সংবাদদাতা,বাঁকুড়াঃ- এসআইআর-এর বদলে ‘মাঝি সরকার’-এ নাম লেখালে বিনামূল্যে মিলবে নানা সুযোগ-সুবিধা। জঙ্গল ঘেরা প্রত্যন্ত এলাকার আদিবাসী মানুষদের সরকারি সুযোগ সবিধার লোভ দেখিয়ে আর্থিক প্রতারণা চক্র চলছিল রমরমিয়ে। তদন্তে নেমে ওড়িশার ময়ূরভঞ্জ জেলার পূর্ণিয়া গ্রামের ভবেন্দ্র মারান্ডি এবং বাঁকুড়ার বারিকুল থানার রসপাল গ্রামের আদিবাসী বিকাশ পরিষদের বহিষ্কৃত নেতা সন্তোষ মান্ডিকে গ্রেফতার করেছে বাঁকুড়া জেলা পুলিশ।
সম্প্রতি বাঁকুড়া ও পুরুলিয়ার প্রত্যন্ত আদিবাসী গ্রামের কিছু মানুষজন এসআইআরের গণনাপত্র পূরণে অনীহা দেখান। তাদের বোঝানো হয়েছিল যে তিন হাজার টাকায় মাঝি সরকারের পরিচয়পত্র নিলে মিলবে এমন সব অধিকার, যাতে ভারত সরকারের আইন প্রযোজ্য হবে না, কিন্তু বিনামূল্যে যাতায়াত পরিষেবা পাওয়া যাবে, আবার সব সরকারি পরিষেবা মিলবে কোন খরচ ছাড়াই। বিষয়টি জানতে পেরে বিভ্রান্তি দূর করতে বাঁকুড়ার রানিবাঁধের কয়েকটি আদিবাসী গ্রামে যান প্রশাসনিক আধিকারিকরা। কিন্তু উল্টে তাদের ক্ষোভের মুখে পড়তে হয়।
এরপরই তদন্তে নামে পুলিশ। তদন্তে উঠে আসে, ওড়িশার ময়ূরভঞ্জ জেলার এক ব্যক্তি ভবেন্দ্র মারান্ডি ওই এলাকার মানুষদের ফোন করে বিভ্রন্ত করতেন। এমনকি এসআইআর ফর্ম পূরণ না করে মাঝি সরকারের পরিচয়পত্র নিতে প্ররোচিত করতেন। প্রতিটি মাঝি সরকারের পরিচয়পত্র পিছু তিনি কমিশন পেতেন ৬০০ টাকা। অপরদিকে, বাঁকুড়ার সন্তোষ মান্ডি ছত্তীসগড়ের একটি প্রতারণা-চক্রের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে মাঝি সরকারের নামে প্রচার চালাতেন।
সোমবার ট্রানজিট রিমান্ডে ভবেন্দ্রকে উড়িষ্যা থেকে বাঁকুড়ায় আনা হয় এবং খাতড়া মহকুমা আদালতে ভবেন্দ্র ও সন্তোষকে পেশ করা হয়। দু’জনকেই সাত দিনের পুলিশ হেফাজতে নির্দেশ দেন বিচারক। ধৃতদের বিরুদ্ধে আর্থিক প্রতারণা ও সরকারি নথি জালিয়াতি সহ একাধিক ধারায় মামলা রুজু করেছে পুলিশ।
এদিকে পুলিশের এই পদক্ষেপের পর আদিবাসী সমাজের অনেকেই বুঝতে পারছেন তারা প্রতারিত হয়েছেন। রানিবাঁধের মুচিকাটা গ্রামের এক যুবক বলেন, “বিভ্রান্ত হয়ে এসআইআর ফর্ম পূরণ করিনি, এখন চিন্তায় পড়েছি। সবাই মিলে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেব।”
অন্যদিকে এসআইআর সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে পথে নেমেছে আদিবাসী বিকাশ পরিষদ। সোমবার পরিষদের পক্ষ থেকে খাতড়া এসডিও অফিস মোড়ে সভা করা হয়।


















