জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী, বর্ধমানঃ- বয়স যে কেবল একটা সংখ্যা – ঘণ্টা, দিন, মাস, বছরের সমষ্টি সেটা আবার ঐসব প্রবীণ ব্যক্তিরা প্রমাণ করে দিলেন। ওদের কেউ শিক্ষক, কেউ কেউ আবার কেন্দ্র বা রাজ্য সরকারের উচ্চ পদস্থ কর্মচারী, গবেষক। অধিকাংশের বয়স সত্তর অতিক্রম করে গ্যাছে। কেউ কেউ আবার আশি ছুঁই ছুঁই। দীর্ঘদিন আগে দীর্ঘ কর্মজীবন থেকে অবসর নিলেও নিয়মিত বৈকালিক ‘আড্ডা’-টা ঠিক থাকে। বয়সজনিত কারণে স্বাভাবিকভাবেই শরীর না চললেও মন কিন্তু আজও যুবকের মতই তরতাজা। ওরা সব পূর্ব বর্ধমানের নবাবহাটের কাছে গড়ে ওঠা শহরের মধ্যে আর এক শহরের বাসিন্দা।
একটা সময় রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের বাসিন্দা ছিলেন ওরা। অবসরের পর বর্তমানে পাশাপাশি থাকার ফলে ধীরে ধীরে নিজেদের মধ্যে সখ্যতা গড়ে উঠেছে। যেহেতু উনারা মোবাইল কালচারে বিশ্বাসী নন তাই সখ্যতাটা ঘনিষ্ঠতায় পরিণত হতে সময় লাগেনি বেশিদিন। তাইতো কোনো এক বৈকালিক আড্ডায় পিকনিকের প্রস্তাব উঠলে ফেলে আসা দিনগুলোর মত পুরুষরা কিশোর সুলভ এবং মহিলারা কিশোরী সুলভ আনন্দে মেতে ওঠে। নিজ নিজ বাড়িতে আড্ডার প্রস্তাবটা তুললে উনাদের সন্তান বা নাতি-নাতনিরা বাধা না দিয়ে উল্টে উৎসাহ দিয়েছেন। যদিও মনের মধ্যে একটু দুশ্চিন্তা তাদের ছিল।
নবাবহাট থেকে মাত্র ২০-২২ কিমি: দূরে অবস্হিত ওরগ্রাম ফরেস্টকে উনারা পিকনিক করার জায়গা হিসাবে বেছে নেন। তারপর গত ৯ ই জানুয়ারি সুশান্ত ব্যানার্জ্জী, কনিকা ব্যানার্জ্জী, সুনীল সাধু, প্রসাদি সাধু, নীরদবরণ বারুই, তন্ময় ভট্টাচার্য, ফাল্গুনী ভট্টাচার্য, প্রদীপ ঘোষ, সুপ্রীতি ঘোষ, নির্মল চৌধুরী, চাঁপা চৌধুরী, মিস্টার সিকদার প্রমুখরা রিজার্ভ বাসে চেপে ওরগ্রাম ফরেস্টের উদ্দেশ্যে যখন যাত্রা শুরু করেন তখন মুহূর্তের মধ্যে তারা ফিরে গিয়েছিলেন অতীতের সোনালী দিনগুলোতে। ফলে বাসে আর একদফা আনন্দ। কেউ কেউ আবার গুন গুন করে গান করতে শুরু করে দেন। রাস্তার বিভিন্ন মোরে প্রবীণ মানুষগুলোর আনন্দের সাক্ষী থেকেছে পথচলতি পথিকরা বা বাসস্ট্যান্ডে বাসের অপেক্ষায় থাকা মানুষজন।
ওরগ্রামে পৌঁছানোর পর আর এক বিষ্ময় অপেক্ষা করছিল। যে মানুষগুলোর বাড়িতে একগ্লাস জল গড়িয়ে খাওয়ার মত শারীরিক ক্ষমতা নাই তারাই দুর্বল হাতে নিজেরাই রান্না শুরু করে দেন। কেউ কেউ আবার জোড়ায় জোড়ায় দোলনাতে চেপে বসেন এবং পরস্পরের কাঁধে হাত দিয়ে ছবিও তোলেন। মুহূর্তের মধ্যে অনেক স্হানীয় মানুষ বিহ্বল হয়ে দাঁড়িয়ে পড়েন এবং সেই স্বর্গীয় দৃশ্য উপভোগ করেন।
সুশান্ত ব্যানার্জ্জীর পুত্রবধূ সোমা ব্যানার্জ্জী বললেন – আমার শ্বশুর ও শাশুড়ি দু’জনেই অসুস্থ। তাই পিকনিকের কথা বলতে চিন্তিত হলেও বাধা দিইনি। আমরাও চাই উনারা আনন্দে থাকুন। প্রত্যেকের সন্তানদের কণ্ঠে সোমা দেবীর কথার প্রতিধ্বনি শোনা যায়।
অন্যদিকে সুশান্ত ব্যানার্জ্জীর বক্তব্য – সত্যিই খুব আনন্দ হচ্ছিল। এটা ভাষায় প্রকাশ করা যায়না। তার কথা শেষ হওয়ার আগেই অন্যরা সমস্বরে নিজেদের আনন্দ প্রকাশ করে ফেলেন।
প্রবীণদের পিকনিকের কথা শুনে কলকাতার বিখ্যাত মোটিভেটার দেবাশীষ মজুমদার বললেন – সত্যিই খুব ভাল খবর। এই আনন্দ কিন্তু উনাদের পরমায়ু অনেক বাড়িয়ে দিল। উনারা নিজেদের আড্ডায় আরও নতুন নতুন পরিকল্পনা করবেন। তবে পরিস্থিতির কথা তাদেরকেও মাথায় রাখতে হবে।