জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী,বীরভূমঃ- ব্যক্তিগত বা পারিবারিক জীবন – যাইহোক না কেন প্রাক্তনদের কোনো গুরুত্বই থাকেনা। কর্মক্ষেত্র, বিশেষ করে শিক্ষাঙ্গন হলে, সেখানকার অভিজ্ঞতা হয় তিক্ত। একদিন যেসব সহকর্মীরা তাদের দেখলে সম্মানের সঙ্গে দূরত্ব বজায় রাখত আজ তাদের আচরণ হয়ে পড়ে অন্যরকম। সম্মান করে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ানো তো দূরের কথা তারা নিজেদের অধিকারে হস্তক্ষেপ পর্যন্ত করতে দিতে রাজি হয়না। এক অজানা আতঙ্ক যেন তাদের সর্বদা তাড়া করে বেড়ায় – এই বুঝি তাদের জনপ্রিয়তায় হাত পড়তে চলেছে। একদিন বিদ্যালয়ের যেসব অনুষ্ঠানে তারা থাকতেন মধ্যমণি আজ আর সেখানে প্রাক্তনদের ডাক পড়েনা। যদিও নতুনদের জায়গা ছাড়তেই হয়। শিক্ষক দিবসের দিন তাদের যখন দূরে সরিয়ে রাখা হয় তখন সেটা বড় দৃষ্টিকটু লাগে। এখানেই অন্যরকম দৃষ্টান্ত স্থাপন করল শতবর্ষের দোড়গোড়ায় দাঁড়িয়ে থাকা বীরভূমের সাঁইথিয়া ব্লকের দেরপুর উচ্চ বিদ্যালয় (হাঃসাঃ)।
শিক্ষক দিবসের দিন বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে আয়োজিত হয় এক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের। সেখানে আমন্ত্রণ জানানো হয় বিদ্যালয়ের পাঁচজন প্রাক্তন শিক্ষক-শিক্ষিকাকে। এদের হাত ধরেই প্রত্যন্ত এলাকার এই বিদ্যালয়টি ধীরে ধীরে পরিচিতি লাভ করে। যদিও বয়স জনিত কারণে অন্যরা আসতে না পারলেও এসেছিলেন কালীকিঙ্কর ব্যানার্জ্জী।
উনার হাতে তুলে দেওয়া হয় পুষ্পস্তবক ও একটি উপহার। দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রছাত্রীরা উনাকে দিয়ে একটি কেক কাটিয়ে সেটি সবার মধ্যে বিতরণ করে।
অনেক দিন পর নিজের প্রিয় বিদ্যালয়ের শিক্ষক দিবসের মত অনুষ্ঠানে এসে খুশিতে ভরে ওঠে কালীকিঙ্কর বাবুর মন। আবেগে তার কণ্ঠ রুদ্ধ হয়ে ওঠে। তিনি বললেন – আজ আর কিছু বলবনা। এটা আমার পীঠস্থান। খুব আনন্দ হচ্ছে।
দিনটির স্মরণে একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বিদ্যালয়ের দশম ও দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রছাত্রীরা সকল শিক্ষক-শিক্ষিকা ও শিক্ষাকর্মীদের কপালে চন্দনের টিপ পরিয়ে, হাতে পুষ্পস্তবক তুলে দিয়ে ও বন্ধন-ডোর বেঁধে এবং প্রণাম করে সম্মাননা প্রদান করে।
বিদ্যালয়ের শিক্ষক পরমানন্দ দের তত্ত্বাবধানে ও অন্যান্য শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সহযোগিতায় উদ্বোধনী সঙ্গীত পরিবেশন করে অঙ্কিতা, রাসেশ্বরী, অনন্যা, ঝুম্পা সহ অন্যান্যরা। অন্বেষা, রিয়া, চম্পাদের নৃত্য উপস্থিত দর্শকদের মুগ্ধ করে।
অনুষ্ঠানের সবচেয়ে আকর্ষণীয় অংশ ছিল বিদ্যালয়ের শিক্ষক পরমানন্দ দে রচিত ট্রেনের নিত্যযাত্রী ও হকারদের মধ্যে গড়ে ওঠা সখ্যতা নিয়ে তৈরি নাটক ‘ওয়ান থ্রি জিরো ওয়ান থ্রি আপ’। শুভম, সৌমেন, তিতলি, বিশ্বরূপ, নীলাঞ্জন, দিগন্ত,অঙ্কিতা, রিয়া, অনন্যা সহ বিয়াল্লিশ জন ছাত্রছাত্রীর নিখুঁত অভিনয় নাট্যকারের ভাবনা তুলে ধরে। সত্যিই এটা এক অনন্য প্রয়াস।
এছাড়াও এবছর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় ছাত্র ও ছাত্রীদের মধ্যে যারা সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছে তাদের হাতে ছোট্ট উপহার তুলে দেওয়া হয়। পাশাপাশি বাংলা, দর্শন প্রভৃতি বিষয়ে যারা সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছে তাদেরকেও পুরস্কৃত করা হয়।
এর আগে যার জন্মদিনকে কেন্দ্র করে এই বিশেষ দিনটি পালন করা হয় সেই সর্বপল্লী ডঃ রাধাকৃষ্ণানের প্রতিকৃতিতে মাল্যদান করে তাঁর প্রতি সম্মাননা প্রদান করেন বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হরষিত বিশ্বাস সহ উপস্থিত বিশিষ্ট ব্যক্তিরা।
সমগ্র অনুষ্ঠানটি সুচারুভাবে সঞ্চালনা করেন শিক্ষিকা জয়িতা মিত্র, শিক্ষক উত্তম পাল ও সমর হাজরা।
হরষিত বাবু বললেন- আমাদের বিদ্যালয় শতবর্ষে পদার্পণ করতে চলেছে। স্বাভাবিক ভাবেই প্রত্যেকের মধ্যে আলাদা উৎসাহ, উদ্দীপনা কাজ করছে। সেটাকেই পাথেয় করে আমরা এগিয়ে চলেছি। এরজন্য তিনি শিক্ষক-শিক্ষিকা থেকে শুরু করে শিক্ষাকর্মী সহ ছাত্রছাত্রী ও তাদের অভিভাবকদের ভূয়সী প্রশংসা করেন।
বিদ্যালয়ের দশম ও দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রছাত্রীরা মিলে সকল শিক্ষক শিক্ষিকা ও শিক্ষাকর্মী বৃন্দকে চন্দন পুষ্প স্তবক বন্ধন ডোর ও প্রণাম করে সম্বর্ধিত করে।