eaibanglai
Homeএই বাংলায়অর্থাভাবে পড়াশুনো বন্ধ হতে চলেছে বাঁকুড়ার আদিবাসী ছাত্রীর

অর্থাভাবে পড়াশুনো বন্ধ হতে চলেছে বাঁকুড়ার আদিবাসী ছাত্রীর

জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী, রাইপুর, বাঁকুড়া:- গরীব ঘরে জন্ম হওয়াটাই কী অপরাধ? হয়তো তাই! অর্থের অভাবে একদিকে ভবিষ্যতে ইংরেজি বিষয়ে শিক্ষিকা হওয়ার স্বপ্ন ভেঙে যাওয়ার বেদনা, অন্যদিকে দাদার প্রথম বর্ষের পর মাঝপথে পড়াশোনার ইতি – তাড়িয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছে মেয়েটিকে। কলেজে ভর্তি ও পড়াশোনা চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের সংস্থান করতে না পারার জন্য অসহায় মা-বাবা, দাদা ও মেয়েটির দু’চোখ বেয়ে নীরবে শুধুই গড়িয়ে পড়ছে জল। ঘটনাটি বাঁকুড়ার খাতড়া ব্লকের ধানাড়া গ্রামের।

এইবছর বাঁকুড়ার রাইপুরের পন্ডিত রঘুনাথ মুর্মু আবাসিক বিদ্যালয়ের ছাত্রী প্রমীলা হেমব্রম উচ্চমাধ্যমিকে কলাবিভাগে ৪৫১ নম্বর পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে। ৯০ ℅ নম্বর পেয়ে পাস করলে যে কোনো পরিবারে বয়ে যেত আনন্দের ঢেউ। কিন্তু মেয়ের ভবিষ্যতের কথা ভেবে প্রমীলাল বাবা রবীন্দ্রনাথ হেমব্রমের বাড়িতে আজ শুধুই বিষাদের ছায়া। হবেই বা না কেন! এর আগে অর্থের অভাবে মাঝপথে বন্ধ হয়ে গেছে পুত্রের পড়াশোনা। এবার কি মেয়েরও পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যাবে – এটা ভেবেই কান্নায় ভেঙে পড়লেন স্বামী-স্ত্রী।

ছোট থেকেই প্রমীলার স্বপ্ন শিক্ষিকা হওয়া, বিনা বেতনে তার মত গরীব আদিবাসী পরিবারের ছেলেমেয়েদের শিক্ষা দেওয়া। সে জানে শিক্ষাই আনে চেতনা। সে বিশ্বাস করে এই চেতনা একদিন আদিবাসী পরিবারের সন্তানদের এগিয়ে নিয়ে যাবে। কিন্তু অর্থাভাবে তারই যে পড়াশোনা বন্ধ হতে চলেছে! স্বপ্ন পূরণ করতে হলে কলেজে ভর্তি হতে হবে। কিন্তু সেই অর্থ তার গরীব ক্ষেতমজুর বাবা-মায়ের পক্ষে সংগ্রহ করা কার্যত অসম্ভব। তারা যে বড় অসহায়। তাহলে কি দাদার মত তারও পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যাবে? ইংরেজি সাহিত্যের শিক্ষিকা হওয়ার স্বপ্ন পূরণ হবেনা? একথা ভেবেই গরীব আদিবাসী ঘরের মেয়ে প্রমীলা হেমব্রম কান্নায় ভেঙে পড়লেন। কোনো কথায় বলতে পারলেন না।

দুই সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে রবীন্দ্রনাথ বাবুর সংসার। স্বামী-স্ত্রীর দিনমজুরীতে কোনরকমের সংসার চলে। অভাবের সংসার হলেও নজর ছিল সন্তানদের পড়াশোনার দিকে। দুই সন্তানকে উচ্চশিক্ষিত করা। অর্থের অভাবে ছেলের পড়াশুনা মাঝপথে বন্ধ হয়ে গেছে। আজও ছেলের অসহায় মুখের দিকে তাকিয়ে তিনি চোখের জল ফেলেন আর হয়তো মনে মনে ভাবেন – আমি এমন হতভাগ্য পিতা যে সন্তানের পড়াশোনার খরচটুকু জোটাতে পারেনি!

এই পরিস্থিতিতে অসহায় রবীন্দ্রনাথ বাবুর আবেদন, যদি কোনো সহৃদয় ব্যক্তি বা স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা আমার মেয়ের পড়াশুনোর জন্য আর্থিক সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন তাহলে আমি তাদের কাছে চিরকৃতজ্ঞ থাকব। তাদের সাহায্য পেলে ভবিষ্যতে হয়তো আমার মেয়ের শিক্ষিকা হওয়ার স্বপ্ন পূরণ হতে পারে।

এখন দেখার এই অসহায় পিতার কাতর আবেদনে সাড়া দিতে এবং গরীব ঘরের মেধাবী মেয়েটির স্বপ্ন পূরণ করতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে কোনো সরকারি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এবং সহৃদয় ব্যক্তি আর্থিক সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে এগিয়ে আসে কিনা?

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments