মনোজ সিংহ, দুর্গাপুর:- শিল্পাঞ্চল দুর্গাপুর ডাক্তার বিধান চন্দ্র রায়ের মানস কন্যা রূপে সারা বিশ্বের পরিচিত এক নাম। বেশ কয়েক দশক আগে দুর্গাপুর ইস্পাত নগরীর বি-জোন এলাকার প্রায় মধ্যস্থলে জন্ম নেয় একটি ছোট্ট বাজার ‘চন্ডীদাস বাজার’। মাত্র কয়েক দশকের মধ্যেই চন্ডীদাস বাজার এক বৃহৎ বাজার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। স্টিল অথরিটি অফ ইন্ডিয়া লিমিটেডের অধীনস্থ রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানা কর্তৃপক্ষের জায়গার উপরে এই চন্ডীদাস বাজার জন্ম নেয়। কয়েক দশক আগে রাস্তার দু’ধারে বসে থাকা হকার ও ব্যবসায়ীদের জন্য পাকাপোক্ত পুনর্বাসন দিয়ে দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানা কর্তৃপক্ষ বেশ কয়েকশো নতুন স্টল তৈরি করে দেয়। বৈদ্যুতিক আলো জল সহ সব রকমের পরিষেবা দেওয়া হয় ওই উক্ত স্টল গুলিতে। কিন্তু সম্পূর্ণ বাজারের সকল দোকানদারদের জন্য দুর্গাপুর ইস্পাত কর্তৃপক্ষ জায়গা দিতে রাজি না হওয়ার ফলে দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে দুর্গাপুরের ইস্পাত নগরীর মধ্যস্থলে অবস্থিত চন্ডীদাস বাজার রয়ে যায় গভীর অন্ধকার ও অনিশ্চয়তায়। দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার কর্তৃপক্ষের জায়গা একপ্রকার দখল করেই চলে আসছে দশকের পর দশক এই চন্ডীদাস বাজার। কয়েক দশক আগেই চন্ডীদাস বাজারের প্রায় সকল দোকানদাররা মিলে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সমবায় দপ্তরে একটি নতুন সংগঠনের জন্ম দেন,যার পোশাকি নাম হয় ডাক্তার বিধান চন্দ্র রায় কো-অপারেটিভ সার্ভিস সোসাইটি লিমিটেড।

মাত্র এক দশক আগেই ডাক্তার বিধান চন্দ্র রায় কো-অপারেটিভ সার্ভিস সোসাইটি লিমিটেডের সদস্যদের উদ্যোগে দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার কর্তৃপক্ষের সাথে দফাই দফাই আন্দোলন ও আলোচনার মাধ্যমে চন্ডীদাস বাজার সংলগ্ন একটি বড় খেলার মাঠে পাকাপোক্ত বাজার হিসেবে তৈরি করার জন্য ৯৯ সালের জন্য লিজে দেওয়া হয় ইস্পাত কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে। কিন্তু দুর্গাপুর ইস্পাত কর্তৃপক্ষ ওই বাজারকে কোনরকম বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে রাজি হননি। সম্ভবতই দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে চন্ডীদাস বাজার প্রায় ৫০ টি অস্থায়ী জেনারেটর এর মাধ্যমে বেচাকেনা চলে আসছে। শিল্পাঞ্চলের বহু মানুষ এও অভিযোগ করেন যে দুর্গাপুর ইস্পাত কর্তৃপক্ষের বিদ্যুৎ ‘চুরি’ করেই নাকি এই বাজার চলেছে কয়েক দশক ধরে। বহুবার ইস্পাত কর্তৃপক্ষের টাউন মেনটেনেন্সের ইলেকট্রিক্যাল বিভাগের আধিকারিকরা অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ কেটে দিয়ে গিয়েছেন বারংবার এই চন্ডীদাস বাজারে। চন্ডীদাস বাজারের ব্যবসায়ীদের দুটি গোষ্ঠীর মধ্যে মতবিরোধ থাকার ফলে দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার কাছ থেকে নেওয়া জমিতে পাকাপোক্ত দোকানঘর তৈরি হয়ে পড়ে থাকলেও বিদ্যুৎ সংযোগের অভাবে অনেকেই দোকান শুরু করতে পারেননি।

বহু আন্দোলন আলাপ-আলোচনা ও চিঠি-অভিযোগ জানানোর পর ডাক্তার বিধান চন্দ্র রায় কো-অপারেটিভ সার্ভিস সোসাইটি লিমিটেডের কর্ণধাররা নতুন কমিটি করে চন্ডীদাস বাজারের জন্য পাকাপোক্ত ভাবে রাজ্যে সরকারের বিদ্যুৎ সংযোগের ব্যবস্থা করেন। একটি সূত্র মারফত জানা গেছে দুর্গাপুরের বিশিষ্ট তৃণমূল নেতা রাজিব ঘোষের সহযোগিতায় স্থানীয় প্রাক্তন কাউন্সিলর অমিতাভ বন্দোপাধ্যায় ও রাজ্যে সরকারের গ্রাম উন্নয়ন ও সমবায় দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী তথা দুর্গাপুর পূর্ব কেন্দ্রের তৃণমূল কংগ্রেস বিধায়ক প্রদীপ মজুমদারের অক্লান্ত পরিশ্রম ও ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় চন্ডীদাস বাজারে দুটি ট্রান্সফরমারের শুভ উদ্বোধন হলো। গত রবিবার চন্ডীদাস বাজারে দুটি ট্রান্সফরমারের উদ্বোধন করলেন পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের গ্রাম উন্নয়ন ও সমবায় দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার। এলাকার প্রাক্তন পৌরপিতা অমিতাভ বন্দ্যোপাধ্যায়,পশ্চিম বর্ধমান তৃণমূল কংগ্রেস মুখপাত্র উত্তম মুখার্জি, প্রভাত চ্যাটার্জি সহ অন্যান্য ব্যক্তিবর্গেরা উপস্থিত ছিলেন। প্রায় ৮০০ থেকে ৮৫০ ব্যবসাদার এই চন্ডীদাস বাজারে তাদের দীর্ঘদিন ধরে জীবন জীবিকা নির্বাহ করে আসছে, ইলেকট্রিকের লাইন পাওয়াতে তাদের আগামী দিনে ব্যবসা-বাণিজ্য করতে আরও সুবিধা হবে বলে জানান বাজার কমিটির সেক্রেটারি মানিক দাস। তিনি আরো বলেন, “আমরা খুব খুশি হয়েছি রাজ্য সরকারের বিদ্যুৎ দপ্তরের তরফ থেকে আমাদের এই বিদ্যুৎ বন্টন ব্যবস্থা করা হয়েছে, ফলে আমরা সকল ব্যবসায়ীরা যেমন খুশি তেমন গ্রাহকদেরকেও আরো উন্নত পরিষেবা দিতে পারব।”

চন্ডীদাস বাজারের আরেক ব্যবসায়ী জয় গোস্বামি এদিন জানান, “এতদিন আমরা শুধু জেনারেটরের ভরসাতে দোকানদারি করে এসেছি। এবার আমাদের সকল সমস্যার সমাধান হতে চলেছে। আসন্ন গ্রীষ্মকালে আর আমাদের গ্রাহকদের গরমে হাঁসফাঁস করতে হবে না। আমাদের বাজারে আগত সকল ক্রেতা বন্ধুদের আমরা উপযুক্ত সম্মান ও পরিষেবা দিতে পারব বলে আশাবাদী। আমাদের বাজারের সকল দোকানদারদের পক্ষ থেকে মাননীয় মন্ত্রী, প্রাক্তন কাউন্সিলর ও তৃণমূল কংগ্রেসের বিশিষ্ট নেতৃবর্গকে আমরা কুর্নিশ জানাই আমাদের বহু আকাঙ্ক্ষিত বিদ্যুৎ সংযোগ পেতে সাহায্য করার জন্য।
শিল্পাঞ্চলের ইস্পাত নগরীর বি-জোন এলাকার সকল সাধারণ ক্রেতারা চন্ডীদাস বাজারে নতুন বিদ্যুৎ সংযোগ আসার ফলে আনন্দিত।






