটা আরও অনেকটা সহজ হয়ে যাবে বলেও মনে করেন তিনি।

প্রসঙ্গত,২০১৫ সালে ইরানের উত্তর-পূর্বের শহর মাশাদে প্রথম ‘মানবতার দেওয়াল’ শুরু হয়। দেশটির আর্থিক সংকটের সময়ে শীতার্তদের মাঝে শীতবস্ত্র পৌঁছে দিতে অজ্ঞাত কেউ বা কারা এমন উদ্যোগ নিয়েছিলেন। যার নামকরণ করা হয়েছিল ‘দিওয়ার-এ- মেহেরবানি’। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে সে খবর প্রচারিত হয় ও এমন মানবিক উদ্যোগের জন্য সাড়া পড়ে যায়। ক্রমে এই উদ্যোগ বা ধারণা পাকিস্তান, ভারত, বাংলাদেশ সহ একাধিক দেশের শহরগুলিতে ছড়িয়ে পড়ে। ভারতে এসে ‘দিওয়ার-এ- মেহেরবানি’র নাম হয়ে যায় ‘নেকি-কি-দিওয়ার’। এরপর কলকাতা, ব্যাঙ্গালুরু, বেনারস,জয়পুর, নাগপুর, মুম্বই সহ দেশেরে বিভিন্ন বড় শহরে ছড়িয়ে পড়ে ‘নেকি-কি-দিওয়ার’। বাংলায় এই ‘নেকি-কি-দিওয়ার’-ই নাম পায় ‘মানবতার দেওয়াল’।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments