eaibanglai
Homeএই বাংলায়বাঁকুড়ার মাঠে কাজ করা হামিরুদ্দিন পেলেন দেশের সাহিত্যের সেরার সম্মান

বাঁকুড়ার মাঠে কাজ করা হামিরুদ্দিন পেলেন দেশের সাহিত্যের সেরার সম্মান

নিজস্ব প্রতিনিধি, বাঁকুড়া:- লাল মাটি বাঁকুড়ার প্রত্যন্ত গ্রামের বাসিন্দা কৃষিজীবী বছর ২৬-এর যুবক হামিরুদ্দিন মিদ্যা  এবছরের সাহিত্য অ্যাকাডেমি যুব পুরস্কার পেয়ে সকলকে রীতিমতো চমকে দিয়েছেন। ২০২২ সালে প্রকাশিত তাঁর লেখা গল্প সংকলন ‘মাঠরাখা’ বইটির জন্যই এই জাতীয় সম্মান প্রাপ্তি তাঁর। বইটিতে মোট ১৮টি গল্প রয়েছে। শুক্রবারই অ্যাকাডেমির পক্ষ থেকে হামিরউদ্দিনের নাম ঘোষণা করা হয়। প্রত্যন্ত রূপপাল গ্রামে মাঠে কাজ করে খেটে খাওয়া হামিরুদ্দিন নিজেও ভাবতে পারেননি তিনি কোনও দিন জাতীয় স্তরে সাহিত্যের সেরার সম্মান পাবেন।

বাঁকুড়া জেলার সোনামুখী থানার অন্তর্গত রূপপাল গ্রামের বাসিন্দা হানিফ মিদ্যা ও আজমিরা বিবির ছেলে হামিরুদ্দিন। হানিফ মিদ্যাও কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন, আজমিরা বিবি সাধারণ গৃহবধূ। সোনামুখীর ধুলাই রামকুমার মৃণ্ময়ী বিদ্যা মন্দির স্কুল থেকে ২০১৩ সালে মাধ্যমিক ও ২০১৫-তে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করেন হামিরুদ্দিন। কিন্তু পারিবারিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির কারণে উচ্চমাধ্যমিকের পর আর পড়শুনা চালিয়ে যেতে পারেননি। পরিবারের হাল ধরতে গ্রামেরই কয়েক জনের সঙ্গে কেরলে পাড়ি দেন শ্রমিকের কাজ করতে। কিন্তু সেখানে মন টেকেনি যুবক সাহিত্যিকের। সারাদিন পরিশ্রমের পর বাড়ি ফিরে নিজের ও সহকর্মীদের জন্য় রান্না বান্না সংসারের কাজের চাপে লেখালেখি বন্ধ হয়ে যায় তাঁর। এদিকে ততদিনে তাঁর প্রথম গল্প ‘লগ্নউষা’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। সকলে অভিনন্দন জানাচ্ছেন, কি লিখছেন খোঁজখবর নিচ্ছেন। হামিরুদ্দিনের কথায় তখনই তিনি উপলব্ধি করেন এই শ্রমিকর জীবন তাঁর জন্য নয়। তাঁর জন্য অপেক্ষা করছে অন্য কোনও জীবন। এরপরই গ্রামে ফেরার সিদ্ধান্ত নেন এবং বাবার সঙ্গে মাঠে কাজ করাকেই জীবিকা হিসেবে বেছে নেন। সেই সঙ্গে ফের সঙ্গে শুরু করেন লেখালেখি।

হামিরুদ্দিনের কথায় স্কুল জীবন থেকেই লেখালেখি শুরু করেন তিনি। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের গল্প পড়েই প্রথম লেখালেখির প্রতি আগ্রহ জন্মায়। মাঠে কাজ করতে করতেই মাথায় গল্প আসে তাঁর। বাড়ি ফিরেই সেইসব লিখে ফেলেন। মাঠঘাট-নদী, কৃষিকাজ, গ্রাম্যজীবনই তাঁর লেখার মূল বিষয়। তাঁর লেখায় উঠে আসে সমাজের অবহেলিত মানুষের কথা। তাঁর গল্পের চরিত্রগুলিও তারই আশেপাশের পরিচিত, বন্ধু বান্ধব, পরিজনদের থেকে নেওয়া। তাই তাঁর পাওয়া এই সাহিত্য সম্মানের দাবিদার তাঁরা সকলেই, বলে মনে করেন তিনি।

জতীয় পুরস্কার পাওয়া ‘মাঠরাখা’ বইটি ‘সোপান’ প্রকাশনা থেকে ২০২২ সালের কলকাতা বইমেলায় প্রকাশিত হয় এবং এই গল্প সংকলনের জন্য তিনি ২০২২ সালে বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ থেক ‘ইলা চন্দ্র স্মৃতি পুরস্কার’ ও কৃত্তিবাস থেকে ‘ সন্দীপন চট্টোপাধ্যায় সম্মাননা’ পান। হামিরুদ্দিনের লেখা প্রথম গল্পগ্রন্থ ‘আজরাইলের ডাক’ ২০১৮ সালে প্রকাশিত হয়। এই গল্প ‘দ্য অন্তনিম’ নামে একটি ম্যাগাজিনে ইংরেজিতে অনুবাদ হয়। পরে এই গল্পটিই ইতালির ‘দ্য ড্রিম মেচিন’ ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয়। এ ছাড়া মুন্সি প্রেমচাঁদ প্রতিষ্ঠিত দিল্লি থেকে প্রকাশিত সর্বভারতীয় হিন্দি পত্রিকা ‘হংস’-তে গল্পটি হিন্দিতে অনুবাদ হয়েছে। এরপর ২০১৯, ২০২১ ও ২০২২ সালে সাহিত্য অ্যাকাডেমি পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয় তাঁর লেখা। জানা গেছে এবছর সাহিত্য অ্যাকাডেমি দেশের কুড়িটি ভাষায় কুড়িজন সাহিত্যিকের নাম বেছে নিয়েছিল। তার মধ্যে বাংলা ভাষায় হামিরউদ্দিনের লেখা গল্পগ্রন্থটি সেরা বিবেচিত হয়। বর্তমানে রাজ্যের প্রায় সবকটি দৈনিক পত্রিকা ও শারদ সংখ্যায় হামিরউদ্দিনের লেখা প্রকাশিত হয়।

আর্থিক অনটনের কারণে উচ্চমাধ্যমিকে পর পড়াশুনায় ছেদ টানতে হলেও বর্তমানে মুক্ত বিদ্যালয় থেকে বাংলা নিয়ে স্নাতক স্তরের পড়াশুনা করছেন বাংলার এই যুবক সাহিত্যিক। গল্পকার হামিরুদ্দিন জানান, কোনও দিন কোনও পুরস্কার বা সম্মানের আশায় লেখালেখি করেননি, লেখেন কেবল মনের তাগিদে। আগামী দিনেও গ্রামের এই সাধারণ অবহেলিত মানুষদের স্বর হয়ে তাঁদের গল্প মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে চান।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments