eaibanglai
Homeএই বাংলায়লক্ষ লক্ষ পুণ্যার্থীর সমাগমে সরগরম জয়দেবের মেলা

লক্ষ লক্ষ পুণ্যার্থীর সমাগমে সরগরম জয়দেবের মেলা

নিজস্ব সংবাদদাতা,বীরভূমঃ- দ্বাদশ শতাব্দীতে রচিত ‘গীতগোবিন্দ’এর রচয়িতা কবি জয়দেব গোস্বামীর নামে জয়দেব কেঁদুলি মেলা পশ্চিমবঙ্গ তথা দেশের সবথেকে জনপ্রিয় প্রচীন গ্রামীণ মেলা। মকর সংক্রান্তির দিন প্রতি বছর বীরভূম জেলার কেঁদুলি গ্রামে অজয় নদের চরে বসে এই মেলা, চলে তিন দিন। এই মেলায় দেশ বিদেশ থেকে প্রায় লক্ষাধিক ভক্তের সমাগম হয়।

জয়দেব ছিলেন গৌড়ের রাজা লক্ষ্মণ সেনের সভাকবি। সংস্কৃত সাহিত্য এবং সঙ্গীত শাস্ত্রে জয়দেবের অসাধারণ পাণ্ডিত্য ছিল। তাঁর রচিত ‘গীতগোবিন্দ’ কাব্য বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে এক অমূল্য রত্ন। জার্মান কবি গ্যেটে এই কাব্যের অনুবাদ সংস্করণ পাঠ করে কাব্যটির ভূয়সী প্রশংসা করেছিলেন। কথিত আছে এই কাব্যের শেষে যে পদে ভগবান কৃষ্ণ, ভক্ত রাধার শ্রীচরণ নিজের মাথায় রাখার যাচ্ঞা জানিয়েছেন, (“দেহি পদপল্লবমুদারম্”) সেই পদটি লিখতে কবি দ্বিধা বোধ করায় স্বয়ং ভগবান নিজে ওই পদটি লিখে দেন।

বহু প্রাচীন জয়দেবের মেলা। মেলার উদ্ভাবন নিয়ে কথিত আছে নানা গল্প। তার মধ্যে বহুল প্রচলিত গল্পটি কবি জয়দেবের মকরসংক্রান্তির দিন গঙ্গা স্নান নিয়ে। কথিত আছে কবি জয়দেব গোস্বামী প্রতি বছর মকর সংক্রান্তিতে স্নান করতে যেতেন কাটোয়ার গঙ্গায়। এক বার তিনি অত্যন্ত অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং ওই দীর্ঘ পথ পাড়ি দেওয়া সম্ভব না হওয়ায় সংক্রান্তির আগের রাতে চোখে জল নিয়ে শুতে যান। সেই রাত্রে তিনি স্বপ্ন দেখেন তাঁর জন্য মা গঙ্গা উজানে এসে অজয় নদে মিলিত হলেন। তাই অজয় নদে স্নান করলেই তিনি গঙ্গাস্নানের ফল পাবেন। মনে করা হয়, কবি জয়দেবের সেই পুণ্যস্নান উপলক্ষেই তারপর থেকে মকর সংক্রান্তিতে কেঁদুলিতে অজয় নদের তীরে এই মেলা হয়ে আসছে।

প্রতিবছরের মতো এবারও পৌষ সংক্রান্তির ভোরে অজয় নদের চরে লক্ষাধিক পুণ্যার্থীর সমাগম হয়। চলে পুণ্য স্নান, পরে রাধা বিনোদের মন্দিরে পুজো দেওয়ার লম্বা লাইন পড়ে যায়। প্রতিবারের মতো এবারও অজয় নদের ধারে বসেছে মেলা। যেখানে প্রায় আড়াইশো আখড়ায় সাধু বাউল সন্ন্যাসীরা আশ্রয় নিয়েছেন। আখড়ায় আখড়ায় চলছে বাউল কীর্তন গানের জমাটি আসর। যে আসর চলবে রাতভর, মেতে ওঠবেন সাধু পুণ্যার্থীরা।

এই মিলন মেলায় ভক্তসমাগম ঘিরে যাতে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে তার জন্য বীরভূম জেলা পুলিশ ও আসানসোল দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের পুলিশ বাহিনী পুরো মেলা এলাকা ত্রিস্তরীয় নিরাপত্তায় মুড়ে ফেলেছে। করা হয়েছে বহু ওয়াচ টাওয়ার। সিসি ক্যামেরা ও ড্রোনের মাধ্যমে চলছে নজরদারি। প্রশাসনিক সূত্রে খবর এবছর মেলা প্রাঙ্গণে প্রায় ২০০টি সিসি ক্যামেরা ও ১৬টি ওয়াচ টাওয়ার বসানো হয়েছে। এমনকি জলপথেও চালানো হচ্ছে নজরদারি।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments