সংবাদদাতা,বাঁকুড়াঃ– বাঁকুড়ার জঙ্গলঘেরা প্রান্তিক গ্রামের স্কুল খাগ জুনিয়র হাই স্কুল। পড়ুয়ার সংখ্যা ১০০ ছুঁয়েছে। আদিবাসী তথা তফসিলি উপজাতিভুক্ত প্রায় ১০টি গ্রামের পড়ুয়ারা পড়তে আসতো এই স্কুলে। কিন্তু স্থায়ী শিক্ষক না থাকায় করোনার সময় বন্ধ হওয়া স্কুল আজও খোলেনি। অগত্যা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কেউ জঙ্গল পথে ৯ কিলোমিটার দূরের স্কুলে ভর্তি হয়েছে। বছরভর ওই জঙ্গলে হাতির আনাগোনা লেগে থাকে। তাই ঝুঁকি নিতে না পারায় অনেকেরই মাঝপথে পড়াশুনা বন্ধ হয়ে গেছে। এই অবস্থায়, স্কুলে স্থায়ী শিক্ষক নিয়োগ করে স্কুল চালু করার দাবিতে বৃহস্পতিবার ৮টি গ্রামের মানুষ একসঙ্গে হয়ে বিক্ষোভ দেখালেন বাঁকুড়া জেলা স্কুল পরিদর্শকের দফতরে।
জানা গেছে খাগ গ্রামে একটি প্রাইমারি স্কুল থাকলেও কোনও উচ্চ বিদ্যালয় ছিল না। ২০১৪ সালের সর্বশিক্ষা মিশনের অধীনে সোনামুখী ব্লকে এই স্কুলটি চালু হয়। সোনামুখী ছাড়াও আশেপাশের বড়জোড়া ও ওন্দা ব্লক – সব মিলিয়ে খাগ, মদনমোহনপুর, কড়াশুলি, শুড়িপুকুর সহ প্রায় ১০ টা গ্রামের ছেলেমেয়েরা পড়তে আসত এই স্কুলে। পড়ুয়াদের মধ্যে আনুমানিক ১০ শতাংশের বেশি আদিবাসী তথা তফসিলি উপজাতিভুক্ত এবং এক তৃতীয়াংশ তফসিলি জাতিভুক্ত। প্রাথমিক ভাবে ডেপুটেশনে থাকা দুই শিক্ষককে নিয়ে স্কুলে পঞ্চম, ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির ক্লাস চালু হয়। ২০১৪ থেকে ২০১৭ অব্দি স্কুল চলাকালীন ছাত্রছাত্রী সংখ্যা দাঁড়ায় একশোরও বেশি। । স্কুলে যথেষ্ট সংখ্যক শ্রেণিকক্ষ, অফিস ঘর, শিক্ষকদের ঘর, গ্রন্থাগার তৈরি হয়। চালু হয় মিড ডে মিলও। কিন্তু ডেপুটেশনে থাকা দুই শিক্ষক বদলি নিয়ে অন্যত্র চলে যান। ফলে স্থায়ী শিক্ষকের অভাবে স্কুলের পঠনপাঠন বন্ধ হয়ে যায়। ২০১৯ সালে পার্শ্ববর্তী স্কুল থেকে আবার দুই শিক্ষককে ডেপুটেশনে পাঠায় স্কুল শিক্ষা দফতর। ওই দুই শিক্ষক কাজে যোগ দেওয়ার পর স্কুলে ফের পঠনপাঠন শুরু হলেও ২০২০ সালের গোড়া থেকে করোনার জেরে নামে লকডাউনের খাঁড়া। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকে স্কুল। এদিকে সেই সময় ওই দুই শিক্ষকও উৎসশ্রী প্রকল্পে বদলি নিয়ে অন্যত্র চলে যান। ফলে আবারও বন্ধ হয়ে যায় স্কুল।
লকডাউন পেরিয়ে দীর্ঘ টালবাহানার পর যখন নতুন করে বন্ধ স্কুল খোলা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে, তখন স্থানীয় বিধায়ক আশ্বাস দেন সদর্থক কিছু করার। কিন্তু এখনো অব্দি সদর্থক কিছু বাস্তবায়িত হয়নি। এদিকে বন্ধ স্কুলের বেঞ্চিতে ধুলো আর চারপাশে আগাছা ক্রমশ স্কুলটাকে গ্রাস করছে। তাই নেতা-মন্ত্রীদের কথায় আর ভরসা না রেখে সন্তানের কথা ভেবে স্কুল খোলার জন্য তৎপর হয়েছেন গ্রামবাসীরা। গড়ে উঠেছে “খাগ জুনিয়র হাই স্কুল বাঁচাও কমিটি” নামে দলমতনির্বিশেষে একটি লড়াইয়ের মঞ্চ। প্রাথমিক কর্মসূচি হিসাবে ঠিক হয়েছে বাঁকুড়া জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (মাধ্যমিক) এর অফিসে ডেপুটেশন দেওয়া হবে। এরপরেও কাজ না হলে বৃহত্তর আন্দোলনেরও প্রস্তুতি নিচ্ছে লড়াইয় মঞ্চ। এই লড়াইয়ে সামিল হয়েছেন মিড-ডে মিলের কর্মীরাও, যাঁরা এই স্কুল বন্ধ হওয়ার সাথে সাথেই কাজ হারিয়েছেন।
অন্যদিকে,বাঁকুড়া জেলা স্কুল পরিদর্শক পীযুষকান্তি বেরা, অন্য স্কুল থেকে শিক্ষকদের ডেপুটেশনে পাঠিয়ে নতুন শিক্ষাবর্ষে ফের পঠনপাঠন শুরু করার ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানিয়েছেন।