জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী, পূর্ব বর্ধমান-: ছাপার অক্ষরে সংবাদপত্র মানুষের হাতে এসে পৌঁছাতেই চরম চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। খবরের পাশাপাশি বিখ্যাত ব্যক্তিদের প্রতিবেদন মানুষের মনে চাঞ্চল্যে সৃষ্টি করে। সংবাদপত্র প্রবীণ ব্যক্তিদের অবসরের খোরাক হয়ে দাঁড়ায়। নবীন প্রজন্মের কাছেও সেটি সমান জনপ্রিয় থাকে।
প্রযুক্তির উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে ঘরে ঘরে পৌঁছে যায় টিভি। বিভিন্ন চ্যানেলের দৌলতে বিনোদনের পাশাপাশি কোথাও ঘটে যাওয়া ঘটনা মানুষের চোখের সামনে ধরা পড়ে। যুদ্ধক্ষেত্র বা খেলার মাঠের সরাসরি বর্ণনা অন্য ধরনের উত্তেজনা সৃষ্টি করে।
এখন মানুষ পৌঁছে গেছে ডিজিটাল যুগে। হাতের মুঠোয় ধরে থাকা স্মার্টফোন গোটা বিশ্বকে পকেটে এনে দিয়েছে। সস্তা ইণ্টারনেটের দৌলতে স্মার্টফোন হয়ে উঠেছে টিভির চলমান ক্ষুদ্র সংস্করণ।
ছাপার অক্ষরে প্রকাশিত খবর ঘটনার পরের দিন মানুষের কাছে এসে পৌঁছায়। অনেকের চোখে সেটা বাসি খবর। সংবাদজগতের ভোল অনেকখানি বদলে দেয় টিভি। তবে টিভি দেখতে হলে বাড়িতে থাকতে হবে। কিন্তু স্মার্টফোনে সেই সমস্যা নাই। টাওয়ার থাকলে যত্রতত্র খবর উপভোগ করা যায়।
এরপর থেকেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে তাহলে কি বর্তমান যুগে প্রিণ্ট মিডিয়া তার গুরুত্ব হারাচ্ছে? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে বর্ধমান টাউন হল ময়দানে অনুষ্ঠিত ‘ভারত সংস্কৃতি উৎসব’ অনুষ্ঠান মঞ্চে আয়োজিত হয় ‘ডিজিটাল যুগে মূদ্রণ সাংবাদিকতার প্রাসঙ্গিকতা’ শীর্ষক বিষয়ে এক মনোজ্ঞ আলোচনা। এই আলোচনায় অংশ নেন তিনটি ভিন্ন মাধ্যমের বর্ধমানের তিনজন বিশিষ্ট সাংবাদিক – ‘ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’ ডিজিটাল মাধ্যমের সাংবাদিক জয়প্রকাশ দাস, ‘খবর সাতদিন’ নেটওয়ার্কের প্রতিষ্ঠাতা সাংবাদিক সৌগত সাঁই এবং ‘আনন্দবাজার’ পত্রিকার তরুণ সাংবাদিক সুপ্রকাশ চৌধুরী।
বর্তমান ব্যস্ততা ও গতির যুগে কোনো বক্তা ডিজিটাল মিডিয়ার গতিশীলতা ও জনপ্রিয়তার মতো সদর্থক বিষয়গুলি অস্বীকার করেননি। একইসঙ্গে তারা ডিজিটাল সাংবাদিকতার বিভিন্ন ‘নেগেটিভ’ দিকগুলোও তুলে ধরেন। তাদের মতে ডিজিটাল মিডিয়ার সঙ্গে যুক্ত সাংবাদিকদের একাংশের সাংবাদিকতার নামে পেইড নিউজ, প্রমোশন, ফেক নিউজ, ফ্যাক্ট চেকিংয়ের অভাব , সহজলভ্যতা, সেনসেশন তৈরির প্রবণতা ইত্যাদি যে সংবাদ জগতের গুণমানের অবনমন ঘটাচ্ছে সেই বিষয়েও তারা গুরুত্বপূর্ণ আলোকপাত করেন। পাশাপাশি ডিজিটাল সাংবাদিকতার কিছু প্রসঙ্গে সাধারণ মানুষের অশ্রদ্ধা এবং এই ধারার সাংবাদিকদের সরকার স্বীকৃত পরিচয়পত্র না থাকার বিষয়েও তারা উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
তবে এইধরণের মনোজ্ঞ আলোচনায় সঞ্চালকের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এখানেই অনুষ্ঠানের সূত্রধর ও সঞ্চালক হিসাবে নিজের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করেন বর্ধমান উদয়চাঁদ মহিলা কলেজের সাংবাদিকতা ও গণজ্ঞাপন বিভাগের অধ্যাপক ঋষিগোপাল মণ্ডল। তার সরস সঞ্চালনা অনুষ্ঠানটিকে অন্য উচ্চতায় পৌঁছে দেয়।
আলোচনার শেষ পর্বে সঞ্চালক বলেন, ডিজিটাল সাংবাদিকতা আসলে যুগের চাহিদা, সময়ের চাহিদা। এর গুরুত্ব বুঝেই প্রায় সব বড় প্রিন্ট মিডিয়া হাউস তাদের ডিজিটাল বা ই-সংস্করণ প্রকাশ করছে। মূদ্রণ মাধ্যমের প্রাসঙ্গিকতা বরাবরই ছিল, আছে এবং থাকবেও। তবে ডিজিটাল মিডিয়া সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা বদলানোর দায় ও দায়িত্ব ডিজিটাল মিডিয়ার সংবাদকর্মীদেরই নিতে হবে।