eaibanglai
Homeএই বাংলায়জেল যাত্রার হুকুম শুনেই অসুস্থ বিডিএ চেয়ারপার্সন, চাঞ্চল্য

জেল যাত্রার হুকুম শুনেই অসুস্থ বিডিএ চেয়ারপার্সন, চাঞ্চল্য

নিজস্ব প্রতিনিধি, বর্ধমান: এডিডিএ’র চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে জবরদখলের মোকদ্দমার মাঝেই এবার বিডিএর চেয়ারমানের জেলযাত্রা। সপ্তাহের প্রথমদিনেই বিডিএর চেয়ারপারসন কাকলি তা গুপ্তকে জেল হেফাজতে নেওয়ার নির্দেশ দিল বর্ধমাণের ফাস্ট-ট্র্যাক আদালত, যা নিয়ে এদিন জেলার রাজনীতিতে বিস্তর চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে।

এদিকে, অভিযুক্ত চেয়ারপারসনকে জেলে নিয়ে যাওয়ার পথে আচমকাই তিনি বুকে ব্যথা অনুভব করায়, তাকে সরাসরি হাসপতালে নিয়ে যাওয়া হয় তড়িঘড়ি।

তৃনমূলেরই এক প্রাক্তন পঞ্চায়েত সদস্যর বাবাকে মারধর ও খুনের চেষ্টার অভিযোগে, বর্ধমান উন্নয়ন সংস্থার চেয়ারপার্সন তথা তৃণমূলেরই ব্লক সভাপতি তার সাথে শাসকদলের এক যুব সভাপতি ও অঞ্চল সভাপতি সহ ১৩ জনকে সোমবার দোষী সাব্যস্ত করলেন বর্ধমান আদালতের ফাস্ট ট্রাক সেকেন্ড কোর্টের বিচারক অরবিন্দ মিশ্র।

সোমবার সকাল থেকে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে গোটা জেলা জুড়ে তীব্র চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়েছে। এদিন তৃণমূল কংগ্রেসের যে ১৩ জনকে বিচারক দোষী সাব্যস্ত করে হেফাজতে নিলেন তার মধ্যে রয়েছেন বর্ধমান ডেভেলপমেন্ট অথরিটির চেয়ারপার্সন তথা বর্ধমান-১ ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি কাকলি তা গুপ্ত, বর্ধমান ১ পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ তথা বর্ধমান ১-এর যুব তৃণমূলের সভাপতি মানস ভট্টাচার্য, রায়ান ১ গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান কার্তিক বাগ, অঞ্চল সভাপতি সেখ জামাল, অনুপ কুমার মণ্ডল, সেখ চাঁদু, গণেশ বাগ, অনিল বাগ, সেখ মুক্তার, দেবরাজ সিং, সঞ্জীব প্রসাদ, শম্ভু সিং এবং অতিকুল রহমান।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, এদিন দোষী সাব্যস্তর পর মঙ্গলবারই এই মামলায় সাজা ঘোষণা করতে পারেন বিচারক অরবিন্দ মিশ্র। জানা গেছে, খুনের চেষ্টার অভিযোগের এফআইআর-এ গোড়ায় কাকলি সহ মোট ১৫ জনের নাম ছিল। তারা সবাই জামিনে মুক্ত ছিলেন। তার মধ্যে ভীম সিং এবং সজল শর্মাকে বেকসুর খালাস করে আদালত ১৩ জনকে এদিন হেফাজতে নেয় আদালত। আসামী পক্ষের আইনজীবী বিশ্বজিত দাস এবং কমল দত্তরা জানিয়েছেন, ২০১৭ সালের ৫ সেপ্টেম্বর বর্ধমান শহর লাগোয়া রায়ান ১ গ্রাম পঞ্চায়েতের পূর্বতন পঞ্চায়েত সদস্য জীবনকৃষ্ণ পালের বাবা দেবু পাল গ্রামেরই দুর্গাতলায় সন্ধ্যেবেলায় ঘটনার দিন বসে ছিলেন। অভিযোগ, সেই সময় তার উপর অভিযুক্তরা বাঁশ, লাঠি, টাঙ্গি নিয়ে আচমকা হামলা চালায়। গুরুতর জখম অবস্থায় তাকে প্রথমে বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ও পরে কলকাতায় স্থানান্তরিত করা হয়। এই হামলার ঘটনায় তার ডান চোখ নষ্ট হয়ে যায়। এরপরই আক্রান্ত দেবু পালের স্ত্রী সন্ধ্যা পাল বর্ধমান থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। সোমবার ফাস্ট ট্রাক দ্বিতীয় আদালতের বিচারক অরবিন্দ মিশ্র ১৩ জনকে দোষী সাব্যস্ত করে এবং কাস্টডি নেন।

এদিকে, ২০১৭ সালের এই ঘটনায় ক্ষমতাসীন শাসকদলের এই ১৩ জনকে দোষী সাব্যস্ত করায় রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক চাঞ্চল্যর সৃষ্টি হয়েছে। আদালতের পথে আসা অভিযুক্ত মানস ভট্টাচার্য্য এদিন জানিয়েছেন, “এটা মিউচুয়াল কেস।” এমনকি এদিন খোদ তৃণমূল শিবিরেও বড়সড় প্রশ্ন দেখা দিয়েছে – এই ঘটনাতো আদালতের বাইরে মীমাংসাই হয়ে গিয়েছিল, তাহলে কিভাবে বিচারক এই ১৩জনকে দোষী সাব্যস্ত করলেন? বস্তুত, এদিন সকাল থেকেই বর্ধমান আদালত জুড়েই ছিল এই প্রশ্নকে ঘিরে ব্যাপক চর্চা। আইনজীবী মহলের অভিমত অনুসারে এই ঘটনায় অভিযুক্তদের কমপক্ষে ৭ থেকে ১০ বছর পর্যন্ত সাজা হতে পারে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে তখন দণ্ডবিধির ৩৪১, ৩২৩, ৩২৪, ৩২৫, ৩২৮, ৩০৭ এবং ৩৪ ধারায় মামলা দায়ের হয়। আদালত সূত্রে জানা গেছে, এই ঘটনায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য নিয়ে বিচারক সন্তুষ্ট হতে পারেননি। আর তাই তিনি এই কেসে পৃথক ভাবে বর্ধমান মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের ৩ জন চিকিত্সকের আলাদা করে বয়ান নেন। বস্তুত, আইনজীবী মহলের মতে, এই মামলার মূল টার্নিং পয়েণ্ট নেয় চিকিত্সকদের বয়ান। অভিযুক্ত তৃণমূল নেতৃত্ব এদিন জানিয়েছেন, এটা মিউচুয়াল কেস হলেও চিকিত্সকদের বয়ানই আদতে সেই মিউচুয়াল বিষয়টিতে জল ঢেলে দেয়। আর তাতেই বিচারক অভিযুক্তদের দোষী সাব্যস্ত করে এদিন কাষ্টডি নেন, বলে মনে করছে আইনজীবী মহল। মঙ্গলবার বিচারক অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কি সাজা ঘোষণা করেন তার দিকেই তাকিয়ে গোটা জেলা। এমনকি এদিন ভিড়ে ঠাসা আদালত চত্বরে অভিযুক্তদের সংশোধনাগারে নিয়ে যাবার সময় কয়েকজনকে বলতেও শোনা গেছে, তৃণমূলের ওপরতলার নেতৃত্বের সঙ্গে কথা হয়ে গেছে দু-তিনদিনের মধ্যেই জামিন হয়ে যাবে। উল্লেখ্য, এদিন হেভিওয়েট তৃণমূলের ১৩জনকে দোষী সাব্যস্ত করে জেল হেফাজতে নেওয়ার ঘটনায় এদিন সকাল থেকেই গোটা আদালত চত্বরে তৃণমূল নেতা-কর্মীদের ভিড়ের পাশাপাশি মোতায়েন করা হয়েছিল প্রচুর পুলিশ। সংশোধনাগারে যাবার পথে পুলিশ গাড়ির ভেতর থেকেই অনেকে দলীয় কর্মীদের কাছে আবেদন করেছেন – এমন কেউ কিছু করবেন না, যাতে তাদের জামিনে প্রভাব পড়ে। অন্যদিকে, এদিন আদালত থেকে পুলিশ ভ্যানে অভিযুক্ত তৃণমূল নেতাদের সংশোধনাগারে নিয়ে যাবার পথে গুরুতর অসুস্থবোধ করেন কাকলী গুপ্ত তা। সঙ্গে সঙ্গে তাকে পৃথক গাড়িতে বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিত্সার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। যা নিয়ে মোকদ্দমাটি নিয়ে নতুন করে কৌতূহল তুঙ্গে উঠল।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments