নিউজ ডেস্ক, এই বাংলায়ঃ প্রাচীনকাল থেকে প্রচলিত পুরুষতান্ত্রিক সমাজের চিরাচরিত প্রথাকে ভেঙে বর্তমানে নারী সমাজও সাফল্যের এভারেস্টে আরোহণ করেছে। যদিও সমাজের বেশ কিছু জাতগায় আজও নারী সমাজ অবহেলিত হলেও গত কয়েক দশকে পুরুষদের কড়া চাহনি থেকে বর্তমান নারী সমাজ অনেকটাই স্বাধীন। যার উদাহরণ এখন যেকোনো শহর, মফস্বলে চোখ ঘোরালেই পাওয়া যাবে। বিভিন্ন সরকারী, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে ব্যবসায়িক ক্ষেত্রেও মহিলাদের আজ অবাধ বিচরণ। এককথায় বর্তমান যুগে কোনও অংশেই পুরুষদের থেকে পিছিয়ে নেই মহিলারা। মহিলাদের এই উন্নতি ব্যতিক্রমী কিছু মানুষ ছাড়া সমগ্র সমাজেই আজ প্রশংসনীয়। কিন্তু কথায় আছে যার ভালো প্রভাব রয়েছে, তার আবার কিছু খারাপ প্রভাবও রয়েছে। যার অন্যতম উদাহরণ নিয়েই আজকের এই বিশেষ প্রতিবেদন। বর্তমান শহর ও মফস্বল শহরের রাস্তায় হেঁটে বা গাড়িতে গেলেও এখন মহিলা গাড়ি চালক ও স্কুটি চালকদের দেখা পাওয়া এক স্বাভাবিক ঘটনা। বহুকাল আগে কোনও মহিলা ও তরুণী স্কুটি বা বাইক চালালে রাস্তা দাঁড়িয়ে হাঁ করে চেয়ে থাকত পথচলতি মানুষ। কিন্তু সময় যত এগিয়েছে ততই এই দৃশ্য মানুষের কাছে স্বাভাবিক হয়ে গেছে। এখন তো বুলেট বা চারচাকা নিয়েও মহিলা বা কমবয়সী তরুণীরা রাস্তা-ঘাটে বেড়িয়ে পড়ছেন আকছার। কিন্তু এই বাড়বাড়ন্তই এখনও প্রধান মাথাব্যাথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে শহরবাসীর কাছে। যার অন্যতম কারণ শহরের আনাচে-কানাচে স্কুটি আরোহী দিদি-বৌদিদের অবাধ স্বাধীনতা। সমস্ত ক্ষেত্রে না হলেও প্রায় ৮০ শতাংশ ক্ষেত্রে বাড়ির মহিলা বা তরুণীরা নতুন স্কুটি চালানো শিখেই ভিড়প্রবণ রাস্তায় বেড়িয়ে পড়ছেন স্কুটি নিয়ে। মেয়ে কিংবা গৃহিণীর নাছোড় দাবি মেনে আবার অনেক সময় নিজের কাজের চাপে একপ্রকার বাধ্য হয়েই স্কুটি কিনে দিচ্ছেন বাড়ির কর্তারা, আর গৃহিনী সেই সুযোগে অবসর সময়ে স্কুটি শিখেই গাড়ি নিয়ে সন্তানদের টিউশন, স্কুল, বাজারঘাট করতে বেড়িয়ে পড়ছেন। কিন্তু তাতে কোনও আপত্তি নেই শহরবাসীর, আপত্তি তখনই যখন সেই মহিলা স্কুটি আরোহীই ভিড়প্রবণ এলাকায় নিয়ন্ত্রণ রাখতে না পেরে কোনও পথচারীকে ধাক্কা দিয়ে ফেলছেন। এই ঘটনা নতুন নয়, আমাদের শিল্পাঞ্চলেই প্রায়শই ঘটছে এই ধরণের দুর্ঘটনা। নতুন গাড়ি চালানো শিখে লাইসেন্স না হওয়া সত্ত্বেও শহরের রাস্তায় স্কুটি নিয়ে বেড়িয়ে দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন অনেক মহিলা ও তরুণী। এখানে প্রশ্ন উঠছে তাহলে এইসমস্ত আনকোরা বাইক আরোহীরা লাইসেন্স কীভাবে পেয়ে যাচ্ছেন? সে আর কঠিন কী? বর্তমানে দু-চাকার লাইসেন্স করে এরকম এজেন্টের সংখ্যা অগুনতি। আর তারাই মূলত কিছু টাকার লোভে এইসমস্ত মহিলা স্কুটি চালকদের ট্রায়াল পরীক্ষা না নিয়েই বেশি টাকার বিনিময়ে লাইসেন্স তৈরী করে দিচ্ছেন। যার ফলে গাড়ি চালানোর সঠিক নিয়মবিধি না জেনেই শহরের রাস্তায় গাড়ি চালানোর ছাড়পত্র পেয়ে যাচ্ছেন এইধরনের বাইক আরোহীরা। শুধু তাই নয়, শহরের বিভিন্ন রাস্তার মোড়ে পুলিশ ও সিভিক ভলেন্টিয়াররা বাইক আরোহীদের দাঁড় করিয়ে বিনা হেলমেটে বাইক চালানোর অপরাধে কমবয়সী যুবক ও পুরুষ বাইক আরোহীদের চালান কাটলেও মহিলা বাইক চালকদের মাথায় হেলমেট ও লাইসেন্স না থাকা সত্ত্বেও তাদের জরিমানা করে না পুলিশ। কি অদ্ভূত নিয়ম? তার মানে এই দাঁড়ালো যে পুরুষ বাইক আরোহী দুর্ঘটনার শিকার হলে তার মাথায় আঘাত লাগার আশঙ্কা রয়েছে অথচ মহিলা বাইক আরোহী দুর্ঘটনার শিকার হলে তার মাথায় আঘাত লাগার কোনও আশঙ্কা নেই। কি অকাট্য নিয়ম! আর ট্রাফিক পুলিশদের এই মহিলা বাইক আরোহীদের নমনীয় মানসিকতার জেরেই শহরের রাস্তাগুলি আজ এতটা বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে। প্রায় ছোট-বড় দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন মহিলা বাইক আরোহী থেকে শুরু করে সাধারণ পথচারীরা। একপ্রকার এহেন স্কুটিচালকদের আতঙ্কেই রাস্তা ছেড়ে কয়েক হাত দূরে ফুটপাথ দিয়ে চলাফেরা করছেন তারা। তবে এই প্রতিবেদন পড়ার পর শহরের পুলিশ প্রশাসন বা মোটর ভেহিক্যাল দফতর মোটর বাইক চালানোর ক্ষেত্রে কোনও কড়া পদক্ষেপ গ্রহণ করেন কিনা সেটাই দেখার।