জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী, পূর্ব বর্ধমান-: নিম্নচাপ জনিত কারণে প্রায় সারা অক্টোবর মাস জুড়ে বৃষ্টির কবলে পড়ে রাজ্য। জমির মাটি শুকিয়ে যাওয়ার আগেই আবার বৃষ্টি। অতিরিক্ত বৃষ্টি ও বিভিন্ন জলাধার থেকে জল ছাড়ার জন্য বহু এলাকা বন্যা কবলিত হয়ে পড়ে। এখনো অনেক জলমগ্ন এলাকা থেকে জল সরেনি। বহু ক্ষেত জমি জলের নীচে। গত কয়েকদিন ধরে আকাশের মুখ ভার। বঙ্গোপসাগরে আরও একটি নিম্নচাপ সৃষ্টির ইঙ্গিত। পুনরায় বৃষ্টির আশঙ্কায় আতঙ্কিত চাষীরা। প্রতি মুহূর্তে আবহাওয়ার খবর নিচ্ছে তারা। নজর রাখছে আবহাওয়া দপ্তরের বুলেটিনের দিকে।
এদিকে আলুচাষের সময় এগিয়ে আসছে। অনেক চাষী নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে তাদের একটা বড় অংশ জমিতে আলুর বীজ বসিয়ে ফেলে। বৃষ্টি ও বন্যার জন্য সেইসব জমির একটা অংশ এখনো কর্দমাক্ত। স্বাভাবিক কারণে জমিতে লাঙ্গল দিয়ে সেগুলো আলু চাষের উপযুক্ত করা সম্ভব হয়নি। গতবছরও এইসময় বেশ কিছু পরিমাণ জমিতে চাষীরা আলুর বীজ বসিয়ে ফেলে। চাষীদের একাংশের মতে একটানা রোদ হলেও কর্দমাক্ত জমি আলু চাষের উপযুক্ত করে তুলতে অন্তত দিন কুড়ি সময় লাগবে। অথচ পূর্ব বর্ধমান, হুগলি সহ রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের চাষীদের কাছে অন্যতম অর্থকরী ফসল হলো আলু। অন্যদিকে যথারীতি অন্যরাজ্য থেকে আলুর বীজ এই রাজ্যে আসতে শুরু করেছে। পরিবহন খরচ বৃদ্ধির জন্য আলুর বীজের দাম মহার্ঘ হবে। আবহাওয়ার জন্য অনেক চাষী এখনো নতুন বীজ কেনার ঝুঁকি নিতে পারছেনা। এরপর বাজারে আলু চাষের জন্য প্রয়োজনীয় সারের কৃত্রিম অভাব দ্যাখা যাবে। সবমিলিয়ে চরম সমস্যায় এলাকার আলু চাষীরা। মঙ্গলকোটের বিশিষ্ট আলু চাষী সঞ্জীব ঘোষ বললেন, এখনো এক কাঠা জমিও আলু চাষের উপযুক্ত করে গড়ে তুলতে পারিনি। আবহাওয়া অবস্থা দেখে নতুন বীজ কেনাতো দূরের কথা হিমঘর থেকে বীজ আলু বের করতে সাহস হচ্ছেনা। যথেষ্ট চিন্তায় আছি। বিশিষ্ট আলুবীজ ব্যবসায়ী বাপী রাজ বললেন, প্রতিবছর অন্যরাজ্য থেকে আলুর বীজ আমদানি করি। আবহাওয়ার অবস্থা দেখে খুবই চিন্তিত আছি। বুঝতে পারছিনা শেষ পর্যন্ত কী হবে! কথা হচ্ছিল বিশিষ্ট কৃষিবিজ্ঞানী ড. নাদিরা চৌধুরীর সঙ্গে। তিনি বললেন, আলু পচনশীল ফসল। আবহাওয়ার বর্তমান পরিস্থিতিতে আলু চাষ করার আগেই চাষীদের বেশ কিছু আগাম সতর্কতা নিতেই হবে। নাহলে সমূহ সর্বনাশ হবে।