eaibanglai
Homeএই বাংলায়মধু-অনুপ-পঙ্কজ-শতদলের স্বাস্থ্য সেবার নামে কসাইখানার কারবার দুর্গাপুরে

মধু-অনুপ-পঙ্কজ-শতদলের স্বাস্থ্য সেবার নামে কসাইখানার কারবার দুর্গাপুরে

মনোজ সিংহ, দুর্গাপুরঃ- আসানসোল দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চল দ্রুততার সাথে দক্ষিণবঙ্গের স্বাস্থ্য নগরী রূপে আত্মপ্রকাশ করছে। দেশ-বিদেশের নামিদামি সংস্থার হাসপাতাল সহ বেশ কয়েকটি মেডিকেল কলেজ ইতিমধ্যেই শিল্পাঞ্চলের মানুষের স্বাস্থ্য পরিসেবার মান উন্নয়নের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এরই মধ্যে একশ্রেণীর কয়লা মাফিয়া, কুখ্যাত জমির দালাল, প্রতারক প্রোমোটার ও যৌন লালসায় মত্ত প্রাক্তন এক রাজ্য সরকারি কর্মী স্বাস্থ্য পরিসেবার নামে রীতিমতো কসাইখানা চালাচ্ছে শিল্পাঞ্চলে। কয়েক কোটি টাকা খরচা করে স্বাস্থ্য দপ্তরের অনুমোদন নিয়ে সুপার স্পেশালিটি কোথাও আবার মাল্টি সুপার স্পেশালিটি নাম নিয়ে চলছে মানুষ খুন করার কারখানা। স্বাস্থ্য পরিসেবার নামে প্রায় প্রতিদিনই কয়েক কোটি টাকা রোজকার করছে এই সব মাফিয়াদের হাসপাতাল ও নার্সিং হোমগুলি। সব কিছু চোখের সামনে দেখেও কোন এক অজানা কারণে রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তরের উচ্চ আধিকারিকরা চোখে ঠুলি পড়ে বসে আছেন এমনই অভিযোগ শিল্পাঞ্চলের বাসিন্দাদের।

উল্লেখ্য কয়েক দিন আগেই দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলের প্রাণ কেন্দ্রে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ১১ বছর বয়সী বালকের চিকিৎসায় গাফিলতির কারণে মৃত্যুর জন্য বিক্ষোভ সংগঠিত হয়। গরিব রোগীর পরিবার ও পরিজনেরা সেদিন হাসপাতালের মূল ফটকের সামনে বিক্ষোভ দেখিয়ে এই নির্মম অত্যাচার ও চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের চরম শাস্তি দাবি করে। ওই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অবস্থা বেগতিক বুঝে নিজেদের সমস্ত দোষ স্বীকার করে সমাজের কয়জন বিশিষ্ট ব্যক্তির মধ্যস্থতায় একটি লিখিত চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করে জানাই, মৃত ১১ বছর বয়সী ওই বালকের পরিবারকে দিন দুয়েকের ভেতরেই ৫০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেবে ওই হাসপাতাল। একমাত্র ছেলেকে অকালে হারিয়ে বাকরুদ্ধ রোগীর পরিবারের লোকজনেরা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ওই চুক্তিনামাকে বিশ্বাস করে সাময়িক শান্ত হয় এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দেওয়া সময় পর্যন্ত ক্ষতিপূরণের অপেক্ষায় বসে থাকেন। কিন্তু দুর্গাপুরের চার নরপিশাচের ওই হাসপাতাল তাদের শয়তানির কুট বুদ্ধি প্রয়োগ করে সদ্য একমাত্র পুত্রহারা ওই গরিব পরিবারের সাথে নতুন করে ছলনার রূপরেখা তৈরি করে। ঘটনার ঠিক একদিন পরেই চুপি সারিতে কাউকে কোন কিছু না জানিয়ে মধ্যরাত্রে স্থানীয় থানায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ লিখিত ভাবে অভিযোগ জানাই যে ওই ১১ বছর বয়সী বালকের মৃত্যুর জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে তার পরিবারবর্গরা মানসিক, শারীরিক হেনস্তা করে তৎসহ ভয় দেখিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে বাধ্য করে ওই চুক্তিপত্র তৈরি করতে। এ বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসনের কাছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সাহায্য চাই।

এদিকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে চুক্তিপত্রে দেওয়া সময় মত যেদিন ওই রোগীর পরিজনেরা হাসপাতালে যায়, সেদিন হাসপাতালের ওই চার নরপিশাচ মালিকপক্ষ পরিষ্কার রোগীর পরিবারকে জানিয়ে দেয় যে তারা কোনমতে, কোনরকম আর্থিক সাহায্য দিতে পারবে না ক্ষতিপূরণ বাবদ। বিনা মেঘে বজ্রপাতের মত রোগী ও তার পরিজনদের কাছে এলো হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ওই মনোভাবের কথা। অবাক করার বিষয় হলো স্থানীয় রাজনৈতিক দলের নেতৃত্ব, পুলিশ প্রশাসন, সংবাদ কর্মী, সমাজসেবী সংগঠন তথা বিভিন্ন প্রতিবাদী সুশীল সমাজের বুদ্ধিজীবীরাও কেমন যেন নিশ্চুপ হয়ে গিয়েছেন। এই আশ্চর্য জনক ভাবে নিশ্চুপ হয়ে যাওয়ার পেছনে মধু-অনুপ-পঙ্কজ ও শতদলের প্রসাদ পৌঁছে কি তাদের ও কাছে?

শিল্পাঞ্চল দুর্গাপুর জুড়ে এখন একটাই কথা আনাচে কানাচে, চায়ের দোকানে আলোচনা, কে এই মধু-অনুপ-পঙ্কজ আর শতদল ? কি বা তাদের এমন ক্ষমতা যে একটা তরতাজা ১১ বছরের শিশুকে খুন করার পর, খুন করার কথা লিখিত পড়িত করার পরও বেমালুম ৩৬০ ডিগ্রি ঘুরে দাঁড়াই কার বলে ? কার বলে এরা বলিয়ান ? কি এদের অতীত ইতিহাস ?

একটি বিশ্বস্ত সূত্র মারফত জানা গেছে, ওই হসপিটালের অন্যতম এক কর্ণধার মধু স্থানীয় ব্যবসায়ী। দুর্গাপুরের একটি নামকরা বাজার এলাকার বাসিন্দা ছিল। এখন অবশ্য তিনি নাকি অন্যত্র বসবাস করছেন । ব্যবসায়ী পরিবারে জন্ম হলেও সোজা পথে মধু রোজগার করতে শেখেনি বলে তার প্রতিবেশীদের অভিযোগ। কয়েক দশক আগে অবধি, লাগাতার কয়লা চুরি সাথে যুক্ত থেকে দেদার রোজকার করেছে এই মধু । দুর্গাপুর ও আসানসোল আদালতে খোঁজ নিলে জানা যাবে এই মধুর নামে ডজন খানেকেরও বেশি কয়লা চুরি অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু এত সবের পরও দুর্গাপুরের প্রাণকেন্দ্র সিটি সেন্টার এর অভিজাত এলাকায় একটি বিশাল অট্টালিকা তৈরি করে নামি কোম্পানির শোরুম করতে ভাড়া দিয়ে প্রায় মাসে লক্ষাধিক টাকা রোজগার করছে সে। শুধু তাই নয়, অভিযোগ নিজের বাড়ির সামনে জায়গা সহ পাশের বাড়ির জায়গা দখল করে গায়ে জোরে আসানসোল দুর্গাপুর উন্নয়ন পর্ষদকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে বহাল তবিয়দে রয়েছে এই প্রাক্তন কয়লা ব্যবসায়ী। কয়লার চোরাচালান থেকে এতটাই রোজকার হয়েছে যে সে এখন স্বাস্থ্য পরিসেবার নামে হাসপাতাল তৈরি করে লুঠ চলছে শিল্পাঞ্চলে। তবে সে একা নয়, তার একাধিক অবৈধ ব্যবসার পেছনে রয়েছে তার পুরনো তিন সাগরেদ ও দুই স্লিপিং পার্টনার। তিন সাগরেদ সহ দুই স্লিপিং পার্টনারকে নিয়ে দুর্গাপুরে শুরু করে স্বাস্থ্য পরিসেবার নামে কসাইখানা।

মধুর দুই স্লিপিং পার্টনারের মধ্যে একজন দুর্গাপুরের প্রাণকেন্দ্র সিটি সেন্টারে একটি সরকারি অতিথি নিবাসে ভাড়া নিয়ে দেহ ব্যবসার আখড়া চালায়, আর তাকে ওই কাজে সহযোগিতা ও সরবরাহ করে থাকে দুর্গাপুরের কুখ্যাত এক মক্ষ্মী রানী যিনি দুর্গাপুরের সুন্দরীদের বিশ্বের দরবারে বিক্রি করার লক্ষে প্রতিবছরই শহরে সুন্দরী প্রতিযোগিতার আয়োজন করে থাকেন। কল্পনা করা নামক ওই মাঝবয়সি মক্ষি রানী শিল্পাঞ্চল দুর্গাপুরের প্রাণকেন্দ্র সিটি সেন্টারে একটি মহিলাদের বিউটি পার্লার চালিয়ে দুর্গাপুর আসানসোল শিল্পাঞ্চলের সহ রাজ্য ও ভিন রাজ্যের একাধিক যুবতী মহিলাদের সরাসরি দেহ ব্যবসার কাজে নামিয়েছে বলে অভিযোগ। এহেন যুগলবন্দী ও মধুর অবৈধ উপায়ে রোজগার করা কোটি টাকার জোরে এখন শিল্পাঞ্চলের বুকে স্পেশালিটি হসপিটাল তৈরি করে রোগীদের কসাইখানা চালাচ্ছে মধু বলে অভিযোগ।

সবকিছু জেনে শুনেও স্থানীয় প্রশাসন, স্বাস্থ্য দপ্তর ও সর্বোপরি শাসক তৃণমূল কংগ্রেসের স্থানীয় নেতারাও এ বিষয়ে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করছেন না বলে অভিযোগ। তাদের বাড়িতে কি ঐরকম কোন শিশু নেই যার মুখটা মনে পড়ে না তাদের ? এর পিছনের কারণ এখনো অজানা শিল্পাঞ্চল বাসিন্দাদের। কিন্তু কেন? সবাই চুপ করে বসে থাকলেও চ্যানেল এই বাংলায় ওই ১১ বছর বয়সী বালকের মৃত্যুর যথাযথ তদন্ত ও ওই হাসপাতাল সম্মন্দিত তথ্য জোগাড় চালিয়ে যাবে ও যথা সময়ে তা জনসমক্ষে তুলে ধরা হবে।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments