নিউজ ডেস্ক, এই বাংলায়ঃ বাঁকুড়া জেলার সাধারণ মানুষের কথা মনে পড়লেও সবসময় মাথায় প্রথম যে ছবি সামনে আসে তা হল দলমার তান্ডবের ছবি। কারণ রাজ্যে বাঁকুড়া জেলায় প্রত্যেক বছর দলমার তান্ডবে যে পরিমাণ ক্ষতি এবং প্রাণহানির ঘটনা ঘটে তা আর অন্য কোনও জেলায় ঘটে বলে মনে হয় না। কিন্তু তাসত্বেও দিনের পর দিন বাঁকুড়াবাসী এই দলমার তান্ডবের আতঙ্কে সন্ত্রস্ত হয়েও স্বাভাবিক জীবনযাপন করে আসছেন। তবে সম্প্রতি সেই চেনা ছবি বদলাতে শুরু করেছে। বাঁকুড়ার সোনামুখী এলাকার জঙ্গলাকীর্ণ বিস্তীর্ণ এলাকা অতীতে এবং বর্তমানেও দলমার দলের অন্যতম বিচরণ ক্ষেত্র হিসেবে পরিচিত। বিস্তীর্ণ জঙ্গলের অবাধ প্রাকৃতিক খাদ্য এবং জল স্থানীয় এবং বাইরে থেকে আসা দলমার দলের অত্যন্ত প্রিয় এলাকা। গত কয়েক বছরে এই সোনামুখী ব্লকের বিস্তীর্ণ জঙ্গলে হাতির তান্ডব এতটাই বেড়েছিল যে একসময় এই জঙ্গলের ওপরেই নির্ভর করে জীবিকা নির্বাহের রাস্তা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল সোনামুখীর জঙ্গল লাগোয়া কোচডিহি, পাঁচাল, পাথরমোড়া, কল্যাণপুর, শিবের বাঁধ, শুকোশোল, ননাডাঙ্গা ইত্যাদি গ্রামের কয়েক হাজার মানুষের। বংশপরম্পরায় এইসব গ্রামের বাসিন্দারা বরাবর এই জঙ্গলের ওপর নির্ভরশীল। জঙ্গল থেকে মহুয়া, মধু, শাল পাতা, জ্বালানী কাঠ সংগ্রহ করেই দিনের পর দিন জীবিকা নির্বাহ করে এসেছেন জঙ্গল লাগোয়া বিভিন্ন গ্রামের প্রায় কয়েক হাজার মানুষ। কিন্তু গত কয়েক বছরে এই জঙ্গলই তাদের কাছে হয়ে উঠেছিল মৃত্যুপুরী। জঙ্গলে শাল পাতা, কাঠ, মহুয়া সংগ্রহ করতে গিয়ে কতজন যে হাতির আক্রমণের শিকার হয়েছেন তার হিসেবে নেই। এদেরই মধ্যে যাদের দুর্ভাগ্য ছিল তারা হাতির আক্রমণে প্রাণও হারিয়েছেন। বাধ্য হয়ে জঙ্গলের জীবিকা ছেড়ে অন্য পেশায় ঝুঁকতে বাধ্য হয়েছিলেন গ্রামবাসীরা। তবে বর্তমানে পরিস্থিতি ফের বদলাতে শুরু করেছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের বয়ান থেকে এমনই তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। তারা জানাচ্ছেন, বর্তমানে সোনামুখী জঙ্গলে হাতির আনাগোনার ওপর কড়া নজরদারি চালাচ্ছে বনদফতর। যেই সমস্ত এলাকায় হাতির দলের অবাধ যাতায়াত সেইসব এলাকা চিহ্নিত করতে তার দিয়ে ঘিরে ফেলা হয়েছে। দিনের প্রায় সবসময় জঙ্গলে হুলা পার্টি তৈরী রাখা হয়েছে, যাতে যেকোনো সময় হাতির হামলা হলে তা নিয়ন্ত্রণ করা যায়। আর বনদফতরের এহেন উদ্যোগ হাসি ফুটিয়েছে কয়েক হাজার গ্রামবাসীর মুখে। কারণ এখন তারা রোজ নিশ্চিন্তে জঙ্গলে কাঠ কুড়াতে, শাল পাতা, মধু, মহুয়া সংগ্রহ করতে যেতে পারেন। শালপাতাকে সেলাই করে থালা পাতা তৈরীর কাজ আবারও জোরকদমে শুরু হয়েছে এইসমস্ত গ্রামগুলিতে। আর এরফলেই ধীরে ধীরে হলেও ফের বাঁকুড়ার গ্রামীন অর্থনীতি ধীরে ধীরে চাঙ্গা হতে শুরু করেছে। গ্রামবাসীরা জানাচ্ছেন বনদফতরের তৎপরতায় জঙ্গলে বা লোকালয়ে হাতির উপদ্রব অনেকটাই কমেছে। আগে হাতির হানায় ফসলের যেমন ভয়াবহ ক্ষতি হত তেমনি প্রায় লোকালয়ে হাতি ঢুকে পড়ে বাড়িঘর, দোকানপাট ভেঙে তছনছ করত, কিন্তু বনদফতরের হস্তক্ষেপে বর্তমানে এইধরনের ঘটনা অনেকটাই কমেছে। গ্রামবাসীরা তাদের এই উন্নতির পুরো কৃতিত্বই তুলে দিয়েছেন বনদফতরের ওপরে। এককথায়, চিরাচরিত হাতির আতঙ্ক ঝেড়ে ফেলে ফের স্বনির্ভরতার দিকে এগিয়ে চলেছে বাঁকুড়ার সোনামুখী ব্লকের বাসিন্দারা।