সংবাদদাতা, বাঁকুড়াঃ- রাজ্য হেরিটেজ কমিশন ‘হেরিটেজ’ ঘোষণা করলো বিশ্বখ্যাত শিল্পী ও ভাস্কর রামকিঙ্কর বেইজের বাঁকুড়ার যুগী পাড়ার বসত বাড়িটিকে। বুধবার হেরিটেজ কমিশনের তরফে এবিষয়ে ‘আবক্ষ ফলকে’র আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রাজ্য হেরিটেজ কমিশনের প্রাক্তন চেয়ারম্যান, চিত্রশিল্পী শুভাপ্রসন্ন ভট্টাচার্য, রাজ্য পর্যটন উন্নয়ন পর্ষদের ভাইস চেয়ারম্যান, চিত্রাভিনেত্রী সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, বাঁকুড়া পৌরসভার চেয়ারম্যান অলকা সেন মজুমদার সহ রামকিঙ্কর বেইজের বর্তমান প্রজন্মের সদস্যরা।
প্রসঙ্গত বাঁকুড়ার বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে দীর্ঘদিন ধরেই রামকিঙ্কর বেইজের বাড়িটি হেরিটেজ ঘোষণার দাবি উঠছিল। এদিন সায়ন্তিকা ব্যানার্জী বলেন, অনেক দিন ধরেই বিষয়টি নিয়ে চেষ্টা করছিলাম, হেরিটেজ কমিশনে বিষয়টি নিয়ে চিঠিও লিখেছিলাম। অবশেষে ‘হেরিটেজ’ ঘোষণা করা হল বিশ্ববিখ্যাত শিল্পী ও ভাস্করের বাড়িটি।
১৯০৬ সালের ২৫ মে বাঁকুড়া শহরের যুগীপাড়ায় এক নাপিত পরিবারে জন্ম রবীন্দ্র স্নেহধন্য রামকিঙ্কর বেইজের। ছোটো বেলা থেকেই ছবি আঁকার প্রতি ঝোঁক ছিল তাঁর। কুমোর পাড়ায় গিয়ে মূর্তি তৈরিতে হাত লাগাতেন। জাতীয় কংগ্রেসের হয়ে পোষ্টারও লিখেছেন। এমন সময়ে বাঁকুড়ার বিশিষ্ট সাংবাদিক এবং প্রবাসী পত্রিকার সম্পাদক রামানন্দ চট্টোপাধ্যায়ের নজরে পড়ে যান রামকিঙ্কর। ১৯২৫ সালে রামানন্দ চট্টোপাধ্যায়ের হাত ধরেই তিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিশ্বভারতী বিদ্যালয়ে চারুকলার ছাত্র হিসেবে যোগ দেন। আচার্য নন্দলাল বসুর কাছে শিক্ষা শুরু করেন তিনি। চারুকলায় ডিপ্লোমা অর্জন করে তিনি বিশ্বভারতীর ভাস্কর্য বিভাগের বিভাগীয় প্রধানের পদেও আসীন হন। সেই থেকে আমৃত্যু দীর্ঘ ৫৫ বছর শান্তিনিকেতনেই থেকে গেছেন স্বনামধন্য এই ভাস্কর ও শিল্পী।
মৃত্যুর ১০ বছর আগে ভারত সরকার শিল্পী রামকিঙ্কর বেজকে ‘পদ্মভূষণ’ সম্মানেভূষিত করে। ১৯৭৬-এ অ্যাকাডেমির ফেলো হন। ১৯৭৭ সালে বিশ্বভারতীর ‘দেশিকোত্তম’ উপাধি পান। ১৯৭৯ সালে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাম্মানিক ডি লিট উপাধি দেওয়া হয় তাঁকে। ২ আগষ্ট ১৯৮০ সালে তাঁর মৃত্যু হয়।
দেরীতে হলেও তাঁর জন্মভিটে তথা বসত বাড়িটি হেরিটেজ ঘোষণা হওয়ায় খুশি শিল্পীর বর্তমান প্রজন্মের সদস্যরা। তবে শিল্পীর সম্পর্কিত নাতি শিবপ্রসাদ বেইজ এদিন বলেন, রামকিঙ্কর বেইজের কোন শিল্প কর্ম তাঁর জন্মভূমি বাঁকুড়া জেলায় নেই। তাঁর বিশ্ব বিখ্যাত সৃষ্টি কলের বাঁশি কিম্বা সাঁওতাল পরিবারের ‘ব্রোঞ্জ কাস্টিং’ এখানে স্থাপন করা দরকার। এছাড়াও বাঁকুড়ায় রামকিঙ্কর সংগ্রহশালা তৈরির দাবিও জানিয়েছেন তিনি।