eaibanglai
Homeএই বাংলায়আইনের ঘরে লালবাতি জ্বালিয়ে ছ'দিন নীল বাতিতে ঘুরলেন শিক্ষকেরা

আইনের ঘরে লালবাতি জ্বালিয়ে ছ’দিন নীল বাতিতে ঘুরলেন শিক্ষকেরা

মনোজ সিংহ, দুর্গাপুর: শহরের শিক্ষকেরাই বেপরোওয়া ভাবে নিয়ম ভেঙ্গে নীল বাতির গাড়ি চেপে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশকে তুচ্ছ করলেন! লাগাতার ছয় দিন ধরে মাস্টার মশাইরা এমনটা করলেন কিন্তু চুপিচুপি নয়, বুক চিতিয়েই, যা নিয়ে এখন শোরগোল পড়েগেছে নেট পাড়ায়।

মাধ্যমিক পরীক্ষার যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবে এবার দুর্গাপুরের শিক্ষক মৃণাল সাহাকে দায়িত্ব দেওয়া হয় পর্ষদের পক্ষ থেকে। তার কাজ ছিল দুর্গাপুর মহকুমার মাধ্যমিক পরীক্ষা কেন্দ্রগুলিতে সরকারি গাড়ি চেপে ঘুরে ঘুরে দেখভাল করা আর এই দেখভাল এর কাজটি করতে গিয়ে মৃণাল কিন্ত এবার ফাঁসলেন সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অমান্য করার দায়ে। এতে আবার নাম জড়ালো জনপ্রিয় এক জাতীয় শিক্ষকেরও। যা নিয়ে অস্বস্তি জেলা শিক্ষা দপ্তরেও।

দেশের শীর্ষ কোর্ট ২০১৩ সালের ১০ ডিসেম্বর সরকারি পদাধিকারীদের গাড়িতে লাল বাতি, নীল বাতি ব্যবহারের ওপর একটি সুস্পষ্ট নির্দেশ জারি করে। তাতে তালিকা প্রকাশ করে কোন কোন পদমর্যাদার আধিকারিক লাল বা নীল বাতি ব্যবহার করার যোগ্য, এমনকি ওই বাতিগুলির ধরন ঠিক কেমন হবে তাও স্পষ্ট ভাবে নির্দিষ্ট করে দেয়। এতত সত্বেও রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় ছোট খাটো আধিকারিক এমনকি জেলায় জেলায় স্থানীয় থানার ওসি, আইসি’রাও লাল, নীল বাতি নিয়ে দিনরাত এলাকায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন দেখে, রাজ্য সরকার ২০২১ সালে এ ব্যাপারে কড়া অবস্থান নেয়। তাতে রাজ্যের রাজ্যপাল, মুখ্যমন্ত্রী, কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি, রাজ্য বিধানসভার স্পিকার, ক্যাবিনেট মন্ত্রীবর্গ এবং রাজ্যের বিরোধী দলনেতা এবং হাইকোর্টের অনন্য বিচারপতিগনের জন্য লাল বাতির গাড়ি চড়ার মান্যতা দেওয়া হয়। আবার, কলকাতার মহানাগরীক, রাজ্যের রাষ্ট্রমন্ত্রীগন, সরকারের মুখ্য সচিবের গাড়িতে কোনো ফ্ল্যাশার ছাড়া লাল বাতি লাগানোর অনুমতি দেওয়া হয়। পাশাপাশি, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মোতাবেক গাড়িতে নীল বাতি লাগানোর অনুমতি রয়েছে সংসদে সচিবদের। এবং রাজ্যের এডভোকেট জেনারেল, নির্বাচন কমিশনার, রাজ্যের অতিরিক্ত মুখ্য সচিব, জেলাশাসক, রাজ্য পুলিশের ডিজি, দমকলের ডিজি, আয়কর ও শুল্ক কমিশনার, জেলা পুলিশ সুপার, মহকুমা শাসক, পুলিশের কোনো পেট্রোলিং কার ও কনভয়ের গাড়ি।

কিন্তু, ওই তালিকায় কোথাও স্কুল, কলেজের শিক্ষক, শিক্ষিকাদের নীল বাতি লাগানোর গাড়ি চড়ে ঘোরার কোন অনুমতিই নেই। শিক্ষকদের এই হেন নিয়ম ভেঙ্গে ঘোরায় শহর জুড়ে এখন শোরগোল পড়েগেছে। বিশেষ করে, রাজ্যের শাসকদের এক শিক্ষক নেতা সরাসরি ফেসবুকে বিষয়টি নিয়ে একটি তির্যক পোস্ট করায় বিতর্ক দানা বেঁধেছে। শিল্পাঞ্চলের শিক্ষক নেতা বিবেকানন্দ অধিকারী গত মঙ্গলবার তার নিজের ফেসবুকে পোস্ট করে দাবি করেন – শিক্ষকেরা রাজ্যের ১৯৮৯ সালের মোটর ভেহিক্যাল আইনকে বুড়ো আঙ্গুল দেখালেন। তিনি নিজে শাসকদলের একজন শিক্ষক নেতা, তাই বিবেকানন্দের ওই পোস্টকে ঘিরে শিক্ষক মহলে চাঞ্চল্য ছড়ায়। বিবেকানন্দ বলেন “এটা অন্যায় কাজ হয়েছে। আমাদের শ্রদ্ধেয় মুখ্যমন্ত্রী লালবাতির গাড়ি পেলেও তা ব্যবহার করেন না। আর শিক্ষকেরা যাদের দেখে সমাজ শিখবে, তারাই এভাবে পরীক্ষার দিন গুলিতে বেপরোয়া ভাবেন নীল বাতির গাড়ি চেপে শহরময় ঘুরে বেড়ালেন? এটা সত্যি খুবই লজ্জার”। নীল বাতি লাগানো যুগ্ম আহ্বায়কের গাড়িতে স্কুলে স্কুলে দেদার ঘুরছেন জাতীয় শিক্ষক কলিমৃল হক নিজেও। একজন জাতীয় শিক্ষক কি করে এমন নিয়ম ভাঙ্গলেন? এক প্রশ্নের জবাবে হক বললেন, “আমাকে পরিদর্শনে ডাকা হয়েছিল। সরকার গাড়ি দিয়েছে। তাতে চেপেছি। এর বেশি কিছু বলতে পারব না।” ‌তিনি বিষয়টিকে নিয়ে করা ফেসবুক পোস্টটিকে ঘিরে বলেন, “উনি নিজে নিয়মিত স্কুলে যান তো? ক্লাস করেন তো? খোঁজ নিন আপনারা”।

কিন্তু, কি বলছেন যুগ্ম আহ্বায়ক মৃণাল সাহা? তার বয়ান, “আমাদের দেওয়া রিকু্ইজিশনের সাপেক্ষে জেলা প্রশাসন গাড়ি দিয়েছিল। ওই গাড়িটি নীল বাতি লাগানো ছিল, আমরা নিজেরা ওটি লাগাইনি। তাই এই ব্যাপারে দায় কিন্তু প্রশাসনের, আমাদের নয়।” জেলা স্কুল পরিদর্শক সুনীতি সাংফুই এ বিষয়ে প্রায় একই সাফাই দিয়ে বলেন,”এটা নিয়ে যে একটা বিতর্ক হচ্ছে শুনেছি। এটাও ঠিক কথা যে শিক্ষকেরা নীল বাতি লাগানো গাড়িতে স্কুলে স্কুলে ঘুরেছে মাধ্যমিক পরীক্ষার দিন গুলিতে”। তিনি বলেন, “জেলা প্রশাসনের তরফ থেকে জেলা সর্বশিক্ষা মিশন তরফের ওই গাড়ি শিক্ষকদের জন্য দেওয়া হয়েছিল। এখন জেলা প্রশাসনি কেন এটা দিল তা আমার জানা নেই।”
শিক্ষক, স্কুল পরিদর্শক সকলে এই বিষয়ে দায় নিজেদের কাঁধ থেকে ঝেড়ে জেলা প্রশাসনের ওপর চাপাতে চাইছেন এখন। কিন্তু শিক্ষকেরা গাড়ি চাপার সময় নিজেরাই একটি বারও কি নীল বাতি নিয়ে তাদের আপত্তির কথা জানিয়ে ছিলেন? নাকি, তারা গর্বের সাথে বিষয়টি বেশ উপভোগ করলেন পরীক্ষার কটা দিন? প্রশ্ন আরো, সব জেনে বুঝে জেলা প্রশাসনই বা কি করে এমন বেআইনি কাজ করল? এই প্রসঙ্গে দুর্গাপুরের মহাকুমা শাসক সৌরভ চট্টোপাধ্যায় শনিবার বলেন “বিষয়টির বিস্তারিত খোঁজ নেওয়া হচ্ছে, কেন এমন হলো?”

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments