জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী, পূর্ব বর্ধমানঃ- গত সাত-আট বছর ধরে বীরভূম তো বটেই পূর্ব বর্ধমানের আউসগ্রাম, মঙ্গলকোট ও কেতুগ্রামে তৃণমূল কংগ্রেসের যেকোনো ফ্লেক্সে বা দলীয় কার্যালয়ে অনুব্রত মণ্ডলের ছবি থাকতই এবং এটাই ছিল অলিখিত নিয়ম। এমনকি দলীয় নির্দেশ অমান্য করে সদ্য সমাপ্ত ২১ শে জুলাইয়ের প্রচার ফ্লেক্সে অনুব্রত মণ্ডলের ছবি ছিল। কিন্তু হঠাৎ কি হলো ফ্লেক্স থেকে অনুব্রত মণ্ডলের ছবি উধাও তাও আবার খোদ বীরভূম থেকে? বীরভূম ও অনুব্রত মণ্ডল তো সমার্থক হয়ে উঠেছিল। ফ্লেক্সে রাজ্য বিধানসভার ডেপুটি স্পিকার আশীষ ব্যানার্জ্জীর সৌজন্যে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জ্জীর ছবি জ্বলজ্বল করলেও অনুব্রত বাদ! তাহলে কি ধীরে ধীরে দল থেকে অনুব্রতকে দূরে সরানোর চেষ্টা চলছে – কৌতূহলী জিজ্ঞাসা দলের নীচু তলার কর্মী সহ রামপুরহাটের সাধারণ মানুষের। এমনকি এখানে আগত ভক্তদের।
আগে তারাপীঠে টিমটিম করে ভিড় হলেও সেভাবে প্রচার ছিলনা। মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জ্জীর সৌজন্যে পর্যটন মানচিত্রে স্থান পায় তারাপীঠ। ২০১৫ সালে গঠিত হয় তারাপীঠ-রামপুরহাট উন্নয়ন পর্ষদ। জোর কদমে শুরু হয় তারাপীঠের পরিকাঠামোগত উন্নয়ন। পর্যটকদের সুবিধার্থে একের পর হোটেল, লজ গড়ে ওঠে। সড়কপথে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে ভক্ত তথা পর্যটকদের ভিড় বাড়তে থাকে। শনিবার, মঙ্গলবার সহ যেকোনো অমাবস্যায় ভিড় হলেও সব ভিড়কে ছাপিয়ে যায় কৌশিকী অমাবস্যার তিথি ।
রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত ভক্তদের ভিড়ে গমগম করে ওঠে সমগ্র এলাকা। মুখ্যমন্ত্রী সহ অনুব্রত মণ্ডলের ফ্লেক্সে ছেয়ে যেত রাস্তার দু-ধার। গত কয়েক বছর ধরে এর কোনো অন্যথা ঘটেনি। জেলে যেতেই সব কেমন যেন হয়ে গেল। ফ্লেক্স থেকে উধাও অনুব্রত।
২৬ শে আগষ্ট তারাপীঠে কৌশিকী অমাবস্যা তিথি। করোনার জন্য কার্যত গত দু’বছর এই সময় তারাপীঠ ছিল ভক্তশূন্য। স্থানীয় হোটেল ও লজ ব্যবসায়ীদের আশা এবার হয়তো ভক্তদের ভিড় অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে দিতে পারে। ইতিমধ্যে তার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। মন্দির চত্বর সেজে উঠেছে। কিন্তু অনুব্রতহীন ফ্লেক্স দেখে অনেকেই চমকে যাচ্ছে। অথচ তার দাপটে, ভাল-মন্দ যাইহোক না কেন, বীরভূম কার্যত বিরোধী শূন্য। সচেতন ভাবেই গড়ে তুলেছিলেন larger than party image. তাহলে কি অস্তাচলে অনুব্রত? যদিও চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে।
যোগাযোগ করতে না পারার জন্য এব্যাপারে রাজ্য বিধানসভার ডেপুটি স্পিকার আশীষ ব্যানার্জ্জীর মতামত জানতে পারা যায়নি। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তারাপীঠের স্থানীয় এক তৃণমূল নেতা বললেন- কেষ্টদা (অনুব্রত মণ্ডলের ডাক নাম) জেলা সভাপতি হলেও এই এলাকায় ‘স্যার’ (আশীষ ব্যানার্জ্জী) বেশি জনপ্রিয়। তবে অবশ্যই কেষ্টদার জন্য খারাপ লাগছে। মায়ের কাছে প্রার্থনা করব উনি যেন তাড়াতাড়ি জামিন পান।