সংবাদদাতা, দুর্গাপুর : জঙ্গলমহলের তিন জেলা পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, ঝাড়গ্রাম সফরে দুর্গাপুরে এসে পৌঁছলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মূলত লোকসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে এই তিন জেলার জন্য একাধিক প্রকল্পের উদ্বোধন ও শিলান্যাস করতে চলেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার বিকেলে অন্ডালে পৌঁছান মুখ্যমন্ত্রী। এদিন বিকেলে কলকাতা থেকে অন্ডালে কাজি নজরুল ইসলাম বিমানবন্দরে নামেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাকে সেখানে স্বাগত জানাতে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের দুই মন্ত্রী মলয় ঘটক ও প্রদীপ মজুমদার ও তৃনমুল কংগ্রেসের জেলা সভাপতি বিধায়ক নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী।
রাতে দুর্গাপুরেই থাকবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার দুর্গাপুর থেকে হেলিকপ্টারে করে পুরুলিয়া পৌঁছবেন মুখ্যমন্ত্রী। পুরুলিয়া জেলায় প্রায় এক হাজার কোটি টাকার প্রকল্পের উদ্বোধন ও শিলান্যাস করবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেই জানা গিয়েছে। প্রসঙ্গত, জঙ্গলমহলের এই তিন জেলার চারটি লোকসভা আসনই বর্তমানে বিজেপির দখলে রয়েছে। তাই এবারের লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাখির চোখ যে এই চারটি আসন তাতে কোনও সন্দেহ নেই।
এদিন অন্ডালের কাজি নজরুল ইসলাম বিমানবন্দর থেকে সড়ক পথে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দুর্গাপুরের সার্কিট হাউসে পৌঁছে যান। সেখানেই জেলা তৃণমূলের নেতৃত্বদের নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে বসেন। সূত্রের খবর, লোকসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে জেলার সংগঠনকে মজবুত করতেই রাজ্যের আইন বিচার বিভাগীয় ও শ্রম মন্ত্রী মলয় ঘটক, পঞ্চায়েত গ্রামোন্নয়ন সমবায় মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার, জেলা তৃণমূলের সভাপতি নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, জামুরিয়ার বিধায়ক হরেরাম সিং, রাজ্য সম্পাদক ভি শিবদাসন দাশু, তৃণমূল নেতা বিশ্বনাথ পাড়িয়াল ও জেলা তৃণমূলের নেতৃত্বদের নিয়েই বসেন বৈঠকে। গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের রেশ কাটাতেই এই বৈঠক বলেও সূত্রের খবর। লোকসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে সংগঠনকে মজবুত করার লক্ষ্যেই এই বৈঠক বলেও সূত্রের খবর।
একটি বিশ্বস্ত সূত্র মারফত জানা গেছে, এদিনের বৈঠকে আগামী লোকসভা নির্বাচনে কোন নেতার কোন এলাকায় দায়িত্বে থাকবেন তা ঠিক করে দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন পশ্চিম বর্ধমান জেলার দুটি লোকসভা আসনে কে কোনটির দায়িত্বে থাকবেন তা মূলত ঠিক করে দেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আসানসোল দক্ষিণ কেন্দ্রের সমস্ত দায়-দায়িত্ব দেন ভি শিবদাসন দাশুকে তাকে কাজের সহযোগিতা করার জন্য মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার, বিধায়ক তাপস ব্যানার্জি ও জেলা পরিষদের সভাধিপতি বিশ্বনাথ বাউরিকে সহযোগিতা করতে বলেন মুখ্যমন্ত্রী। আসানসোল উত্তর কেন্দ্রের মূল দায়িত্বে থাকবেন মন্ত্রী মলয় ঘটক। ওই কেন্দ্রে মলয় ঘটককে সহযোগিতা করার জন্য জেলার অন্যান্য নেতৃত্বকে আদেশ দিয়েছেন দলনেত্রী বলে সূত্র মারফত জানা গেছে। রানীগঞ্জ ও জামুরিয়া বিধানসভা কেন্দ্রের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বিধায়ক হরেরাম সিং ও বিধায়ক তাপস বন্দ্যোপাধ্যায় কে। বারাবনি বিধানসভা কেন্দ্রের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বিধান উপাধ্যায় কে। কুলটি বিধানসভা কেন্দ্র থেকে যাতে তৃণমূল কংগ্রেস ভালো ফলাফল করতে পারে লোকসভা ভোটে তার জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়, নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, অভিজিৎ ঘটক, হরেরাম সিং ও বিধান উপাধ্যায়কে। দুর্গাপুর পূর্ব কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকবেন বিধায়ক তথা মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার। অন্যদিকে দুর্গাপুর পশ্চিম কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকবেন বিশ্বনাথ পাড়িয়াল।
এদিন মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্ট ভাষায় দলীয় নেতৃত্বকে জানিয়ে দেন যে, কোনরকম গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব্য ছাড়া সকলের সাথে সু সম্পর্ক রেখে দল যাতে লোকসভা ভোটে ভাল ফলাফল করতে পারে সেদিকে সবাইকে সতর্ক দৃষ্টি ও চেষ্টা করতে হবে। অন্যদিকে এদিন মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী দলের জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের কয়েকজন নেতা-নেত্রী বিজেপির সাথে সেটিং করে চলছেন বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এমন কোন ঘটনার কথা যদি দলীয় নেতৃত্বের কাছে অভিযোগ আসে বা জানা যায় তাহলে দল তার বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেবে বলে এদিন মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্ট জানিয়ে দেন জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বোচ্চ নেতৃত্বকে। জেলার রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন আজকে মুখ্যমন্ত্রীর এই বৈঠকের পর পশ্চিম বর্ধমান জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সকল নেতা নেত্রী একযোগে আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের কাজে কঠোর ভাবে মনোনিবেশ করবেন বলে আশা প্রকাশ করেছেন। মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠককে ঘিরে ত্রিস্তরীয় নিরাপত্তায় মুড়ে ফেলা হয়েছে গোটা সিটি সেন্টার।