eaibanglai
Homeএই বাংলায়শীতের হাত ধরে আগমন ঘটছে লেপ প্রস্তুত কারকদের, চাহিদা কম

শীতের হাত ধরে আগমন ঘটছে লেপ প্রস্তুত কারকদের, চাহিদা কম

জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী, গুসকরা, পূর্ব বর্ধমান-: ধীরে ধীরে উত্তরের শীতল হাওয়া ‘রাত দখল’ করতে শুরু করেছে। আবহাওয়া দপ্তরের ইঙ্গিত এবার দিন দখলের অনুকূল পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে। ইতিমধ্যে রাজ্যের বিভিন্ন এলাকার তাপমাত্রা ২০° সে: এর নীচে নেমে গ্যাছে। আরও নামবে। ভালই ঠান্ডা লাগছে। তার মোকাবিলায় গৃহস্থরা শীতের পোশাক রোদে দেওয়ার কাজ শুরু করে দিয়েছে।

ওদিকে বিহার থেকে আগমন ঘটছে লেপ প্রস্তুত কারকদের। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকজন লেপ প্রস্তুতকারক গুসকরায় বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকতে শুরু করেছে। গত কয়েকবছর ধরে তারা এই কাজটাই করে চলেছে। সকালবেলায় তারা কাঁধে ধুনচি ও সাইকেলের ক্যারিয়ারে তুলোর বস্তা নিয়ে চলেছে এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে। সঙ্গে সেই চিরপরিচিত ব্যবসায়ী ডাক, লেপ-তোষক তৈরি করবেন গো! কোনো একজায়গায় বসে গৃহস্থ বাড়ির পুরনো লেপ-তোষক ছিঁড়ে তুলো বের করে সেগুলি ধুনচি দিয়ে ধুনে লেপ তৈরি করার উপযুক্ত করার মত পেঁজা তুলো তৈরি করে ফেলে। ধুনচির টুং টাং শব্দের মধ্যেও খুঁজে পাওয়া যায় মিষ্টি সুর। অবশেষে তৈরি হয় নতুন করে লেপ। লেপ তৈরি দেখতে ভিড়ও হতো। আজ সেসব কার্যত অতীত। লেপের পরিবর্তে এসে গেছে তুলনায় কম খরচের বালাপোষ ও নামীদামি কোম্পানির ব্ল্যাঙ্কেট। একটা লেপ সেলাই করতে যতটা খরচ তার কাছাকাছি দাম পড়ে ব্ল্যাঙ্কেটের। ফলে লেপের পরিবর্তে মানুষ বালাপোষ বা ব্ল্যাঙ্কেট কেনে। সেগুলো শৌখিন হলেও লেপের মত আরামদায়ক নয়। এখন ধুনচির পরিবর্তে যন্ত্রের সাহায্যে তুলো ধুনার কাজ চলছে। আগে একটা সময় এক একজন কারিগর আশ্বিন থেকে ফাল্গুন এই ৫-৬ মাসে মোটামুটি ৩০০-৪০০ পিস লেপ তৈরি করত। প্রতিটি লেপ তৈরি করে মোটামুটি ৩৫০-৪০০ টাকা পাওয়া যেত। এরমধ্যে অবশ্য তেল ও সুতো বাবদ ১০০ টাকার মত খরচ হতো। এখন ওই সময় গড়ে মাত্র ১০০ টার মত লেপ তৈরি হয়। স্বাভাবিক ভাবেই লেপ প্রস্তুতকারকদের পক্ষে সংসার নির্বাহ করা কার্যত কঠিন হয়ে পড়েছে। অনেকেই বিকল্প কাজের সন্ধান করতে শুরু করেছে। কেউ কেউ কষ্ট হলেও পারিবারিক ব্যবসা ধরে রাখার চেষ্টা করছে। গত ৪৫ বছর ধরে ভাই মাসুম আলীকে সঙ্গে নিয়ে বিহারের আসরফ আলী (৬৬) এখানে আসছেন। তিনি গুসকরায় বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকেন। লেপ, তোষক তৈরি করার জন্য ঘুরে বেড়ান আউসগ্রাম ও মঙ্গলকোটের বিভিন্ন গ্রামে গ্রামে। কোনোদিন কাজ জোটে, কখনো জোটেনা। কোনোরকমে সংসার চলে। কষ্ট হলেও বাপ ঠাকুরদার কাছে শেখা কাজ ছাড়তেও পারেননা। তিনি বললেন, আমরা মূলত পুরনো লেপ, তোষকের তুলো ধুনে সেগুলো নতুন করে তৈরি করে দিই। কখনো কখনো একেবারে নতুনও তৈরি করি। মোটামুটি ৪০০ টাকার মত বাণী নিই। এখন অবশ্য কাজ একটু কম হয়। কোনোরকমে দিন গুজরান হয়। তার আশা যতই মানুষ আধুনিক হোক একদিন পরিস্থিতি বদল হবেই। সেই আশায় বৃদ্ধ মানুষটি চলে যান অন্য গ্রামে। কথা হচ্ছিল মঙ্গলকোটের বিশিষ্ট লেপ প্রস্তুতকারক ভোলা সেখের সঙ্গে। প্রায় বছর চল্লিশ আগে বাবার হাত ধরে সে জয়পুরে আসে। বাবার কাছেই তার কাজ শেখা। বাবার সঙ্গে ঘুরে এলাকায় তার একটা আলাদা পরিচিতি গড়ে ওঠে। সবাই তাকে ভোলা বলেই ডাকে। ভোলার বক্তব্য – একটা সময় সারাবছর টুকটাক কাজ করলেও ঠান্ডা পড়লে ব্যস্ততা বেড়ে যেত। গ্রামের বাড়ি থেকে অতিরিক্ত কারিগর নিয়ে আসতে হত। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে কম মূল্যের বালাপোষ ও ব্ল্যাঙ্কেটের জন্য লেপের চাহিদা যথেষ্ট কমে গেছে। ফলে দিন দিন তাদের অবস্থা খুব খারাপ হচ্ছে। তবে তার আশা কম মূল্যের হলেও লেপের থেকে বালাপোষের স্থায়িত্ব কম। ফলে মানুষ আবার লেপ তৈরির দিকেই ঝুঁকবে।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments