নিজস্ব প্রতিনিধি, এই বাংলায়ঃ কঠোর অধ্যাবসায় এবং অদম্য ইচ্ছাশক্তি থাকলে যে শারীরিক প্রতিবন্ধকতাও কাউকে দমিয়ে রাখতে পারে না তা ফের একবার প্রমাণ করল এক মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী। দৃষ্টিশক্তিজনিত প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে মাধ্যমিকে সাফল্যের সঙ্গে উত্তীর্ণ হয়ে সকলকে তাক লাগিয়ে দিল বাঁকুড়ার পাত্রসায়র ব্লক এলাকার বেলুট হাই স্কুলের ছাত্রী সোমাশ্রী মালিক। বাঁকুড়ার ইন্দাসে জন্ম হলেও ছোট থেকেই দৃষ্টিশক্তিহীন সোমাশ্রীকে পাত্রসায়রের দয়ালপুর গ্রামে নিজের কাছে এনে মানুষ করেন দাদু বুধন আঁকুড়ে। দাদুর উদ্যোগেই বেলুট হাইস্কুল থেকে স্কুল জীবন শুরু হয় সোমাশ্রীর। এবার সেই স্কুল থেকেই মাধ্যমিকে ৩৮৮ নং পেয়ে সাফল্যের সঙ্গে উত্তীর্ণ হয়েছে সোমাশ্রী। তাঁর এই সাফল্যের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করতেই সোমাশ্রী নিজের মুখেই জানালো, মামা দাদুর উদ্যোগেই তাঁর স্কুল শিক্ষার শুরু, প্রত্যেক দিন মামা সকালে ও সন্ধ্যাবেলায় পড়ার বই পড়ে শোনাতো সোমাশ্রীকে। সেই পড়া শুনে শুনেই মাধ্যমিকে রাইটারের সাহায্যে সাফল্য বলে জানালো সোমাশ্রী। ভবিষ্যতে শিক্ষকতার স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে চলা সোমাশ্রী ভালোবাসে বাংলা ও ইতিহাস পড়তে। তবে সাফল্যের মাঝেও আতঙ্ক পিছু ছাড়ছে না। কারণ, ছোট থেকে মাধ্যমিক পর্যন্ত তার পড়াশোনার যাবতীয় খরচ সামলেছে দাদু ও মামা। সামান্য বাঁশের ঝুড়ি বিক্রি আর তাল শাঁস বিক্রি করে চলে অভাবের সংসার। ফলে তার উচ্চশিক্ষার জন্য যে প্রচুর অর্থের প্রয়োজন তা জোগাড় করা দুঃসাধ্য। এরকম পরিস্থিতিতে তাহলে কী থমকে যাবে সোমাশ্রীর শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন? এই দুশ্চিন্তায় ঘুরপাক খাচ্ছে পরিবারের মনে। যদিও সোমাশ্রী ও তার পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন বেলুট হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক দিলীপ কুমার রায়। তিনি জানিয়েছে, সোমাশ্রী স্কুলের গর্ব। পঞ্চম শ্রেনী থেকে সোমাশ্রীর পাশে স্কুল কর্তৃপক্ষ যেভাবে সহযোগিতা করে এসেছে ভবিষ্যতেও সেই একইভাবে তাঁরা সহযোগিতা করবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। উচ্চমাধ্যমিকে ভর্তির ফিস সহ অন্যান্য সমস্ত খরচ মকুব করার পাশপাশি সোমাশ্রীর পড়াশোনার যাবতীয় খরচ স্কুল বহন করবে বলে জানিয়েছেন প্রধান শিক্ষক দিলীপ কুমার রায়। স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান তাপস বাড়ি জানিয়েছেন, সোমাশ্রী গ্রাম ও গ্রাম পঞ্চায়েতের গণ্ডী ছাড়িয়ে পাত্রসায়র ব্লক তথা জেলার গর্ব। অতিতে যেভাবে সকলে তার পাশে ছিলেন আগামী দিনেও সেভাবে পাশে থাকবেন বলে তিনি জানান।