সংবাদদাতা,বাঁকুড়াঃ- তখন রাজ্যে পালাবদলের সময়,২০১১ সাল। সেই সময় অর্থাৎ প্রায় ১২ বছর আগে মহাকরণে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে গিয়ে সস্ত্রীক আত্মসমর্পণ করেছিলেন মাওবাদী গেরিলা নেতা রাজারাম সোরেন। আত্মসমর্পণের ঘোষিত প্যাকেজ অনুযায়ী রাজ্য পুলিশের স্পেশাল হোমগার্ড পদে চাকরীও পান রাজারাম। তার ভাইয়ের মতে বর্তমানে তিনি দুর্গাপুরে কর্মরত রয়েছে। সস্ত্রীক সেখানেই থাকেন। অথচ সেই রাজারামের নামে হুলিয়া জারি করল ঝাড়খণ্ডের জামশেদপুর আদালত। গত রবিবার ঝাড়খন্ডের পটমদা থানার পুলিশ হুলিয়া নিয়ে বাঁকুড়ার রানিবাঁধ থানার মিঠাম গ্রামে থাকা রাজারামের গ্রামের বাড়িতে পৌঁছে যায় ও তার ভাই দুখিরাম সোরেন হাতে হুলিয়া জারির নোটিশ ধরিয়ে দিয়ে আসে। জানা গেছে হুলিয়ার নোটিশ অনুযায়ী ১৭ সেপ্টেম্বরের মধ্যে রাজারামকে জামশেদপুর আদালতে হাজিরা দিতে হবে। আর নতুন করে রাজারামের নামে এই হুলিয়া জারি নিয়ে রীতিমত বিব্রত রাজারামের পরিবারের লোকজন। অন্যদিকে বিষয়টি নিয়ে শুরু হয়েছে রীতিমতো বিতর্ক। বিষয়টি নিয়ে ধন্দে রাজ্য পুলিশও। বাঁকুড়ার পুলিশ সুপার বৈভব তিওয়ারি জানান রাজারাম সোরেনের নামে হুলিয়া জারির বিষয়টি তারা জেনেছেন এবং পরবর্তী পদক্ষেপের জন্য আইনি পরামর্শও নিচ্ছেন।
আইন অনুযায়ী কোনো অভিযুক্ত ব্যাক্তি ফেরার থাকলে সংশ্লিষ্ট থানার পুলিশের আবেদনের ভিত্তিতে হুলিয়া জারি করে আদালত । কিন্তু আত্মসমর্পনকারী কোনো অভিযুক্তর নামে এভাবে হুলিয়া জারি হওয়া বিরল ঘটনা। এ রাজ্যে আত্মসমর্পনকারী মাওবাদীদের মধ্যে এই প্রথম কোনো প্রাক্তন মাওবাদীর নামে হুলিয়া জারির ঘটনা ঘটল।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে ১৯৯৮ সালে তৎকালীন মাওবাদী কমিউনিস্ট সেন্টারের হাত ধরে জঙ্গলের জীবন বেছে নেন বাঁকুড়ার রানীবাঁধ ব্লকের মিঠাম গ্রামের বাসিন্দা রাজারাম সরেন। ২০০৪ সালের ২১ সেপ্টেম্বর এমসিসি ও জনযুদ্ধ গোষ্ঠী যুক্ত হয়ে সিপিআই মাওবাদী নামে আত্মপ্রকাশ করলে রাজারাম অযোধ্যা স্কোয়াডের দায়িত্ব পান। মূলত রাজারামের নেতৃত্বেই ২০০৫ থেকে ২০০৬ এর মধ্যে মাওবাদীদের গেরিলা অযোধ্যা প্ল্যাটুন গঠিত হয় । সংগঠনের সূত্রেই রাজারামের সাথে ঘনিষ্ঠতা বাড়ে স্কোয়াড সদস্যা জাগরী বাস্কের । ২০০৬ সালে দুজনে বিয়েও করেন । পরবর্তীতে তাঁদের একটি পুত্র সন্তান হলে ধীরে ধীরে জাগরী সংগঠন থেকে দূরত্ব বৃদ্ধি করে । অন্যদিকে ২০০৬ সালের মাঝামাঝি সময় থেকে অযোধ্যা প্ল্যাটুনে বিক্রম ওরফে অর্ণব দামের প্রভাব বাড়তে থাকায় গুরুত্ব কমে যায় রাজারামের। পরে অর্ণবের সঙ্গে মতানৈক্য হওয়ায় সম্পর্কের অবনতি ঘটে রাজারামের । এর পরেই ধীরে ধীরে সংগঠন থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা শুরু হয় রাজারাম এবং জাগরীর। পরবর্তীতে ২০১১ সালের ১৭ নভেম্বর পুলিশের সহায়তায় সরাসরি মহাকরণে গিয়ে সস্ত্রীক গিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে আত্মসমর্পণ করেন রাজারাম ।