শুভ্রাচল চৌধুরী, বাঁকুড়া:- বাঁকুড়ার মন্দির নগরী বিষ্ণুপুর। শীতকালে পর্যটকদের ঢল নেমেছে বিষ্ণুপুরে। একে একে ঘুরে দেখছেন বিষ্ণুপুরের প্রতিটি পর্যটনকেন্দ্র। এ পর্যটন কেন্দ্র গুলির মধ্যে অন্যতম হল টেরাকোটার মদনমোহন মন্দির। অত্যন্ত সুন্দর পোড়ামাটি-অলংকরণ রয়েছে বিষ্ণুপুরের নগরদেবতা মদনমোহনের মন্দিরে। ১.৪ মিটার উঁচু মাকড়া-পাথরের ভিতের উপর স্থাপিত মন্দিরটি। দক্ষিণ দিকে মুখ। মিষ্টি রোদে পর্যটকেরা পরখ করে নিচ্ছেন টেরাকোটার আসল বাঁধন এবং শৈলী। টেরাকোটার প্যানেলগুলিতে ফুটে উঠেছে পশু-পাখি থেকে ভাস্কর্য, কৃষ্ণ লীলা, দশাবতার ও অন্যান্য পৌরাণিক কাহিনী। উপরের দিকে স্থান পেয়েছে প্রধানতঃ যুদ্ধদৃশ্য।
বাঁকুড়া জেলার বিষ্ণুপুর শহরের বাবু ডাঙ্গায় অবস্থিত মদনমোহন মন্দিরটি দৈর্ঘ্যে-প্রস্থে ১২.২ মিটার ও উচ্চতায় প্রায় ১০.৭ মিটার। তৎকালীন মল্লরাজ দুর্জন সিংহ ১০০০ মল্লাব্দে ( ১৬৯৪ খ্রীষ্টাব্দে ) এটির প্রতিষ্ঠা করেন। দক্ষিণের দেওয়ালের নিবন্ধীকরণ অনুযায়ী , “রাধাকৃষ্ণের পদকমলে তাঁদের প্রীতির জন্য বিশুদ্ধাত্মা দুর্জন সিংহ ভূমিপতি দ্বারা নিজ চিত্তরূপ অলির সঙ্গে এই সুন্দর রত্ন-মন্দির ১০০০ মল্লাব্দে নির্মল শুচি মাসে প্রদত্ত হল।” তবে পর্যটকদের জন্য এত গভীরে না গেলেও চলবে। সকাল সকাল বিষ্ণুপুর ঘুরুন আর তার সঙ্গে এই মন্দির যদি দেখেন তাহলে কেটে যাবে সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত। খুঁজে পাবেন ইতিহাস।
মারাঠা দস্যুরা ভাস্কর পন্ডিতের নেতৃত্বে এক লক্ষ সেনা নিয়ে বিষ্ণুপুর আক্রমণ চেষ্টা করলে রাজা সমরসজ্জায় দৃষ্টি না দিয়ে প্রজাদের মদনমোহনের উপাসনা করার নির্দেশ দেন। কথিত আছে মদনমোহন নিজহস্তে কামানের তোপ বর্ষণ করে বিষ্ণুপুরকে রক্ষা করেন। যদিও ঐতিহাসিকেরা এই কিংবদন্তির সাথে সহমত নন। তাদের মতে বিষ্ণুপুরের দুর্গ সেসময় অত্যন্ত দৃঢ় ছিল যা ভেদ করা মারাঠা দস্যুদের পক্ষে সম্ভব হয়নি। মদনমোহন বিষ্ণুপুর শহরের “নগর দেবতা”। এবং মদনমোহন মন্দির বিষ্ণুপুর শহরের অন্যতম বিশেষ একটি মন্দির।