eaibanglai
Homeএই বাংলায়অনাবৃষ্টির জের, বৃষ্টির আশায় বুদবুদের মাড়ো গ্রামে ব্যাঙের বিয়ে দিল গ্রামবাসীরা

অনাবৃষ্টির জের, বৃষ্টির আশায় বুদবুদের মাড়ো গ্রামে ব্যাঙের বিয়ে দিল গ্রামবাসীরা

দেব লাহা, দুর্গাপুরঃ-  অনাবৃষ্টি। ভরা বর্ষায় বৃষ্টির দেখা নেই। আর জলের অভাবে থমকে খারিফ মরশুমের আমন ধানের চাষ। মাথায় হাত পড়েছে চাষীদের। আর তাই বৃষ্টির আশায় ব্যাঙের বিয়ে দিল বুদবুদের মাড়ো গ্রামের বাসিন্দারা। পুরহিত ডেকে হিন্দু রীতি মেনে বিয়ের পাশাপাশি, পাত পেড়ে খাওয়ানো হল। বিয়ে শেষে ব্যাঙ দম্পতিকে গোটা গ্রামে শোভাযাত্রা করে ঘোরানো হল। 

   উল্লেখ্য, শ্রাবন মাসের শেষ পর্যায়। ক্যালেন্ডারে ভরা বর্ষাকাল। তারপরও আকাশে মেঘের দেখা নেই। অনাবৃষ্টি। তার ওপর সেচ ক্যানেলে বন্ধ করা হয়েছে জলের জোগান। আর তাতেই মাথায় হাত পড়েছে শস্যগোলা পুর্ব বর্ধমানের গলসী-১ নং ব্লকের চাষীদের। সপ্তাহখানেক আগে ডিভিসি ৭০ হাজার একরফুট জল ছেড়েছিল। তাতে জমিতে বীজতলার কিছুটা কাজে লেগেছে। কিন্তু মাঠে জল না থাকায় চাষ দেওয়া হয়নি। ফলে দুঃশ্চিন্তা পড়েছে চাষীরা। গত মরশুমে গলসী-১ নং ব্লকের ১৭ হাজার ৬০০ হেক্টর জমি চাষ হয়েছিল। চলতি মরশুমে বৃষ্টি না হলেও ব্লকে বিকল্প সেচ মাধ্যমে কমপক্ষে সাড়ে ১৩ হাজার হেক্টর চাষ হবে বলে আশাবাদী ব্লক কৃষি দফতর। এদিকে গলসী-১ নং ব্লকের বুদবুদের মাড়ো গ্রামের চাষীদের দুঃশ্চিন্তায় রাতের ঘুম ছুটেছে। একদিকে অনাবৃষ্টি তার ওপর গ্রামে সেচ ক্যানেলে জল বন্ধ। বিকল্প সেচের কোন ব্যাবস্থা নেই।  আর তাই বৃষ্টির জলের আশায় তীর্থেরকাক হয়ে বসে গ্রামবাসীরা।  অন্ধবিশ্বাস ব্যাঙের বিয়ে দিলে হয়তো বর্ষায় নামবে। আর তাই হিন্দু বিবাহ রীতি মেনে এক জোড়া কুনো ব্যাঙের সাড়ম্বরে বিয়ের আয়োজন করে গ্রামের দাস পাড়ার বাসিন্দারা। উদ্যোক্তা গ্রামের সঞ্জয় রুইদাস নামে এক কৃষক। বিয়ের কনেপক্ষ ছিলেন গ্রামেরই মানিক রুইদাস। বরপক্ষ ছিলেন উত্তম রুইদাস।  সোমবার ভোরে রীতি মেনে নিশিজল আনা হয়। সকালে সাজানো হয় বিয়ের মন্ডপ। পুরোহিত ছিলেন সদানন্দ ব্যানার্জী। বিয়ের যাবতীয় আচার মেনে দুই ব্যাঙ্গের বিয়ে হয়। গায়ে হলুদ থেকে সম্প্রদান ও সিন্দুরদান পর্ব, কোন অংশে খামতি ছিল না। শঙ্খধ্বনি আর উলুধ্বনিতে মন্ডপ প্রাঙ্গন উৎসবে মুখরিত হয়। বিয়ের অনুষ্ঠান শেষে ছিল মধ্যাহ্ন ভোজন। পাত পেড়ে খাওয়ানো হয় খিচুড়ি। সঙ্গে ছিল কুমড়োর তরকারি, চাটনি, পাপড়, বঁদে। সাড়ম্বরে হয় বিয়ের যাবতীয় আচার অনুষ্ঠান। বিকালে ছিল ব্যঙের নবদম্পতিকে গ্রাম প্রদক্ষিন। শোভাযাত্রা সহকারে সানাইয়ের সুরে ঘোরানো হয় গ্রামে। প্রশ্ন কেন এই ব্যাঙের বিয়ে? কথিত আছে, প্রাচীনকালে বরুণদেবকে তুষ্ট করতে ব্যাঙের বিয়ের আয়োজন করা হয়। মানুষের বিশ্বাস ছিল ব্যাঙের ডাকে বরুণদেব বৃষ্টি নামান পৃথিবীর বুকে। বৃষ্টি ডাকতে বাংলা সহ গোটা দেশে একসময়ে এই রীতি ছিল বহুল প্রচলিত। কিন্তু, আধুনিক সময়ের অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে সেই রীতিতে ছেদ পড়ে। এমনকী ‘সংস্কার-কুসংস্কারের’ বেড়াজালে অনেকটাই কমে আসে এই রেওয়াজ। কিন্তু এখনও প্রচীন বিশ্বাসে ভর করেই অনাবৃষ্টি থেকে মুক্তি পেতে চাইছেন গ্রামবাসীরা।তাই হিন্দু রীতি মেনেই ব্যাঙের বিয়ে হল বলে জানিয়েছে মাড়ো গ্রামের বাসিন্দারা। তবে ব্যাঙের বিয়ে এই প্রথম নয়, এর আগেও মাড়ো গ্রামে একাধিকবার ব্যাঙের বিয়ে হয়েছে। ফল পেয়েছে গ্রামবাসীরা। আর তাই বৃষ্টির আশায় এবারও ব্যাঙের বিয়ের আয়োজন। এদিনের অনুষ্ঠানে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়

গ্রামেরই উৎপল রুইদাস, বুধন রুইদাস, রাজু রুইদাস, তাপস রুইদাস, মৃতন আকুড়ে প্রমুখ।

এছাড়াও সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয় পার্শ্ববর্তী গ্রামের পঞ্চায়েত সদস্য রাজীব খান। তিনি বলেন,”অনাবৃষ্টির জেরে চাষ হয়নি এখনও। গ্রামে দুঃশ্চিন্তায় বাসিন্দারা। গ্রামবাসীদের বিশ্বাস ব্যাঙের বিয়ে দেওয়া হলে, বৃষ্টি নামবে। তাই রীতি মেনে বিয়ের আয়োজন। তাতে যদি বৃষ্টি নামে আশায় রয়েছি। গ্রামের মানুষের স্বার্থে পাশে দাঁড়িয়েছি।” বিয়ের উদোক্তা,” প্রচলিত লোকাচার আছে,  ব্যাঙের বিয়েতে তুষ্ট হয়ে বরুন দেবতা ধরণীকে বাঁচাতে জল দান করেন। সেই বিশ্বাসের ওপর নির্ভর করেই এদিনের বিয়ের আয়োজন। সেই আশা তে বিয়ের আয়োজন।” 

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments